ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘দশে চাইলেই আমার চাওয়া’

জাকিয়া আহমেদ, চিফ ল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫:০৯, মার্চ ২৪, ২০১৩
‘দশে চাইলেই আমার চাওয়া’

ঢাকা: রাতের টিএসসির চেহারাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর টিএসসিও যেন মাঝ রাতে ঘুমের রাজ্যে বাস করছে।

শুধু কয়েকটি রিকসা আর তিনজন চা বিক্রেতা ছাড়া কাউকেই চোখে পড়েনি।

শনিবার দিনগত রাত ২টা ৩০মিনিটের দিকে এমন চিত্রই দেখা গেল টিএসসিতে। ছয় বছর ধরে হবিগঞ্জের দিনু মিয়া এখানে চা বিক্রি করেন।

শাহবাগ আন্দোলনের সময় কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে দুই মেয়ের বাবা দিনু মিয়া বলেন, ওই সময়ে দেশে(হবিগঞ্জ)ছিলাম।

পরিবারের সদস্য মা, স্ত্রী এবং মেয়েরা থাকেন হবিগঞ্জে। প্রতিদিন চা বিক্রি করে তার তিনশ’ টাকা থাকে বলে জানালেন তিনি। থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

তিনি বলেন, “খুব মনে চাইছে এখানে আইস্যা পড়ি, কিন্তু ছোট মাইয়াটার অসুখ থাকায় আইতে পারি নাই। তয় মনে মনে দোয়া করছি যারা আন্দোলন করতাছে তাগো চাওয়া যেন পূরণ হয়। ”

আপনিও কী বিচার চান জানতে চাইলে অনেকটা লাজুক হেসেই রাত জাগা এই চা বিক্রেতা বলেন, “আমিতো বেশি কিছু জানি না, তয় এতো এতো মানুষ যেইটা চায় সেইটাতো আর মিথ্যা হইতে পারে না। এই খানেতো আর আওয়ামী লীগ, বিম্পি (বিএনপি)নাই। দেশের মানুষ যেইডা চায় আমিও তাই চাই। দশে চাইলে আমারও চাওয়া। ”

পাশেই বসা রিকসাচালক সোহরাবও গলা মেলালেন দিনু মিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, “আল্লারে, খালি মানুষ আর মানুষ।

মানুষের লেইগ্যা পা ফালান যায় নাই। আমিও কতো দিন রিকসা না চালাইয়া ওই খানে গিয়া বইস্যা রইছি। এমুন আন্দোলন অনেক দিন দেহি নাই। ”

তিনি বলেন, হুনছি খালেদা তাগো সবাইরে নাস্তিক কইছে। এইডা হেয়(খালেদা জিয়া) ঠিক করে নাই....। কথা বলতে বলতে রিকসার প্যাডেলে পা চালালেন সোহরাব।

পাশেই অবস্থিত শহীদ মিনারে দায়িত্বরত বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. জাহাঙ্গীর। তিন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারের সামনেই।

আগে এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসলেও এখন একেবারেই নেই বলে দাবি করলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা এখন অনেক কঠোর। এখানে মাদক সেবনতো দূরের কথা রাতের বেলা আড্ডা দেওয়াটাও অনেকটা নিষিদ্ধ। সঙ্গে থাকা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের এক দোকানিও একই কথা বললেন।

জাহাঙ্গীর বলেন, আগে এখানে অনেক কিছু হতো। প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর ধরেই রাতের শহীদ মিনারের চেহারা একেবারেই বদলে গেছে।

তবে কথা বলার সময় লক্ষ্য করে দেখা গেল এএসআই জাহাঙ্গীরের নামফলকটি নেই। নামফলক কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ এখানে আসার একটু আগে তাড়াহুড়োয় নামফলকটা ছিঁড়ে গেছে।

পুরো শহীদ মিনারের আশেপাশে ঘুরে অবশ্য রাতের আড্ডাবাজদের দেখা পাওয়া গেল না।  

তার বদলে দেখা গেল শহীদ মিনারের চারপাশের যে সীমানা সেখানে ভাসমান লোকজন চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।

এদের যাওয়ার জায়গা নেই তাই এটাই তাদের রাতের আশ্রয়, ঘুমন্ত মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন মো. জাহাঙ্গীর।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৩
জেএ/ সম্পাদনা: জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।