ঢাকা: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, “প্রত্যেক মানুষ যে যত বোকাই হোক, কোনো না কোনো জায়গায় উজ্জ্বল। সাধারণ মানুষ বলে কোনো মানুষ নেই।
তিনি বলেন, “শক্তি দিয়ে মানুষের পার্থক্য হয় না, পার্থক্য হয় ভালোবাসা ও বড় হৃদয় দিয়ে। একজন মানুষ রিকশাচালক হয়েও হাসপাতাল, স্কুল করেছেন এটা অনেক বড় বিষয়। এখান থেকে আমাদের অনুপ্রাণিত হতে হবে। ”
বুধবার দুপুরে রাজধানীর পান্থপথের সেল সেন্টার মিলনায়তনে রিকশাচালক জয়নাল আবেদিনের সংবর্ধনা ও মানবতার পাঠশালা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ফাউন্ডেশনের বৃত্তিপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন তামাকবিরোদী নারী জোটের নেত্রী ফরিদা হোসেন, অ্যাঞ্জেল ইন্টারন্যাশনালের আজিজুল বারি, অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান, পিস সংগঠনের ইকমা হোসেন, সমাজসেবক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিম প্রমুখ।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “আমাদের বিত্ত বাড়ছে বলে আমরা নিজেদের ভেতর ঢুকে যাচ্ছি। সমাজে এখন ভালো মানুষের অভাব। নিরীহ, ভদ্র, শান্ত মানুষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। যে ভালো অন্যের কাজে লাগে না সেই ভালো দিয়ে কি হবে?”
তিনি বলেন, “সুখে থাকার চেয়ে আনন্দ বড়। কারণ আনন্দ মানসিক। আজকাল ঢাকা শহরের মানুষের দিকে তাকাতে ভয় লাগে। মনে হয় কি যেন খোঁজে, কি যেন মতলব, কি যেন কেড়ে নেবে। ”
তিনি আরও বলেন, “জয়নাল আবেদিন সাহেবের কাজ পৌঁছাচ্ছে। কাজের চাইতে পৌঁছাচ্ছে হুদয়। কাজ সবাই করে তবে বেশিরভাগ মানুষ নিজের জন্য কাজ করে। অন্যের ভালোর জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখা স্বার্থ বুদ্ধি এটা সবার থাকা উচিত। ”
মানবতার পাঠশালা বইয়ের লেখক হরিদাস ঠাকুর। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে গ্রামের বাড়ি। তিনি সমবায় অধিদপ্তরের চাকরীজীবি। রায়প্রকাশ প্রকাশনী এই বইটি প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, “একজন আলোকিত মানুষ রিকশাচালক জয়নাল আবেদিন। ২০১১ সালে তাকে সংবর্ধনা দেই। তিনি স্বশিক্ষিত। তিনি অনেক শিক্ষিত লোকের চেয়ে আলোকিত। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের ওষুধের অভাব দূর করতে তিনি নিজের রক্ত বিক্রি করে। ”
অনুষ্ঠানে হরিদাস বলেন, “একজন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর ও বাতিঘর জয়নাল আবেদিনের ইতিবাচক কাজের উপর এই বই। ”
জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমার বাবা চিকিৎসা ছাড়া মারা গেছেন। আমি রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করি। সায়ীদ স্যার আমাকে সহযোগিতা করেন। এখন আমি নিজেকে সফল মানুষ মনে করি। ”
তিনি বলেন, “আমি অনেক কষ্ট করে একটি হাসপাতাল, একটি স্কুল ও একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছি। আমি সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি। আমার হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালোভাবে চালাতে সহযোগিতা চাই। সবাই মানুষের জন্য কিছু করেন। ”
আজিজুল বারী বলেন, “তুর্কি একটি প্রবাদ আছে ‘ভালোবাসা থাকলে সুঁই দিয়ে কুয়ো খোঁড়া যায়। তাই সবার সদিচ্ছা থাকলে মানুষের জন্য অনেক বড় বড় কাজ করতে পারবো। ”
বাংলাদেশ সময: ১২৩৩মার্চ ০৬, ২০১৩
এমআইআর/আরআর