ধুনট (বগুড়া): বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর-কোদলাপাড়ার বকচরে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছ মেলা।
বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এ মেলা শুরু হয়।
ধুনটের হেউটনগর কোদলাপাড়া গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বহমান বাঙালি নদীর পূর্বপাশের বকচরে সুদীর্ঘকাল ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ মেলা।
মাছ মেলার নামকরণ নিয়ে স্থানীয়রা জানান, মেলার স্থান ঘিরে একসময় বদ্ধ জলাশয় ছিল। চারপাশে পানি আর মাঝের উঁচু ওই স্থানে বসে অসংখ্য বক মাছ শিকার করতো। এ থেকেই জায়গাটির নাম বকচর হয়ে যায়।
কালেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালি নদীর পূর্ব তীরে শত বছরেরও অধিক সময় ধরে এ মেলা হয়ে আসছে। প্রতি বছরের মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বুধবার এ মেলা শুরু হয়।
এবারও বুধবার ভোর থেকে বকচরে মেলা শুরু হয়েছে। তবে এ মাছ মেলা এখন সার্বজনীন বার্ষিক উৎসবের রূপ নিয়েছে বলেও তিনি জানান।
সরেজমিনে মাছ মেলায় গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ীরা ডালায় মাছ সাজিয়ে বসে আছেন। মাছ কিনতে হাজারো মানুষের ভিড় নেমেছে বকচরে। তবে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা দেখতেও এসেছেন অনেকে।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী শ্যামচরণ হাওয়ালদার বাংলানিউজকে জানান, পদ্মা, যমুনা, বাঙালি, ইছামতি, মানাস নদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বোয়াল, বাঘাইড়, চিতল, আইড় মাছসহ বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে এসেছেন এ মেলায়।
মেলায় মাছ এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে আকৃতিভেড়ে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, মাছ মেলা নামে পরিচিত হলেও মেলায় মাছের দোকান ছাড়াও শত শত দোকান বসেছে বকচর জুড়ে। এসব দোকানে ফার্নিচার, গৃহস্থালী ও শিশুতোষ সামগ্রী, মিষ্টি, তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন পণ্য ওঠানো হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মেয়েদের প্রসাধনী ও চুড়ি-মালা ও আসবাবপত্রের পসরাও সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
সেইসঙ্গে রয়েছে গ্রামীণ মেলার ঐতিহ্যের অংশ চিনির তৈরি সাজ, কদমা, বাতাসা, নিমকি, কালাই, খুরমা, ঝুরি, মিষ্টি ও বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের দোকান।
অপরদিকে, মেলার সময় আশপাশের এলাকার মেয়েদের স্বামীসহ বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসার প্রচলন রয়েছে।
বগুড়ার নয় মাইল এলাকা থেকে হেউটনগর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন রঞ্জু মিয়া।
তিনি জানান, গত ৫ বছর ধরে মেলা উপলক্ষে দাওয়াতে আসেন শ্বশুরবাড়ি। এবারো এসেছেন, মেলা থেকে শ্বশুরবাড়ির জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি চিতল মাছ কিনেছেন।
বগুড়া ফতেহ আলী বাজার থেকে আসা মাছ বিক্রেতা আব্দুস ছালাম জানান, এবার মেলায় মাছের দাম কম। কারণ চাহিদার তুলানায় মেলার বেশি মাছ আমদানি হয়েছে। তাই এবার লোকসান গুণতে হবে।
তিনি জানান, এবার মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ হলো ২৫ কেজি ওজনের বাঘাইড়। দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা।
আয়োজক সূত্র জানিয়েছে, এবার মেলায় স্থানীয় খামার ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে এসেছেন। বকচরের মেলার মাঠ উপজেলা পরিষদ থেকে ইজারা বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে ৭১ হাজার টাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এএটি/এসআর