ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান গণজাগরন আন্দোলন বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও পাচ্ছে সমান গুরুত্ব। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, চলমান সময়ের শাহবাগ আন্দোলন, জামায়াতের সহিংসতা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দৈনিক ‘দ্য ডেইলি বিস্ট’।
‘বাংলাদেশি’স আনফিনিশড ওয়ার’ নামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশে গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাজনৈতিক সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৭৪ জন মানুষ নিহত হয়েছে। এ প্রাণঘাতী সহিংসতা শুরু করেছে বাংলাদেশের প্রধান ইসলামী দল জামায়াত-ই-ইসলামী। আর এ প্রাণঘাতী সহিংসতা শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দেওয়া জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়কে কেন্দ্র করে।
সহিংসতার অংশ হিসেবে পুলিশ ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে জামায়াত কর্মীরা। আগুন লাগিয়ে দেয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে। রেললাইন উপড়ে ফেলে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে বেশ কয়েকটি অঞ্চলের যোগাযোগ। আর এসব সহিংসতা ঠেকাতে দুর্বৃত্তদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ এতে অর্ধশতাধিক জামায়াত কর্মীর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পটভূমিতে চোখ রাখলে দেখা যাবে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের আরেক নেতাকে (কাদের মোল্লা) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলে তিনি আদালত থেকে বের হয়ে বিজয়সূচক (ভি) চিহ্ন দেখান। এতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়ে যায়। কারণ এসব প্রগতিশীল মানুষ আশা করেছিলেন কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধী সকল জামায়াত নেতাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। সেই ক্ষোভ থেকে ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ আহবান করেন ব্লগাররা।
শাহবাগে জড়ো হওয়া এসব মানুষের ক্ষোভ হলো, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা অপরাধ করেছিলে তাদের কখনোই বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। যে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ৩০ লাখ বাঙালি নিহত হয় এবং প্রায় ২ লাখ নারী ধর্ষিত হয়। পাক সেনাদের ওইসব অপকর্মের সহযোগিতা করেছিল স্থানীয় দোসররা, যাদের বেশিরভাগই জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই, এবার সুযোগ পেয়েও তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে আত্মঘাতী।
শাহবাগে জড়ো হওয়া জনতার দাবি, গণহত্যার জন্য এসব অপরাধীর ফাঁসি হওয়া উচিত। এছাড়া, এই শাহবাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার ধারক একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাইছেন আন্দোলনকারীরা। যদিও বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।
শাহবাগ আন্দোলনের চাপে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত-ই-ইসলামীর বিচার করার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করে সরকার। এ হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে তারা নিজেদের সাময়িক গোপনে রাখতে পারে এবং কিছু দিন পর অন্য নামে আত্মপ্রকাশ করে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নয় এমন কোনো নেতাকে নেতৃত্বে রাখতে পারে।
অন্য চোখে দেখলে, যুদ্ধাপরাধের রায় এবং সংকীর্ণ ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে জামায়াত আরও সহিংস হয়ে ওঠতে পারে। ১৯৭১ সালের মতো টার্গেট করতে পারে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের। যার প্রমাণ, ১৬ ফেব্রুয়ারি আহমেদ রাজীব হায়দার নামে একজন ব্লগারকে খুন করা হয়েছে।
এতোসব সম্ভাবনা- সংকীর্ণতার মধ্যে বড় চিন্তার কথা হলো বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি জামায়াতকে এখনও সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে। জামায়াত কর্মীদের পুলিশ কর্তৃক হত্যার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো মনে করছে ‘গণহত্যা’ উচ্চারণ করে বিএনপি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের নিহত হওয়ার ঘটনাকে অপমান করেছেন।
জামায়াতকে ঠিক কী কারণে বিএনপি সহযোগিতা করছে তা এখন পর্যন্ত অপরিষ্কার। তবে, এটা বলা যাচ্ছে ৪২ বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করা বাংলাদেশ এখন সেই আগেকার অস্থির সময় পার করছে। যুদ্ধ যেন শেষ হয়েও হয়নি। সব কথার শেষ কথা হলো, স্বাধীনতার সাড়ে তিন যুগ পর আবারো যদি বাংলাদেশে রক্ত ঝরে তবে সেটা হবে লজ্জাজনক ঘটনা।
বাংলাদেশ সময় : ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৩
eic@banglanews24.com