ঢাকা: বলিউডি সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’র একটি দৃশ্যের কথা মনে আছে। ‘দিদি’ মোনা সিংয়ের প্রসব বেদনা শুরু হলে কারিনা কাপুর কম্পিউটারের ওয়েবক্যামে প্রসব করানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই ওয়েবক্যামের ‘অবাস্তব’ ঘটনাকে ছাড়িয়ে এবার সত্যি সত্যি সেলফোনের ফেসবুকে পাঠানো নির্দেশনা মতো বাস্তবে সুস্থ শিশু সন্তান প্রসব করেছেন আসাম রাজ্যের এক নারী!
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, আসামের কার্বি আংলং জেলার বাসিন্দা রামোন ইংতিপির প্রসব বেদনা শুরু হলে স্বামী হরসিং টেরন খ্রিস্টান মিশনারীর কর্মী মারুয়াই চাকচুয়াককে খবর দেন। চাকচুয়াক এসে দেখেন অবস্থা সংকটাপন্ন। উপায় না দেখে চাকচুয়াক মোবাইলে ফেসবুক খুলে বন্ধুদের কাছে সহযোগিতা চান যে, “এখনই এই মহিলার প্রসব করাতে হবে। কেউ সাহায্য করুন!” সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বারুইপুরের নার্স জয়সি রালতে ফেসবুকেই চাকচুয়াককে নির্দেশনা দিতে থাকেন। আর সেই নির্দেশনা মতোই সুস্থ সন্তানের প্রসব করেন ইংতিপি।
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মতো অবাক চিকিৎসকরাও। কেউ কেউ বলছেন, প্রযুক্তির যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানও এগিয়ে চলছে এভাবে। তবে, সংস্কারবাদীরা মনে করছেন মা ও নবজাতক বেঁচেছে গেছেন অদৃষ্টের জোরেই।
জয়সি রালতে নামে ওই নার্স বলছেন, “এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা কখনো ভাবিনি । প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পেরেছি সেটাই অনেক বাড়তি পাওনা। ”
মিজোরামের বাসিন্দা চাকচুয়াক সিনোড মিশন বোর্ডের পক্ষ থেকে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য কার্বি আংলং জেলার জাপোং গ্রামে বাস করছেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দা হরসিং চাকচুয়াককে খবর দেন যে তার স্ত্রী ইংতিপির প্রসব বেদনা উঠেছে। বাড়ির কাছে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই। তাঁদের একমাত্র ভরসা ছিলেন চাকচুয়াকই। কিন্তু প্রসব সংক্রান্ত কোনও জ্ঞানই তো চাকচুয়াকের নেই! তা হলে উপায়? দিগভ্রান্তের মতো বন্ধুদের ফোন করে উপায় বের করার চেষ্টা করছিলেন চাকচুয়াক। কিন্তু নেটওয়ার্কই দুঃসময়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল। চটপটে চাকচুয়াকের মাথায় আসে ফেসবুকের কথা। ফেসবুকের ‘চাংচেনেস’ পেজে বন্ধুদের কাছে সাহায্য চান তিনি।
জবাবে ফোন আসে চাকচুয়াকের কাছে। মিজোরামের কোলাসিব এলাকার বাসিন্দা জয়সি রালতে ডার্টল্যাঙ্গ নার্সিং স্কুল থেকে পাশ করে বারুইপুরে স্বামী রেভারেন্ড লালরোপুইয়া পাচাওয়ের বাড়িতে থাকেন। দুই সন্তানের জননী ও নার্স জয়সি বুঝতে পারলেন রামোন ও চাকচুয়াকের অবস্থা। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যা করায় ফেসবুকেই মেসেজের মাধ্যমে নির্দেশনা পাঠাতে থাকেন চাকচুয়াকের উদ্দেশে। জয়সির নির্দেশনা মতো শিশুটিকে নিখুঁত ভাবে প্রসব করান চাকচুয়াক।
জয়সি ও চাকচুয়াকের এই দুঃসাহসিক কাজের প্রশংসা করে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রযুক্তির এই ব্যবহার অবিশ্বাস্য এবং অকল্পনীয়। প্রাযুক্তিক চিকিৎসা বলতে যা বোঝায় এই ঘটনা তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিল।
তবে অনেকে এও বলছেন, মা ও সন্তান সুস্থ রয়েছে বলে কেউ ভিন্ন কথা ভাবছে না। যদি ফলাফল ভিন্ন হতো তবে সেই দায় কে নিত?
বাংলাদেশ সময় : ১৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৩
সম্পাদনা : হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com