বাংলানিউজের স্বপ্নযাত্রা বিভাগে ২০১২ সালের ২১ মে চমক হাসানকে নিয়ে লেখা প্রকাশ হয়েছিল। চমকের গান ইউটিউবে শুনে মুগ্ধ হয়েই তার বিষয়ে আগ্রহী হই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রতিভাকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন হাজারো জ্ঞানপিপাসু মানুষের মাঝে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলানাতে পিএইচডি করছেন।
তাকে প্রশ্ন করেছিলাম তরুণ প্রজন্ম নিয়ে। উত্তরে বলেন, আমি অনেক আশাবাদী মানুষ। তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে বদলে দেবে- এটা আমি বলি না। আমি বলি তারা বাংলাদেশকে বদলে দিচ্ছে!! এই প্রক্রিয়াটা আসলে শুরু হয়ে গেছে!
এছাড়াও রাজনীতি নিয়ে চমকের বক্তব্য ছিল, রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের দল কারা এটা যেমন তরুণেরা জানে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া কতখানি জরুরী এটা যেমন তারা বোঝে, তারা এটাও জানে মুক্তিযুদ্ধ কোন একটা দলের একার সম্পত্তি না!
২.
‘বাংলার টম’ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় চরিত্র। জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কৌতুক করে টমকে দিয়ে বলানো হচ্ছে। মানুষ দেখে হাসছেন। মজা পাচ্ছেন।
এই হাস্যকর ‘বাংলা টকিং টম’ – এর উদ্যোক্তার সন্ধান শুরু করি। পেয়েও যাই। সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তিটা এখানেই। এ মানুষটিকে খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। মানুষটির নাম আরমান উল হক। মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা করছেন মালয়েশিয়াতে।
সংগীত বা মিউজিকের প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি সবাইকে টমের মাধ্যমে হাসিয়েই যাচ্ছেন আরমান। আরমানের সঙ্গে অনলাইনে কথা হয় তার মিউজিক ও টম চরিত্রটি প্রসঙ্গে। তার সাক্ষাৎকারটি বাংলানিউজে প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে ২৮ মে।
তরুণ প্রজন্ম নিয়ে আরমানের মন্তব্য ছিল, বাংলাদেশের তরুণরা এখন সংগীত বা মিউজিকের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
মজার বিষয় হলো, আমাদের প্রজন্মের কাছে অনেক সুযোগ। এবং এই সুযোগ আমরা গ্রহণ করছি। প্রতিযোগিতায় সবাই অংশ নিচ্ছি। তাই আগামী কয়েকবছরে দেখবেন মিউজিকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। এটি করে দেখাবে আমাদের প্রজন্মই।
আমি তো বলবো, সংগীতে খুব শীঘ্রই চমক দেখবেন। আমরা সবাই মিলেই সেটা করে দেখাবো।
৩.
এমন অসংখ্য তরুণের কথা উঠে এসেছে স্বপ্নযাত্রা বিভাগে। যারা নিজ উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের দেশকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব। এ দুটি গল্প দিয়েই বোঝা যায় দেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত সব তরুণরাই দেশ বদলাতে চায়। বিপ্লব করতে চায়। দেশের মানুষের সব প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায়। সেজন্য বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অন্যতম। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সবার উপরে।
এ বিষয়টি বুঝতে এখন আর ভাবতে হবে না। গবেষণারও প্রয়োজন নেই। সম্প্রতি কাদের মোল্লার রায়ের ঘটনায় যখন সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ছোট্ট উদ্যোগ পৌঁছে যায় শাহবাগ চত্বরে। সেখানে তা ছড়িয়ে গেল সারা দেশে।
প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়া সমস্ত দেয়াল ভেঙে দিতে পারে। এটি আবারও প্রতিষ্ঠিত হলো।
তরুণ প্রজন্মের স্লোগানে দুইদিন ধরে শাহবাগ চত্বর মুখর। এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি এ বিক্ষোভ। এ জাগরণকে অনেকেই তাহরির স্কয়ারের সঙ্গে তুলনা করছেন। কেউ বলছেন, এখান থেকেই রচিত হবে এক নতুন ইতিহাস।
বিক্ষোভের উদাহরণ দিয়েই বলি, আরমান উল হক একদিনের মাথায় গান লিখে, মিউজিক করে ফেসবুকে আপ করে দিলেন। তার জায়গা থেকে এটি তার বিক্ষোভ। তার গান কয়েকঘণ্টার মধ্যেই শেয়ার হয়ে গেছে ২৫০ এরও বেশি।
গানের লাইনগুলো তুলে দেওয়া যেতে পারে-
ভাঙে সব ভাঙে আমার অস্তিত্ব
ভেবেছো কি আমি থাকবো ঘরে বসে, সেই নিশ্চুপ প্রাণীর মত
ছিনিয়ে নেয়, ছিনিয়ে নেয় সব আমার, বলি- আমি নই তোমাদেরই ধ্বংসেরই প্রতীক্ষায়
আর কত আর কত রক্তরে বিনিময়ে..
দাও না বাচতে একটু আমাদের আমরাও তো মানুষ
হাতে রেখে হাত করো প্রতিবাদ
দেখছে তোমায় বিশ্ব...
চিৎকার করে জানিয়ে দাও তাদের
মরিনি এখনও...
প্রিয় ভাষাণী কাঁদবে কেন, জাহানারা ইমাম কাঁদবে কেন
ছিলাম আমরা দেশের জন্য
আমরা আছি এখনও...
গানের লিংক: https://www.facebook.com/photo.php?v=10151291486065698
৪.
শাহবাগ চত্বর মঙ্গলবার থেকেই দখলে রেখেছে তরুণ প্রজন্ম। কয়েকজন ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট মিলে ফেসবুকে এই বিক্ষোভের সূচনা করে।
আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ব হয়ে গেছে সারা দেশ। ২৪ ঘন্টার মধ্যে এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষের মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদের প্রধান কেন্দ্র।
ফেসবুক, ব্লগ এখন উত্তাল। স্ট্যাটাস, মন্তব্য এবং ব্লগের লেখায় জ্বলছে আগুন । যারা মঙ্গলবার শাহবাগ যায়নি তারাই ফেসবুকে হাজারো তরুণের জমায়েত দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি। তারাও ছুটে গেছে শাহবাগে। সেখানে স্লোগানের মুখর হয়ে উঠছে।
যে তরুণ সমাজকে নিয়ে সবাই আশা করছিল একদিন তারাই আন্দোলনে রাজপথে নামবে। অবশেষে তরুণেরা মাঠে নেমে প্রমাণ করে দিল শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নয়, প্রয়োজনে মাঠে নেমে প্রতিবাদও করতে জানে। দেশপ্রেমের উন্মাদনায়, ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে জানে।
শাহবাগ না গেলে বোঝা যাবে না এ আন্দোলনের গতি কতটা ক্ষিপ্র। তরুণদের অংশ সবচেয়ে বেশি হলেও সেখানে সব প্রজন্মের মানুষরাই স্লোগানে মুখর। তাদের সবার মুখে প্রতিবাদ, চোখে মুখে ক্ষোভ, হৃদয়ে স্বাধীনতার চেতনা।
যে চেতনার তাগিদে শাহবাগ হয়ে উঠছে ইতিহাস। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ছাড়া আর কোনো রায় কেউ প্রত্যাশা করে না। শুধু তাই নয়, এ রায় কার্যকর করতে হবে। এক দাবি এক স্লোগানে সব প্রজন্ম হাতে রেখে হাত করছে প্রতিবাদ।
এ জাগরণ থামবার নয়। এ প্রজন্মের উত্তাল ঢেউ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক রাজাকার। দেশ হোক কলংকমুক্ত। এ স্বাধীন দেশে আর কোনো রাজাকার যেন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে না পারে। এমনটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৩