ঢাকা: কুকুর-বিড়ালের স্বভাবজাত ‘চির বৈরী’ পরিচয়ের বদনাম জয় করেছে ওরা। এদের একজন নারী কুকুর কিরা, অপরজন পুরুষ বিড়াল মিকো।
বিরল ঘটনার জন্ম দেওয়া কিরা-মিকো জুটি থাকে রাজধানীর গুলশানে, জোবায়ের ও ইফাত দম্পতির আশ্রয়ে। পাঁচ মাস বয়সের কিরা ও তার সমবয়সী মিকো’র ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বয়সও মাস পাঁচেক।

আর সেখানে দেখা মেলে এই দম্পতির। জানা যায় কিরা ও মিকোর বন্ধু হয়ে ওঠার কাহিনী।
যেভাবে বন্ধু কিরা-মিকো
মাস পাঁচেক আগে জোবায়ের-ইফাত দম্পতি যান পান্থপথের ইউটিসি ভবনের সিটি ব্যাংকে। লিফট দিয়ে উঠার সময় সবাই বলাবলি করছিল বিড়াল ছানাগুলোর মা অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে। এই কথা শোনার পর ইফাত ব্যাংকের কাজ সেরে নিচে নেমে ৪ বিড়াল ছানার একটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। বিড়াল ছানাটির নাম দেন ‘মিকো’ । মিকো প্রথম দু’দিন ভালোভাবে না খাওয়ার কারণে পশুর ডাক্তার দেখিয়ে টিকাও দেন। এরপর থেকে ভালোভাবে খাওয়া শুরু করে মিকো।
এরপর পারিবারিক সিদ্ধান্তে মিকোর বন্ধু খুঁজতেই কাঁটাবন থেকে কেনা হয় কুকুর ছানা। জার্মানির হাইব্রিড এই কুকুরছানার নাম তারা দেন ‘কিরা’।
প্রথমে কিরা-মিকো একে অপরকে মেনে নিতে না চাইলেও তারা এখন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে খেলে, একসঙ্গে খায়, ঘুমায়ও একসঙ্গে। একে অপরের শরীরে পা তুলে ঘুমানোকে যদি কুকুর-বিড়ালের জড়াজড়ি বলা যায়, তাহলে জড়াজড়ি করেই ঘুমায় ওরা।
ইফাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “পশু-পাখির উপর তীব্র ভালোবাসা থেকেই তার শখ হয় কুকুর-বিড়াল পোষার। আর সেই কারণে তিনি কুকুর-বিড়াল পোষেন। ”
তিনি বলেন, “বিড়াল ছানাগুলোর মা মারা যাওয়ার খবর আমাকে মর্মাহত করে। সে কারণে আমি একটি ছানা নিয়ে আসি। প্রথম দু’দিন ভালোভাবে না খাওয়াতে আমি খুব কষ্টও পাই। পরে ডাক্তার দেখানোর পর খাওয়ার আর সমস্যা হয়নি। ”
তিনি বলেন,“ বিড়াল ছানা আনার পর আমার শখ হয়- বিড়াল যখন এনেছি, এবার একটি কুকুর আনি। পরবর্তী সময়ে কাঁটাবন থেকে আমি ১২ হাজার টাকায় কুকুরছানা নিয়ে আসি। তখন অনেকেই বলেছিলো-কুকুর ও বিড়াল এক সঙ্গে পোষা যাবে না। তারা কখনো বন্ধু হবে না। সব সময় মারামারি করবে। কিন্তু দুই মাস পরই এরা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়। ”
ইফাত বলেন, “নানা রকম খাবার দেওয়া হয় এদের। এরা সব কিছুই খায়। এখন এরা এক সঙ্গে খায়, ঘুমায়, খেলাও করে। কুকুর-বিড়াল যে একে অপরের বন্ধু হতে পারে এটা কিরা-মিকো তার অনন্য নজির। ”
তিনি বলেন, “এখন এরা খুব ভালো আছে। কুকুর-বিড়ালের এমন সম্পর্কের কারণে অনেক আত্মীয়-স্বজন দেখতেও আসে তাদের। ”
জোবায়ের আহম্মেদ বলেন, “পশু-পাখিও যে মানুষের অনেক বড় বন্ধু হতে পারে পশু-পাখিকে না ভালোবাসলে সেটা বোঝা যাবে না। ”
তিনি বলেন, “পশু পাখিকে ভালোবাসতে হবে, এদের যত্ন নিতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য পশু পাখির যে বিরাট ভূমিকা রয়েছে তা মনে রাখতে হবে। পশু পাখি দেখলে তার উপর আক্রমণ করে মেরে ফেলা যাবে না। ”
পশু-পাখিকেও যত্নে রাখার পরামর্শ দেন এই পশুপ্রেমী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৩
জেডএম/