ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

কয়েকটি হাস্যকর বৈজ্ঞানিক মিথ

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
কয়েকটি হাস্যকর বৈজ্ঞানিক মিথ

সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মানবজীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে বিজ্ঞান। এ সম্পর্কের সূচনা কবে, তা জানতে হলে আমাদের যেতে হবে আগুন আবিষ্কার বা চাকা আবিষ্কারের সময়ে।

আর এই দীর্ঘ পথচলায় বিজ্ঞান যেমন মানুষের জীবনে বয়ে এনেছে অসামান্য মঙ্গল, একইভাবে আমাদের অতিউৎসাহ বা অতিচিন্তার কারণে মানবসমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক মিথ, যা সত্যিই হাস্যকর।

এক জায়গায় দু’বার আঘাত করে না বজ্রপাত
বজ্রপাতে কে না আতঙ্কিত হয়! এর কারণে ক্ষয়ক্ষতি-প্রাণহানির ঘটনাও নেহাত কম ঘটেনি। তাই বজ্রপাতের কারণ ও কোন ধরনের জায়গায় এটা আঘাত করে, তা জানতে বিজ্ঞানীরা উঠেপড়ে লেগেছিলেন। সন্তোষজনক তথ্যও উদ্ধার করা গেছে।

তবে এসব তথ্যের পাশাপাশি মানবসমাজে এ সংক্রান্ত একটা মিথও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর তা হলো, এক জায়গায় দু’বার বজ্রপাত হয় না। এ মিথ এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে, কখনো কখনো তা প্রবাদ হিসেবেও ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের এ ধারণা একেবারেই ভুল। যেকোন জায়গায় একাধিকবার বজ্রপাত হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের কথা বলা যায়। প্রতি বছর ১০২ তলা এ ভবনে অন্তত ২৫ বার বজ্রপাত হয়।

আঙ্গুল ফোটালে আর্থ্রাইটিস হয়
আঙ্গুল ফোটানোর অভ্যাস অনেকেরই আছে। আবার এ নিয়ে অনেকের ভেতর আতঙ্কও কাজ করে। বেশিরভাগের ধারণা, আঙ্গুল ফোটালে আর্থ্রাইটিস হয়। সহজ ভাষায়, বন্ধনীর স্থানে হাড়চ্যুতিকে আর্থ্রাইটিস বলা হয়ে থাকে।

মজার বিষয় হলো, আঙ্গুল ফোটানোকে আর্থ্রাইটিসের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যার সময় আমরা বেশিরভাগ সময়ই ‘বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত’ মন্তব্যটা করে থাকি। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণই ভিন্ন। আঙ্গুল ফোটানোর সঙ্গে এ রোগের কোনো সম্পর্কই নেই। এ নিয়ে অসংখ্য গবেষণা প্রতিবেদনও রয়েছে।

জিহ্বার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন স্বাদ শনাক্ত করে
আমরা অনেকেই বিজ্ঞের মতো দাবি করে থাকি, জিহ্বার একেক অংশ একেক স্বাদ শনাক্ত করে থাকে। বিশদ আকারে বলতে গিয়ে দাবি করি, জিহ্বার অগ্রভাগ মিষ্টি, পার্শ্বভাগ লবণাক্ত আর পেছনের ভাগ তিক্ত স্বাদ শনাক্ত করে থাকে।

কিন্তু সত্যিকার অর্থে এ দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গবেষকরা বেশ আগেই প্রমাণ করেছেন, পুরো জিহ্বায়ই স্বাদ শনাক্তের উপাদানগুলো সমহারে ছড়িয়ে থাকে। কাজেই গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ তার সব অংশেই সব ধরনের স্বাদ শনাক্ত করতে পারে।

নীল রক্ত
একটা ভ্রান্ত ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান। আর তা হলো শিরার মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান অক্সিজেনবিহীন রক্তের রঙ নীল। বাস্তবতা হলো, মানুষের রক্ত কখনোই নীল হয় না। তাহলে শিরার ভেতরের অক্সিজেনবিহীন রক্ত কী রঙের? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ রক্তের রঙ গাঢ় মেরুন।

প্রশ্ন উঠতে পারে, চামড়ায় ভেসে ওঠা শিরার রঙ তাহলে নীল দেখায় কেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, চামড়ার ভেতর আলোর প্রবেশ ও তার প্রতিফলন-প্রতিসরণের কারণেই শিরা নীল দেখায়।

ভ্যাক্সিন অটিজমের কারণ
আমরা অনেকেই দাবি করে থাকি, ভ্যাক্সিনের কারণে অটিজম হতে পারে। অটিজম হলো মস্তিষ্কের বিন্যাসগত সমস্যা, যার ফলে শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এতে করে শিশু শুধুমাত্র নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফলে অন্যের সঙ্গে তার যোগাযোগ, সামাজিকতা, কথা বলা, আচরণ ও শেখা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

ভ্যাক্সিনেশনের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যাদের ধারণা, এটি অটিজমের কারণ, তারা একেবারেই ভুল জগতে বাস করছি। সর্বপ্রথম অ্যান্ড্রিউ ওয়েকফিল্ড নামে এক চিকিৎসক তার গবেষণাপত্রে এ ভ্রান্ত ধারণাকে সত্য বলে দাবি করেন। তখন এ নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অসংখ্য বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক নতুন করে গবেষণা শুরু করেন। একটা পর্যায়ে বিষয়টি ভুল প্রমাণিত হয় এবং চিকিৎসক হিসেবে ওয়েকফিল্ডের সনদ বাতিল করা হয়। তবে এখনো কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এমএমআর (হামের টিকা বলে সর্বাধিক পরিচিত) ভ্যাক্সিনের ফলে অটিজম হয়ে থাকে।

মাছি অল্পদিন বাঁচে
আমাদের অনেকের ধারণা, মাছি ২৪ ঘণ্টা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ তিনদিন বাঁচে। তবে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, ১৫ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত বাঁচে মাছি।

কিছু কিছু প্রজাতির মাছি তো দুই মাসেরও বেশি বাঁচে। আর স্ত্রী মাছি জীবদ্দশায় পাঁচশ’র বেশি ডিম পাড়ে। লার্ভাগুলো বড় হতে সময় নেয় মাত্র দশদিন।

দীর্ঘ পায়ের মাকড়শা সবচেয়ে বিষাক্ত
অনেকেই দাবি করেন, দীর্ঘ পায়ের ড্যাডি লংলেগস প্রজাতির মাকড়শা সবচেয়ে বিষাক্ত। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতিও রয়েছে।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাকড়শারা কখনোই কোনো মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। আর ড্যাডি লংলেগস নয়, ব্রাজিলের ওয়ান্ডারিং স্পাইডার বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত মাকড়শা।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন ক্যান্সারের কারণ
এ দাবি তো আমাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত। অনেকেই মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সামনে লম্বা সময় থাকতেই চান না। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে গিয়ে আমরা বলে থাকি, এ যন্ত্র থেকে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়, যা আমাদের দেহে ক্যান্সার তৈরিতে সহায়ক।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের দাবির কোনো ভিত্তিই নেই। আর যারা ক্যান্সার আতঙ্কে মাইক্রোওয়েভে রান্নাই ছেড়ে দিয়েছেন, তারা তো রীতিমতো ভুলে জগতে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন। কারণ এ যন্ত্রে রান্না খাবারেও কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা সঞ্চিত হয় না।

আইনস্টাইন ছিলেন ভয়ংকর ছাত্র
প্রচলিত আছে, আইনস্টাইন ছিলেন অতিমাত্রায় খারাপ ছাত্র। এমনকি তিনি গণিতে ফেলও মেরেছিলেন। ধারণা করা হয়, এ গুজবটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহ যোগাতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এমনকি রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট-এর এডিশনেও তথ্যটি যুক্ত করা হয়েছে।

মূল সত্যটা হলো, আইনস্টাইন অত্যন্ত মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই ডিফারেনশিয়াল ও ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

মোজার্ট শুনলে শিশুর আইকিউ বাড়ে
এটাও একটা ভ্রান্ত ধারণা। সম্প্রতি ৮ হাজার শিশুর ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। একদলকে মোজার্ট শোনায় অভ্যস্ত করে তোলা হয়, আর অপরদলকে আধুনিক পপ সঙ্গীতে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, পপ শোনা শিশুরাই বেশি ভালো করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
আরএইচ/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।