ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

জীবন বদলে কম্পিউটার: রাসেল

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২৬, জানুয়ারি ২৬, ২০১৩
জীবন বদলে কম্পিউটার: রাসেল

রাসেল আহমেদ। এক সময় কম্পিউটারের দোকানে টাইপের কাজ করতেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটারে কাজ করতে করতেই আবিষ্কার করেন এ যন্ত্রে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। মাসে মাত্র ১০০ টাকা ‍আয় হতো। সে টাকা যত্ন করেই জমিয়ে রাখতেন রাসেল। উদ্দেশ্য একটাই। টাকা জমিয়ে একটি কম্পিউটার কেনা।

অবশেষে এল এ শুভক্ষণ। ২০০৭ সালের ঘটনা। স্বপ্নের কম্পিউটার কিনলেন মাত্র ১০ হাজার টাকায়। হোক না একটু পুরনো। তারপরও নিজের হাতের মুঠোয় যেন স্বপ্নের ছোঁয়া পেলেন রাসেল।

কিন্তু কম্পিউটারে কি করতেন রাসেল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিজে নিজেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে ওয়েব ডিজাইনের বিষয়টি আমি জানতাম। নিজের আগ্রহ থেকেই ইন্টারনেটে গিয়ে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখতাম। সেগুলো পড়ে ওয়েব ডিজাইনের কাজের চর্চা করতাম।

রাসেল ২০১০ সালের দিকে খুলনায় যান প্রশিক্ষণে। সেখানে তার বন্ধুরা ওয়েব ডিজাইনের কাজ করা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। সবাই তাকে অনলাইনে কাজ করার কথা বলেন। কিন্তু রাসেল তো বোঝে না। অনলাইনে কাজ করে টাকা উপার্জনের পদ্ধতিও তার অজানা। অন্যদিকে তার বন্ধুরাও তাকে বলল, আমরা তো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) করে টাকা উপার্জন করছি। তুমি চাইলে আমাদের সঙ্গেই কাজ করতে পারো।

এ প্রসঙ্গে রাসেল জানান, বন্ধুরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। কিভাবে ওডেস্কে বসে কাজ আদায় করে আনতে হয়, এর সবই আমাকে শেখায়। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

কি ধরনের কাজ ওডেস্কে বিট করেন রাসেল? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মূলত ওয়েব ডিজাইনের কাজই করি। কিন্তু তারপরও প্লাগইনের কাজ করে দেই। সঙ্গে তো বেসিক প্রোগ্রামিংয়ের কাজ করেই যাচ্ছি। তবে বিশেষ দিক হলো আমি কখনও কোনো কাজকে না বলিনি। যেই কাজই হোক। আমি রাজি হয়ে যাই। তারপর একটু সময় নিয়ে অনলাইনে টিউটোরিয়াল নিয়ে কাজটা করে ফেলি।

এ ছাড়াও রাসেল ভবিষ্যতের সময় মোবাইলনির্ভর বলে উল্লেখ করেন। এখন মোবাইল অ্যাপ নিয়ে কাজ করছেন। তবে এখনও শেখার পথে আছেন। এখন অ্যানড্রইডে অনেক কাজই পাবেন।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ফারাকপুর গ্রামের ড্রিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল। পড়াশোনার পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছেন। কথা বলতে বলতে চলে যাই অন্য প্রসঙ্গে। প্রশ্ন করি গ্রামের অন্য ছেলেদের জন্য কি করছেন তিনি?

রাসেল বলেন, এ পর্যন্ত ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদের মধ্যে থেকেই ১৬ জন এখন আমার সঙ্গেই কাজ করছে। আমি ওডেস্কে কাজ নেই। তারপর আমাদের একটি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার আছে তা দিয়ে আমি কাজ ভাগ করে দেই। তারা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই জেনে ‍যায় কার কি কাজ। তারপর সময় মতো সবার কাজ আমাকে পাঠিয়ে দেয়। আমি ফাইনাল দেখে ক্লায়েন্টকে কাজ বুঝিয়ে দেই।

রাসেলের সঙ্গে যারা আছেন তারা যে শুধু তারই কাজ করেন তা কিন্তু নয়। তারাও ব্যক্তিগতভাবে ওডেস্কে কাজ করছেন। কয়েকজন তো মাসে ৭০ হাজার টাকাও উপার্জন করছে।

এটি অবশ্য রাসেলেরও সফলতা। তার কাছে কাজ শিখে গ্রামে বসেই টাকা উপার্জনে সক্ষম হচ্ছে তরুণেরা। রাসেলের অন্য আরেকটি উদ্যোগও আছে। আর আর ফাউন্ডেশন নামে একটি উদ্যোগও নিয়েছেন রাসেল। এ উদ্যোগের মাধ্যমে রাসেলের দলের সব সদস্যের আয় থেকে ৫ ভাগ অর্থ দিয়ে একটি বিশেষ তহবিল করেছেন। এ তহবিলের অর্থ নিয়ে অনেকগুলো কাজের কথাও রাসেল বাংলানিউজকে বলেন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতি সপ্তাহের দুদিন নির্দিষ্ট সময়ে শিশুদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া। এ ছাড়াও ছিন্নমূল শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে এ ফাউন্ডেশন। অভাবী যুবক, যাদের কোনোভাবেই তথ্যপ্রযুক্তির সংস্পর্শে আসার সম্ভব হয় না। কিন্তু মেধা আছে। তাদের খুঁজে বের করা এবং তাদের কর্মক্ষম করা। তাদের খুজে বের করবে আরআর ফাউন্ডেশন। সব যুবককে গড়ে তোলা হবে আরআর ফাউন্ডেশনের এক একজন উদ্যোক্তা হিসেবে।

রাসেল এ প্রসঙ্গে বলেন, সবাই আসলে ঢাকামূখী। এমনকি বিদেশেও চলে যায়। আমি নিজের দেশে থাকতে চাই। ঢাকা নয়, নিজের গ্রামেই থাকতে চাই। গ্রামে বসেই অনেক কিছু করা সম্ভব। আমি শুধু দেশ নয়, এ কথা বিদেশেও ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রযুক্তি যেমন আমাকে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছ। তেমন লক্ষ-কোটি তরুণকেও স্বপ্ন দেখানো সম্ভব। যে কম্পিউটার আমাকে ১০০ টাকা দিয়ে চাকরি দিয়েছে। সে কম্পিউটারই এখন আমাকে লাখ টাকা উপার্জনক্ষম করে তুলেছে। এ যন্ত্রটি তো একটি ম্যাজিক। এর মাধ্যমে সবই অর্জন করা সম্ভব। যে কেউ এ ম্যাজিক মেশিন দিয়ে নিজের আর সমাজের জীবন বদলে দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময় ১৯১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।