ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

পুরান ঢাকার হোটেল

মধ্যরাতেও শত মানুষের ভিড়

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪:৫৬, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৩
মধ্যরাতেও শত মানুষের ভিড়

ঢাকা: ইতিহাস-ঐতিহ্যের সুতিকাগার পুরান ঢাকার গোড়াপত্তনের কয়েক শতাব্দিকাল অতিবাহিত হয়েছে। বহুযুগ পার করেও পুরান ঢাকা তার স্বকীয়তা, আদি ও অকৃত্রিম রূপকে ধরে রাখতে একেবারেই অকৃপণ-উদারহস্ত!

পুরান ঢাকাকে ঘিরে যতোখানি সুখ্যাতি আর আগ্রহ তার অনেকখানিই এখানকার জিভে জল আনা মুখরোচক ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের জন্য।

সময়ের আবর্তে পুরান ঢাকার অনেক কিছুই ক্ষয়প্রাপ্ত-ম্লান হওয়ার অবকাশ পেলেও যুগ যুগ ধরে  ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো টিকে রয়েছে ভোজনরসিকদের রসনা তৃপ্ত করতে।

এখানকার খাবারগুলো এখনও কতটা জনপ্রিয় মানুষের কাছে তার নমুনা দেখা গেছে শনিবার মধ্যরাতে পুরান ঢাকার চানখারপুল আর নাজিরাবাজারের খাবারের হোটেলগুলোর ব্যস্ততা দেখে।
 
মধ্যম সাইজের একেকটি হোটেলের ২৫/৩০ জন কর্মচারী অবিশ্রান্ত ভাবে খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহে নিয়োজিত। ক্যাশে হোটেল ম্যানেজারের সামনে খাবারের বিল নিতে রীতিমত লাইন লেগে থাকতে দেখা গেলো। এতো ভিড় ঠেলেও খাবার খেতে ভোজন রসিকদের সামান্যও ক্লান্তি নেই!

চানখারপুলের ক্যাফে রাজধানী হোটেলের নৈশকালীন ক্যাশিয়ার গোলাম রাসেল। বোরহান উদ্দিন কলেজের বিবিএসে অধ্যয়নরত রাসেল জানালেন এখানকার ভোজনযজ্ঞের নানা প্রসঙ্গ। প্রচণ্ড ব্যস্ততার ফাঁকেও সাংবাদিক পরিচয় জেনে একটি কাগজে লিখে তুলে ধরলেন তাদের বিশেষত্ব। সংবাদ মাধ্যমের স্লোগানের মতো করেই লিখে দেখালেন ২৪ ঘণ্টা ৭দিন, মানে এসব হোটেল খোলা থাকে পুরো সপ্তাহ জুড়েই, রাত-দিন।

রাসেল বাংলানিউজকে জানালেন, তাদের হোটেলের সবচে বিখ্যাত খাবার আইটেম গরুর মাংসের কালো ভুনা, প্লেট প্রতি ৬০ টাকা।   এছাড়াও রয়েছে-মুরগির ঝালফ্রাই ও কারি, ডাল খাসি ও গ্লাসি, ভূনা খিঁচুরি, মুরগির গ্রিল, শিক কাবাব, স্পেশাল কাবাব, রুই কালিয়া, শৈল মাছের ভুনা, শিং মাছের ঝোল, বাইলা মাছের তরকারি, সরষে ইলিশ, রূপচাঁদা ফ্রাই, টাকি ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা, শুটকি ভর্তা, আলু ও ডাল ভর্তা, বাটার নান ও স্পেশাল নান, মৌসুমি বিভিন্ন সবজির ভাজি-ভর্তা, টমেটো চাটনিসহ আরও কয়েক প্রকারের খাবার।

তিনি জানালেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, অন্যান্য পেশার মানুষ, পুরান ঢাকার বিভিন্ন ছোট-বড় কারখানার শ্রমিক-কারিগররাই এসব হোটেলের রাতের ক্রেতা।

প্রতি রাতে গড়ে এখানকার একেকটি হোটেলে কমপক্ষে ৩৫/৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়, জানালেন রাসেল।

চানখারপুলে নৈশকালীন খাবার হোটেলের সংখ্যা ৮/১০টি হলেও পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কাজী আলাউদ্দিন রোডে এ সংখ্যা কম করে হলেও ৩৫-৪০টি।

নাজিরাবাজারের কামাল হোটেলের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম জানান, হোটেলটিতে কম করে হলেও ২০/২৫ আইটেমের খাবার বিক্রি হয়, যার বেশির ভাগই পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ও রন্ধনশৈলীও স্বতন্ত্র।

তাইয়্যেব হোটেলের ম্যানেজার সাইয়েদুল জানালেন, এখানকার হোটেলের রাতের বেশির ভাগ ক্রেতাই স্থানীয় জুতা ফ্যাক্টরির কারিগর ও শ্রমিক। যারা স্বল্প ব্যয়ে এখানে তাদের খাবার খেতে পারেন।

পুরান ঢাকার ‘স্মার্ট বাংলা সু’ কারখানার শ্রমিক সোহরাব মিয়া জানান, ১৫টাকায় এখানে দুইটা রুটি ও সবজি খেতে পারি। খেয়েও তৃপ্তি পাই।

নাজিরীয়া হোটেলের ম্যানেজার হাজী আব্দুর রহিম জানান, নিন্ম আয়ের মানুষ এখানে বেশি পরিমানে খেলেও সৌখিন ও বিত্তবানরাও আসেন খেতে মাঝে মধ্যে বিরতি দিয়ে।

তিনি জানান, রাজধানীর অভিজাত গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমণ্ডি এলাকার অনেক নিয়মিত ক্রেতাও রয়েছে এসব হোটেলের, যারা রাতে গাড়ি করে এসে এখানে খাবার খেতে আসেন। তারা সাধারণত রুটির সঙ্গে গরুর মাংসের কালো ভুনা, নেহারি, খাসির পায়া, সুপ, খাসির মাথা দিয়ে মুগের ডাল ইত্যাদি খাবার খেতে চান।

যুগ যুগ ধরে এখানকার খাবার হোটেলগুলোতে সারারাত ধরে খাবার বিক্রির এ প্রচলন শুরু হলেও সময়ের বিবর্তনে তা এতোটুকুও মন্দা দেখা দেয়নি, জানালেন এখানকার হোটেল ব্যবসায়িরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৩
এআই / সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।