ঢাকা: ইরাকের গার্ডেন অব ইডেন। দক্ষিণ ইরাকের অনন্য এ জলাভূমি অঞ্চলে বসবাসকারীদের বলা হয় মাদান।
স্থাপত্যশিল্পের বিস্ময়সূচক এ বাড়িগুলো মুদিফ বলে পরিচিত। পেরেক, কাচ বা কাঠ ব্যতিত বাড়িগুলো তৈরিতে সময় লাগে মাত্র তিন দিন।
এসব বাড়ির বাসিন্দারা হাজার হাজার বছর ধরে এ পদ্ধতিতে জলের উপর বাড়ি বানাচ্ছেন। কিন্তু কয়েক শতকে এই ব্যতিক্রম স্থাপত্য বলতে গেলে দৃষ্টির অগোচরে চলে গেছে প্রায়।
মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন এত সুন্দর জলপৃথিবী বিলুপ্তির পথে?
এর পেছনে রয়েছে বিরাট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্যের স্বর্গতুল্য স্থানটি সাদ্দাম হোসেনের হাতে আসে। তখন তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ভাসমান বাড়িগুলো হোসেন সরকারের নির্যাতিত ক্রীতদাস ও ভূমিদাসদের আশ্রয়স্থল ছিলো।
১৯৯১ সালে ইরাকের গণঅভ্যুত্থানের সময় সাদ্দাম হোসেন দক্ষিণ ইরাকের এ জলাভূমি এলাকা নষ্ট করে ফেলেন। যারা বিদ্রোহ সমর্থন করেছিলো ও সরকার যাদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করে বেসামরিক অস্ত্রধারীদের আশ্রয় দিয়েছিলো তাদের শাস্তিস্বরূপ এ বাসস্থান নির্মূল করা হয়।
ইরাক সরকার আগের অর্থাৎ ১৯৭০ সালের সেচ প্রকল্প ফের পুনরুজ্জীবিত করলে প্রথমে এ জলাতে পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়।
ধীরে ধীরে এখানে বসবাসকারীদের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ধারাক্রমে এসব ভাসমান প্রচুর্যমণ্ডিত বসতি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়। অবশিষ্ট যেটুকু পানি ছিলো তা ছিলো বিষাক্ত।
এসব ঘটনার পর ও হাজার হাজার বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী এ বসতি থেকে উচ্ছেদ করে দিলে বহু বছরের পুরনো জীবনপদ্ধতি থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাদের আশ্রয় হয় শহর ও ইরাকের অন্য ক্যাম্প বা ইরানের আশ্রয়কেন্দ্রে।
১৯৫০ সালের হিসেবে এমন জলাভূমিতে বসবাসকারী বাসিন্দা সংখ্যা ছিলো প্রায় পাঁচ লাখের মতো। এর মধ্যে মাত্র এক হাজার ছয়শো বাসিন্দা তাদের ঐতিহ্যবাহী বাসস্থান ধরে রেখেছেন বর্তমানে।
তবে এ ব্যতিক্রম ঐতিহ্য সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছে নেচার ইরাক। এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন ইরাকি-আমেরিকান হাইড্রলিক ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করছেন হারানো গার্ডেন অব ইডেনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। এতে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও ইতালি।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এসএমএন/এএ