ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মুন্সীগঞ্জে হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

কাজী দীপু, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৭, মার্চ ২৩, ২০১৩
মুন্সীগঞ্জে হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রত্নসম্পদ ও ঐতিহাসিক নিদর্শন উদ্ধারে চালানো খনন কাজের মাধ্যমে এ বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কৃত হয়।



সদর উপজেলার রামপাল ও বজ্রযোগনী ইউনিয়নের বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে প্রাচীন ইট পুনঃব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো জায়গায় মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে ইটের পর ইট ও মৃৎপাত্রের টুকরা।

এছাড়া প্রাচীন বিক্রমপুরের কীর্তি, কীর্তিনাশা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন নথিতে প্রাচীন বিক্রমপুরের প্রত্নসম্পদের কথা উল্লেখ থাকলেও এতোদিনেও কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক তা খননে উদ্যোগ নেয়নি।
Munshiganj
তাই অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রত্নতাত্ত্বিক খনন। অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও এ প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন।

শনিবার বেলা ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের রামপালের রঘুরামপুরে খনন প্রকল্পস্থানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি ও প্রকল্প পরিচালক নূহ-উল-আলম লেলিন ও গবেষক অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুলতানী যুগের বাবা আদম মসজিদ, মুঘল যুগের ইদ্রাকপুর দূর্গ, মীরকাদিম পুল ও ঔপনিবেশিক যুগের সোনারং মন্দির প্রভৃতি মুন্সীগঞ্জের প্রাচীন প্রত্নবস্তু। প্রায় এক হাজার বছর আগে বিক্রমপুর ছিল চন্দ্র, বর্মণ ও সেনদের রাজধানী। এ অঞ্চল ছিল সমৃদ্ধ জনবসতি।

বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে বর্তমান পর্যন্ত একশ’টির বেশি মূর্তি ও ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে। ঢাকা, বরেন্দ্র, কোলকাতার ভারতীয় যাদুঘরসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে বিক্রমপুরের অমূল্য এসব প্রত্নবস্তু।

মূর্তি ও ভাস্কর্যের বাইরে চন্দ্র, বর্মণ, সেন ও দেবদের ১৬টি তাম্রশাসন পাওয়া গেছে বিক্রমপুরে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রায় ৩ মিটার গভীর পর্যন্ত মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়। হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে রামপাল ও বজ্রযোগনী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ৯টি পরীক্ষামূলক উৎখনন পরিচালিত হয়। প্রতিটি প্রত্নস্থানে প্রাচীন বসতির চিহ্ন দেখা গেলেও সীমিত আকারের উৎখননে বসতির প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছিলো না।

তবে ৯ নম্বর স্পট রামপালের রঘুরামপুরে ইট দিয়ে নির্মিত দেয়ালাংশ আবিষ্কৃত হয় প্রথম বছরে। ২০১০-১১ সালে রঘুরামপুরে আবারও উৎখনন কাজ শুরু করা হয়। ওই বছরই রঘুরামপুরে খননকালে পূর্বাষ্কৃত ইট-নির্মিত স্থাপত্যাংশের আরও প্রায় ১০০ মিটার উত্তরে গর্ত আবিষ্কার করতে গেলে বেরিয়ে আসে ক্ষতিগ্রস্ত ইটের দুটি দেয়ালের চিহ্ন।

এরফলে ওই স্থানে ৮০ মিটার থেকে ৬০ মিটার জায়াগা নিয়ে ২-২ বর্গমিটার ১২০০ গ্রিডে ভাগ করে উৎখনন শুরু করা হয়। দ্বিতীয় বছরে আবিষ্কৃত হয় উত্তর-দক্ষিণ প্রলম্বিত ২.৫ মিটার প্রশস্ত দুটি ইটের দেয়ালের অংশবিশেষ। এ সময় ২ মিটার প্রশস্ত ভিক্ষু কক্ষ বিভাজন দেয়ালেরও অংশবিশেষ সনাক্ত করা হয়েছিল।

তৃতীয় বছরে চলমান উৎখননে বৌদ্ধ বিহারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রায় আড়াই মাস কঠোর পরিশ্রমের ফলে আবিষ্কৃত হয় বৌদ্ধ বিহার। এ পর্যন্ত ৫টি ভিক্ষু কক্ষ উন্মোচিত হয়েছে।

বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় ঘটনা। এ অমূল্য আবিষ্কারটি বাংলাদেশকে বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে নিবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: শামীম হোসেন, শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।