বান্দরবান: মাচিং নু মার্মা বান্দরবানে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি অনেকের ভাগ্য বদলের কাজ করে যাচ্ছেন। তার হাত ধরেই পাহাড়ের গতানুগতিক চাষাবাদ ছেড়ে অনেকে নেমে পড়েছেন স্ট্রবেরি চাষাবাদে।
স্ট্রবেরি খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল হওয়ায় আমাদের দেশে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। মাচিং নুর দেখাদেখি এখন পাহাড়ের গতানুগতিক জুম চাষের পরিবর্তে অনেকেই স্ট্রবেরি চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
বান্দরবান সদর উপজেলার ডলুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এ ফলের চাষাবাদ।
সম্প্রতি স্ট্রবেরি ক্ষেতে গিয়ে তার সাফল্যের কথা জানতে চাইলে মাচিং নু বাংলানিউজকে জানান, ২০১১ সাল থেকে এলাকায় তিনি স্ট্রবেরি চাষ করছেন। রাঙামাটির মানিকছড়ির কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ৩৬টি চারা দিয়ে ২০ শতাংশ জমিতে স্ট্রবেরি চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। প্রথম বছরে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করে লাভ করেন দেড় লাখ টাকা।
তিনি আরো জানান, চলতি বছর তিনি জেলা সদরের আদিবাসী পল্লী কিবুক পাড়া, ডলুপাড়া ও বালাঘাটাসহ ৫টি জায়গায় স্ট্রবেরি চাষাবাদ করছেন। আর প্রতিদিন স্ট্রবেরি ক্ষেত্রে কাজ করছেন ৫ শ্রমিক।
মাচিং নু মার্মার স্বামী এ্যানি মং মার্মা বাংলানিউজকে বলেন, ১ একর জমিতে ২০ হাজার চারা লাগানো যায়। বছরে প্রতিটি চারা থেকে আড়াইশ’ গ্রামের বেশি স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। লাভজনক হওয়ায় এবার তিনি ও তার স্ত্রী ১২০ শতাংশ জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। স্ট্রবেরির পাশাপাশি তারা একই জমিতে করছেন ক্যাপসিকাম (মরিচ জাতীয় সবজি) চাষাবাদ।
অক্টোবরে স্ট্রবেরি চারা রোপন করলে মার্চ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত পানি আর সার দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
পাহাড়ে জুম চাষের তুলনায় স্ট্রবেরি চাষে কষ্ট অনেক কম হওয়ায় স্থানীয় আদিবাসীরা এ ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কিবুক পাড়ার আরেক স্ট্রবেরি চাষি উ চিং মং মার্মা বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমাদের এই বোন (মাচিং নু) এখন এলাকার সবাইকে স্ট্রবেরি চাষাবাদের পদ্ধতি শেখাচ্ছেন এবং সবাইকে উৎসাহ দিচ্ছেন’’।
বর্তমানে বান্দরবানের বাজারে ছয়শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে স্ট্রবেরি। প্রচুর স্ট্রবেরি উৎপন্ন হলেও যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ এবং এলাকায় এর কোনো পাইকারি বাজার বা পাইকার নেই। ফলে উৎপাদকদেরই প্রতিদিন জেলা শহরে স্ট্রবেরি নিয়ে বিক্রি করতে হয়।
স্থানীয় কৃষিবিদ সুব্রত দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘পাহাড়ের আবহাওয়া অনুকূল থাকায় স্ট্রবেরি চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই অনেকেই স্ট্রবেরি চাষাবাদ করছেন’’।
স্থানীয়রা মনে করেন, বেশি বেশি স্ট্রবেরি চাষ করে তা বিদেশে রপ্তানি করে অর্জন করা যেতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। যা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে এবং বেকার সমস্যা নিরসনে এটি হতে পারে মডেল প্রকল্প।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৩
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর
eic@banglanews24.com