ঢাকা: বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর অবিশ্বাস্য সাফল্য আমাদের মোহিত করে তুলেছে। যান্ত্রিক সব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে মানুষের কায়িক শ্রমকে কমিয়ে এনেছে।
এবার এর সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি বিষয়। যে প্রত্যঙ্গটির কারণে মানুষ নামক প্রাণীটি মানুষ-সেই মস্তিষ্ক তৈরিতে হাত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউরোপের বিজ্ঞানীরা এই অসম্ভব বিষয়টি সম্ভব করার উদ্যোগ করেছেন। গত বছরের শেষ দিকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল একটি প্রশ্ন করেছিলেন ‘মানব প্রযুক্তিতে কোন উন্নয়নটি প্রজাতি হিসেবে আমাদের জন্য সামগ্রিকভাবে নতুন, বিলুপ্তির পর্যায়ের হুমকিস্বরূপ?’
দার্শনিক হু প্রাইস, জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টিন রিস ও স্কাইপির প্রতিষ্ঠাতা জান তাল্লিন হলেন ওই দলের সদস্য। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তারা গড়ে তুলেছেন ‘দ্য ক্যামব্রিজ প্রজেক্ট ফর ইগজিটেনশিয়াল রিস্ক’ নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
তাদের প্রশ্নের উত্তর পেতে মানুষ সৃষ্ট রহস্য উন্মোচক বা মহাপ্রলয় সমান দৃশ্যে বা ঘটনাগুলোর একটি ছোট তালিকা করেছেন। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, জৈবপ্রযু্ক্তি এবং পরমাণু যুদ্ধ। কিন্তু তাদের চূড়ান্ত তালিকায় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা কল্পনাকে বুঝতে পারে।
‘যদি কম্পিউটার প্রোগ্রাম কম্পিউটার তৈরি করতে পারে বা কম্পিউটার প্রোগাম তৈরিতে মানুষের সক্ষমতাকে ছাপিয়ে যায় তাহলে কেমন হবে?’- প্রশ্ন প্রাইস ও তাল্লিনের।
তার বলেন, “এমনকি আরও বোধশক্তিসম্পন্ন যন্ত্র তৈরির করতে যখন যন্ত্রই সক্ষম হবে তখন ঘটবে ‘বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরণ’। ”
প্রথম যে ব্যক্তিটি এধরনের চিন্তা করেছিলেন তিনি হলেন জ্যাক গুড। ব্লিটসলি পার্কে অ্যালান তুরিংয়ের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, “এধরনের সুক্ষ্ণ যন্ত্রের সৃষ্টি হবে ‘আমাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন’ যখন সর্বকালের স্মার্টার রোবট মানবতাকে বহু পিছনে ফেলবে। ”
সুইজারল্যান্ডের ইকোলে পলিটেকনিক ফেডারেল ডে লৌসানের (ইপিএফএল) হিউম্যান ব্রেইন প্রজেক্টের (এইচবিপি) গবেষক হেনরি মারক্রামের নেতৃত্বে ক্যামব্রিজের গবেষকরা কাজ করছেন।
মানব মস্তিষ্কের অনুরূপ কম্পিউটার মস্তিষ্ক তৈরির মাধ্যমে মারক্রামের দল গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন কোন বিষয়টি আমাদেরকে মানুষ বানিয়েছে। তারা বের করবেন মস্তিষ্কের সমস্যার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বিপ্লব ঘটাবেন নতুন কম্পিউটার প্রযুক্তিতে।
বিশ্বের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জিজ্ঞাসাগুলোর মধ্যে অন্যতম এ জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে সময় লাগবে ১০ বছরের বেশি। গবেষণা ব্যয় মেটাতে এইবিপিকে জোগাড় করতে হবে একশো কোটি পাউন্ড। এই অর্থের জন্যই অপেক্ষা করছে মারক্রাম ও তার দল। ইতোমধ্যে অর্থ সংগ্রহে নেমেছে মারক্রাম ও তার দল।
ব্রাসেলসে ২৮ জানুয়ারি এক সম্মেলনে মারক্রামের প্রকল্পকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফিউচার এ্যান্ড ইমাজিং টেকনোলোজিস (এফইটি)-এর প্রধান দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের প্রথম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মারক্রাম বলেন, “প্রক্রিয়াগত অনুসারে মস্তিষ্ককে পুনর্গঠিত, টুকরো গুলোকে একত্রিত, জীবতাত্ত্বিক নিয়ম বের করা, পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রধান উপায় হচ্ছে মানব মস্তিষ্কের নকল তৈরি করা। ”
তিনি আরও বলেন, “যখন আপনি এটি করতে পারবেন বা সবকিছু আয়ত্ত্বে আসবে এবং সবকিছু হিসাব করতে পারবেন, এটি প্রকৃত টিস্যুর মতো কাজ করবে-এবং এমনকি আমরা এটি ছোট পরিসরে দেখতে পাব। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা এটি একটি রোবটে সংযুক্ত করি, তাহলে রোবটটি তার মস্তিষ্কের সহায়তায় যে বিভিন্ন আচরণ করবে তা আমরা বুঝতে পারব, রোবটটি মস্তিষ্কের উচ্চতর কাজগুলো করবে, অবধারণগতভাবে সক্ষম হবে অর্থাৎ সম্ভাব্য বোধশক্তিসম্পন্ন হবে। ”
কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরি করা গেলে তা মানুষের জন্য বয়ে আনবে উল্লেখযোগ্য উপকারিতা। সবচেয়ে যে উপকার হবে যে খাতটি তা হলো চিকিৎসা বিজ্ঞান। মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ যেমন অটিজম থেকে আলঝেইমারের মতো রোগগুলো সারানো যাবে। ইউরোপে এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি ইউরো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@banglanews24.com