কলকাতা, বাংলাদেশ থেকে ফিরে: দ্বিতীয়বার যখন বাংলাদেশের মাটি ছুঁলাম সূর্য তখন ঠিক মাথার ওপরে অবস্থান করছে। প্রথমবার বাংলাদেশে এসে নিজেকে গুছিয়ে নিতে নিতেই ফেরার সময় হয়ে গিয়েছিল।
ছোটবেলায় কলকাতার ভবানীপুরের গঙ্গার ঘাট থেকে ফুট পঞ্চাশেক দূরের বাড়ির ছাদে বসে দিদা মাঝে মাঝেই গঙ্গার দিকে নীরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে থাকতে দু’টি গান পর পর গাইতেন।
‘আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে’
তার পরেই তিনি ধরতেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।
যতোবারই দেখেছি, গানের শেষে ততোবারই ওই অকাল বিধবা সাদা থানের আঁচল দিয়ে চোখ মুছতেন।
প্রথমবার বাংলাদেশে এসে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়ার পথে সোনার বাংলাকে দেখেছিলাম। কিন্তু সেবার মনের আশা পুরোপুরি মেটেনি। তাই একপ্রকার জেদ করেই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার আবার বাংলাদেশে আসা।
বাবার কাছ থেকে অনেকবার শুনেছি, কিভাবে শরণার্থীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাবা ও তার বন্ধুরা।
দিদিমার মুখে শুনেছি, কলকাতায় তাদের উদ্বাস্তু দিনগুলোর লড়াই-যন্ত্রণার ইতিহাস।

কিছু দিন ধরে সাংবাদিকের তকমা লেগেছে আমার গায়ে। ঢাকার মৌচাক থেকে প্রেসক্লাব যাবো। জানতে পারলাম, সিএনজি চালিত অটোরিকশার চেয়ে রিকশা নেওয়াই ভালো। তবে অবশ্যই দরাদরি করে। সে মত রিক্সা নিলাম। ঢাকায় রিকশার অভাব নেই। রিকশায় ওঠার আগে চালককে বললাম, ঢাকা প্রেসক্লাব যাবে?
-যাবো, ওঠেন।
-কতো?
-একশো বিশ টাকা।
-না, আশি টাকা দেবো।
-ওঠেন।
মনে মনে নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান ভাবলাম। ভাগ্যিস দরাদরি করেছি! কলকাতার রিকশায় দরাদরির কোনো জায়গা নেই। রিকশা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড ছাড়া পাওয়া যায় না। অবশ্য ঢাকায় যেকোন স্থান থেকে ওঠা যায়।
আর কলকাতায় পাওয়া গেলেও চালক আপনাকে মাঝ পথ থেকে তুলবেন না সেই সম্ভাবনাই বেশি। এখানে প্রতিটি স্ট্যান্ডে বিভিন্ন দূরত্বের নির্দিষ্ট ভাড়া লেখা থাকে।
প্রেসক্লাবে দাদা-বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে রিকশার বিষয় উঠতেই বুঝলাম কতোটা ঠকেছি।
তারাই বললেন, ‘ভাষায় বুঝেছে যে তুই বিদেশি, তাই তোরে ঠকাইছে। বিশ থেকে ত্রিশ টাকা ভাড়া হয়। তোর থেকে নিয়েছে আশি টাকা’।

যাকগে বারবার কি আর ঠকবো! তাই পরের দিন ঠিক করলাম, রিকশায় বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাবো না। হেঁটেই যাবো প্রেসক্লাবে। দূর তো বেশি নয়। কেননা আগের দিন দেখেছিলাম, রিকশায় দশ মিনিটের মতো লেগেছিল। হাঁটলে নিশ্চয় বিশ মিনিটের বেশি লাগবে না। মনে মনে এই হিসেবটা করে বের হয়ে পড়লাম।
ওমা একী! বিশ মিনিটের পথ দেখছি প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিটের ওপর চলে গেছে। প্রেসক্লাব-তো আমার নজরে আসে না। জায়গাটাও কেমন যেন আগের দিনের মতো মনে হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই এবার পথিকদের কাছে জানতে চাইলাম প্রেসক্লাব কতোদূর?
‘ভায়া, আপনি ভুল পথে আইছেন। এদিক নয়, ওদিক দিয়ে যান’।
অগত্যা আবার হাঁটা শুরু। পথে যেতে যেতে এক নতুন বন্ধুকে পাওয়া। প্রথম পরিচয়েই কেন বন্ধু বললাম সে কথায় পরে আসছি। তাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, প্রেসক্লাবতো অনেকটা পথ বাকি! এই পথ দিয়ে বাসে যেতে হবে। স্বভাবসিদ্ধ ভাবে ধন্যবাদ বলে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ তিনি বললেন,
-‘দাঁড়ান! চলেন আমার সাথে’।
কিছু না বলে ওনাকেই অনুসরণ করলাম। মনে মনে ভাবছি, নিজে থেকে এগিয়ে এসে এতোটা সাহায্য! গতকাল রিকশায় ঠকেছি, আজ কি তবে....?
ছেলেটির চেহারা হাঁটা-চলা একটু অন্যরকম।

উচ্চতায় ছয় ফুটের মতো। নির্মেদ, সুঠাম শরীর। গায়ে হাফ হাতা জামা। কোমরে বেল্ট। পায়ে নিখুঁত পালিশ করা বুট। কালচে রঙ, বয়স প্রায় মাঝবয়সী।
-আপনি ভারতীয়? গলার শব্দের ওজন আছে।
-হ্যাঁ।
-কলকাতায় থাকেন?
-হ্যাঁ।
-জানেন, কলকাতার কথা অনেক শুনেছি। আমার কয়েকজন ‘ফ্রেন্ড’ ও গেছে কলকাতায়। আমার যাওয়া হয়নি।
-তা, একবার চলে আসুন।
-না দাদা, সমস্যা আছে।
-কেন পাসপোর্ট নেই?
-আছে দাদা, তবু অনেক সমস্যা।
-ও, তাই।
সমস্যা আছে বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবু সমস্যাটা বলছেন না। কৌতূহল হচ্ছে, আবার বেশি আগ্রহও দেখাতে পারলাম না। উনি বলে চললেন, কলকাতার এটা কোথায়, ওটা কোথায়? কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনের দূরত্ব কতোটা? আজমির কতটা দূরে? আগ্রা কিভাবে যেতে হয়? কতো না প্রশ্ন। আমিও হাঁটতে হাঁটতে একের পর এক উত্তর দিয়ে চলেছি। তবু কৌতুহলটা আমার মাথা থেকে যাচ্ছে না।

আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। ভদ্রতার মোড়ক ছেড়ে এবার সরাসরি প্রশ্ন করেই ফেললাম, আপনি কলকাতার এতো খবর রাখেন, তা যাওয়ায় সমস্যা কোথায়?
এই প্রথম হাসলেন ভদ্রলোক। হেসে বললেন,
- আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আছি। ইচ্ছা করলেও যেতে পারবো না। আমার বাসা চট্টগ্রামে। আজই ক্যাম্প থেকে ছুটি নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরছিলাম। কিন্তু
আপনার সঙ্গে গল্প করতে করতে বাসটা ছেড়ে দিতে হল।
- কেন? এমা ছিঃ ছিঃ! আপনি আমার জন্য বাস ছেড়ে দিলেন! পরের বাস আবার কখন?
একটা লাজুক হাসি দিয়ে বললেন,
-আপনি উঠছেন মৌচাকে, আর প্রায় ক্যান্টনমেন্টের কাছাকাছি এসে প্রেসক্লাব খুঁজছেন। তখনই বুঝছি, আপনি রাস্তা হারাইছেন।
এবার আমিই বলে ফেললাম,
-আমি খুবই লজ্জিত আপনাকে সমস্যায় ফেলে।
-না, না, এরকম ভাবছেন কেন? আপনার সাথে তো আর রোজ দেখা হবে না।
- কি খাবেন।
-চা খেতে পারি।
-একটা চা দিন।
-আপনি?
-রোজা আছি। চলেন, আমার বাসায়।
- না দাদা, এবার আর হবে না।
-ক’দিন আছেন?
-আছি ক’টা দিন।
-তো চলেন।

-দাদা এবার হবে না। তবে কথা দিলাম পরের বার নিশ্চয়ই যাবো।
-এটা আমার ফোন নম্বর, কোনো সমস্যা হলে ফোন দেবেন।
- নিশ্চয় দেবো। কিন্তু আপনি এখন কি করে যাবেন?
-আজ আর যাবো না। আজ ক্যাম্পেই ফিরে যাবো। ভাই, টাকাটা নেন। (চা ওয়ালার উদ্দেশ্যে)
-না না, আমি দিচ্ছি।
-আপনাকে তো আর কিছুই খাওয়াতে পারলাম না।
-ধন্যবাদ দাদা, তবে কথা দিলাম বাংলাদেশ ছাড়ার আগে আপনার অনুমতি নিশ্চয় নেবো।
- আবার নিশ্চয় দেখা হবে। আল্লা হাফেজ।
ক্লাবে ঢুকছি আর ভাবছি, এই বন্ধুর সঙ্গে আলাপ আদতে আমায় ঠকিয়ে যাওয়া রিকশাওয়ালার দৌলতে। দার্শনিকরা এ জন্যেই বোধহয় বলেন, জীবনের লাভ-লোকসানের হিসাবটা একমাত্রিক নয়, বহুমাত্রিক।
এটাই আমার বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে এসেছিলাম বেনাপোল সীমান্ত হয়ে। উৎসুক ছিলাম কতোক্ষণে পদ্মায় ভাসবো। বেনাপোল থেকে প্রায় চার ঘণ্টা পর আবার আমার বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা দেখলাম। যতোদূর চোখ যায়, শুধুই জল। দূরে দূরে পাল তোলা নৌকা। আমি উঠেছি এক বিশাল ফেরিতে। আমার মোবাইল ক্যামেরায় নিয়ে নিচ্ছি পদ্মার স্মৃতি।
ফেরির মধ্যেই চলছে কেনা–কাটা, হাট বাজার। কি নেই সেখানে! যেন নদীতে ভাসমান একটি জনপদ। তবে আমার ছবি তোলার উৎসাহ অনেকেরই চোখে পড়েছে সেটা বুঝতে পারলাম। নিত্যযাত্রীদের একজন বললেন, পদ্মা নিয়ে আপনার এতো উৎসাহ আর এই পদ্মা প্রতিনিয়ত পারাপার করা আমাদের কাছে এক বিরক্তির ব্যাপার।
হয়তো তাই। আমার কাছে এই অভিজ্ঞতা নতুন বলেই হয়তো এতো সুন্দর। তবে যানজটের ভিড়ের থেকে জলপথ অনেকটাই আরামদায়ক।
প্রায় ৩০ মিনিট লাগলো পদ্মা পার হতে। আবার হাজির ঢাকা শহরে।
ব্যস্ত শহর। মানুষজন ছুটছেন যে যার কাজে। কিছুটা উদ্দেশ্যহীন ঘুরলাম, ইচ্ছা করেই। আসলে এবার ঠিক করেছি মিউজিয়াম, ফোর্ট ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশের মানুষদের দেখবো বেশি করে। তাদের চিনবো, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো। তাই ইচ্ছা করেই পরিকল্পনাহীন আমার ভ্রমণসূচি। তবে রাস্তায় এলোমেলো ঘুরতে গতবারের মতো এবারও পরিচিত সকলেই নিষেধ করেছিলেন। সে কারণেই মধ্যরাতে ঢাকা শহরে ঘোরার গোপন ইচ্ছাটাকে স্থগিত করেছিলাম।
কিন্তু ঢাকার অলিতে-গলিতে বেশ কিছুটা ঘোরার পরেও যুবকদের আড্ডা বিশেষ চোখে পড়ল না। ভেবেছিলাম, সেসব আড্ডায় কিছুটা সময় কাটিয়ে বাংলাদেশের যুবকদের চিন্তা –ভাবনা, তাদের রাজনৈতিক মতামত কিছুটা বুঝে নেবো। কিন্তু সে রকম আড্ডার সন্ধান পেলাম না কলকাতার মতো।
যেখানে চা খেতে খেতে অনায়াসে পরিচিত-অপরিচিত মিলে খেলা থেকে সিনেমা হয়ে রাজনীতির কথা আলোচনা করা যায়।

শুনলাম আমি যাদের খুঁজছি তারা আড্ডা মারেন, তবে বেশিরভাগটাই ফেসবুক, হোয়াটস আপ ইত্যাদিতে । ডিজিটাল আড্ডা কি তবে ভাগ বসাল মুখোমুখি আড্ডার আমেজে!
তবে হতাশ করল যানজটও। বাড়ি থেকে কাজের জায়গা আর কাজের জায়গা থেকে বাড়ি ফিরতেই যদি দীর্ঘ সময় লেগে উদ্যোম নষ্ট হয়ে যায়- তবে কাজের জন্য অথবা পরিবারের জন্য কতোটুকুই বা উৎসাহ বেঁচে থাকে। প্রশাসন আরও কিছুটা চেষ্টা করলে যানজট বেশ কিছুটা কমতে পারে, অন্তত এটাই আমার মনে হয়েছে।
কলকাতার রাস্তায় যেমন দুই পা চললেই দু’টি করে ‘ফাস্ট ফুড’-এর দোকান, ঢাকায় তেমনটা কিন্তু দেখলাম না। তবে বিস্তর বিদেশি গাড়ি চলছে রাস্তায়।
বাংলানিউজ২৪-এর সহকর্মীদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আন্তরিক যে ব্যবহার এবং সাহায্য তাদের কাছ থেকে পেয়েছি, সেটা আমার কাছে অকল্পনীয়। একসঙ্গে ইফতার করা থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে যখন যেমন দরকার পড়েছে, তাদের সাহায্য পেয়েছি।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনাচক্রে ততোক্ষণে বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকায় বসে কি গোটা বাংলাদেশকে চেনা যায় ? না! ঢাকার বাইরে আছে অন্য এক বাংলাদেশ। আর এই অন্য বাংলাদেশ দেখলাম বাংলানিউজের২৪-এর এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। হাজির হলাম ফরিদপুরে।

আবার পদ্মা পারাপার। তবে এবার সময় লাগলো ৫৫ মিনিট। পদ্মায় এখন ভরা জোয়ার। তাই জোয়ার ভেঙ্গে এগোতে কিছুটা দেরি হল।
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি, আর তার মধ্যেই ছুটে চলেছে গাড়ি। গ্রামের পথ, চওড়ায় আট থেকে দশ ফুট আর পথের দু’পাশে সারি সারি গাছ।
গাড়ির জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, দু’পাশের জংলা বন রাস্তার ওপরের আকাশ তাকে প্রায় ঢেকে দিচ্ছে। হাজির হলাম ফরিদপুরের ফার্ম হাউসে।
ফার্ম হাউসটি যেন একখণ্ড গ্রাম। কি নেই সেখানে! চড়ে বেড়াচ্ছে একদল রাজহাঁস। পুকুরের মাছগুলো যেন কৌতুহলের বশে অপরিচিত অতিথিকে দেখে নিতে জলের ওপর মুখ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ধানের ক্ষেত ,বাগান, ফার্ম হাউসের ঘাসের কার্পেট বিছানো জমি যেন বর্ষার জলে আরও সবুজ হয়ে উঠেছে।
হাজির হলাম কবি জসীমউদদীনের বাড়িতে। নক্সি কাঁথার মাঠ আজও পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যবইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। কবির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল, দুই বাংলার বাঙালি যতোই ভাষা প্রেমের কথা বলি না কেন, আমরা বোধহয় এখনও বাংলা ভাষার সঠিক মূল্যায়ন করে উঠতে পারিনি। আর সেজন্যেই হয়তো জসীমউদদীনের মত কবিরা নবীন সমাজের কাছে যথেষ্ট পরিচিত নন।

কলকাতার রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে বাজে রবীন্দ্র সঙ্গীত। ঘটা করে পালিত হয় রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী। কিন্তু চৈত্রের দুপুরে যখন যান্ত্রিক নিয়মে ট্রাফিক সিগন্যালে বেজে ওঠে ‘হৃদয় আমার নাচেরে...’, তখন মনে হয়, আসলে আজকের বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা কোথাও যেন প্রথা সর্বস্ব হয়ে গেছে।
ফিরে এলাম ফার্ম হাউসে, সূর্য তখন অস্ত গিয়েছে। মেঘের জন্য আকাশে চাঁদেরও দেখা নেই। চারদিকে অন্ধকার। ঝিঁঝিঁর ডাক জানান দিচ্ছে সময়টা ভরা বর্ষার। ক্রমাগত বাড়ছে বৃষ্টি।
ফার্ম হাউসের একটি ছাউনির তলায় বসে হঠাৎ দেখতে পেলাম, চারিদিকে ঘিরে ধরেছে জোনাকি। দেখতে দেখতে মনে হোল এ যেন এক অপার্থিব দৃশ্য। যেন আকাশ গঙ্গার ঠিক মধ্যে আমি বসে আছি। আর আমার চারপাশে জ্বলছে- নিভছে অসংখ্য নাম না জানা তারা।
শহর কলকাতায় জোনাকির কল্পনাও বেশ কঠিন। মনে মনে ভাবার চেষ্টা করলাম, শেষ কবে এভাবে জোনাকি দেখেছি। মনে করতে পারলাম না।
আবার কবে এই অনুভূতি পাবো নিজেও জানি না। এবার দেশে ফেরার পালা। তখনও ঘড়ির কাঁটা ভারতের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারিনি। জায়গাটা নো-ম্যানস ল্যান্ড। কয়েক মিনিট সেখানে দাঁড়ালাম। কোথায় যেন চেতনায় ধরা দিল আন্তর্জাতিকতাবাদ। অন্তরে বেজে উঠল কবির সুমনের সেই বিখ্যাত গান-
'শ্যামলে শ্যামল তুমি নীলিমায় নীল' রবি গানে
যে নদীর কূল নেই, সে স্রোতে বৈঠা যারা টানে
আব্বাসউদ্দিন দরিয়ায় ধরেছেন সুর
শাশ্বত বেহুলার ভালোবাসা, সিঁথির সিঁদুর
ভাষাশহীদের খুনে শিশিরও আরো লাল হলো
এ যদি আমার দেশ না হয় তো, কার দেশ বলো?
বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৪