ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বছরে ৮৭.৮ বিলিয়ন পর্নো ভিডিও দেখা হয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
বছরে ৮৭.৮ বিলিয়ন পর্নো ভিডিও দেখা হয়

<< আগের অংশ: দিনে ১২মিলিয়ন পর্নোঘণ্টা, ৯৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য

ফলে পর্নো হয়ে উঠেছে বড় ব্যবসা। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি তুলে ধরা যাক।

কিভাবে গত এক দশকে পর্নের প্রতি আসক্তি ধাপে ধাপে বেড়েছে। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো ১৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। যার মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ অ্যাডাল্ট সাইটগুলোতে ভিজিট করতো। এর আগেই ২০০৫ সালে ইউটিউব চালু হয়, আর ২০০৬ সালে ইউপর্ন বাজারে আসে। ২০০৭ সালে চালু হয় পর্নহাব। আর সেসময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে যায় এর ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে। ২০০৯ সালে ইন্টারনেট জগতে সার্চ ইঞ্জিনে যত খোঁজাখুজি হয়েছে তার মধ্যে ১৩ শতাংশই ছিলো অ্যাডাল্ট সাইট। ওই বছর অ্যাডাল্ট ভিডিও দেখা হয়েছে মোট ২২.৩ বিলিয়ন (২,২৩০ কোটি) বার। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩.৬ বিলিয়ন। ২০১১ সালে পর্ন রিকোভারি সাইট নোফ্যাপ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেবছর অ্যাডাল্ট ভিডিও দেখার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮.৯ বিলিয়নে। ২০১২ সালে ইওর ব্রেইন অন পর্ন’স এর গ্যারি উইলসন চালু করেন টেডক্স টক। আর তারই সূত্র ধরে পর্নো সাইটে ভিডিও দেখার সংখ্যা এক বছরে ১২.৮ বিলিয়ন বার বেড়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১.৭ বিলিয়নে। ২০১৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে পৌঁছে যায় স্মার্টফোন। আর যায় কোথা! পর্নোগ্রাফি তখন হাতের মুঠোয়। এক বছরে আবারও ১১.৫ বিলিয়ন বেড়ে অ্যাডাল্ট মুভি দেখা হয় ৬৩.২ বিলিয়ন বার। ২০১৪ সালে মার্কিন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারা পর্নোবিরোধী আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু পর্নের জোয়ার থামে না। ওই বছর আরও ১৫.৭ বিলিয়ন বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮.৯ বিলিয়নে। ২০১৫ সালে প্লেবয়ের ছাপা সংখ্যার শেষ কপিটি প্রকাশিত হয়। ফলে যারা প্লেবয়ের পাতায় লটকে থাকতেন তারাও নিমজ্জিত হলেন অনলাইনের দরিয়ায়। এতে সে বছর পর্নোগ্রাফি দেখা বেড়ে গেলে প্রায় হাজার কোটি বার। মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৮৭.৮ বিলিয়নে। ২০১৬ সালে পর্নহাব চালু করেছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হাব। তাতে শেষ পরিসংখ্যান কত দাঁড়ায় তা বছর শেষেই জানা যাবে। তবে এই বছরটিতে পা ফেলে জানুয়ারি মাসের একটি হিসাবে দেখা গেছে, দেশের মোট ২৫ কোটি ৯০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ১০ কোটি ৭০ লাখ মানুষই পর্নোগ্রাফির জগতে বিচরণ করছে।

মস্তিষ্কের বিপদ প্রসঙ্গে ফেরা যাক। যুবশ্রেণির উল্লেখযোগ্য সংখ্যেই, যে সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, এখন বুঝতে সক্ষম হচ্ছে পর্নোগ্রাফিতে তাদের যৌন আবেদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা নিজেরাই চিহ্নিত করছে বয়ঃসন্ধিকালে পর্নোয় আসক্তি। সেসময় তাদের মস্তিষ্ক ওতেই নিমজ্জিত ছিলো। ফলে তাদের স্বাভাবিক যৌন জীবন আজ বিপর্যস্ত।

টাইম ম্যাগাজিন একটি উদাহরণ দিয়েছে নোয়াহ চার্চ নামের ২৬ বছরের এক যুবকের। এই যুবক এখন ওরেল্যান্ডে একজন অগ্নিনির্বাপন কর্মী। জানিয়েছেন, তখন তার বয়স ৯ যখন প্রথম ইন্টারনেটে নগ্ন ছবি দেখতো। ১৫ বছরে পৌঁছানোর আগেই ইন্টারনেট থেকে নোংরা ভিডিও নামিয়ে দেখা শিখে যায়। আর নিয়মিত দেখতে থাকে। কোনও কোনও দিন বেশ কয়েকবার করেই দেখতো সে। আর দেখার সময় সেও সেই সবই করতো যা প্রতিটি ছেলেই করে। একটা পর্যায়ে সে আবিষ্কার করলো এই ভিডিওগুলোও তাকে আর খুব একটা উত্তেজিত করে না। এবার সে রকমফের খুঁজতে শুরু করলো। কখনো কেবল মেয়েরা মেয়েরা, কখনো তিন-চারজন মিলে, কখনো জোরপূর্বক, যাতে মেয়েটি একেবারেই রাজি নয়! এসব দেখতে লাগলো। এক পর্যায়ে সেসবের আবেদনও শেষ হয়ে গেলো। এরপর সে ঝুকলো আরও অন্য কিছুতে, আরও সহিংস আর নোংরা কিছু। এরপর হাইস্কুল পর্যায়ে একবার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে সত্যিকারের সেক্স করার সুযোগ এলো। কিন্তু সামনে নগ্ন মেয়েটি তার ভেতরে কোনও উত্তেজনাই তৈরি করতে পারলো না। প্রথমবারের কারণেই এমনটা হচ্ছে ভেবে বাঁচলো দুজনই। কিন্তু এভাবে আরও ছয় বছর যখন কেটে গেলো এখন কোনও মেয়েই কোনওভাবেই তার মধ্যে সামান্য উত্তেজনা জাগ্রত করে না। পর্নোগ্রাফিতেই কেবল তার উত্তেজনা হয়, আর কিছুতে নয়।

চার্চ বুঝতে পারলো ছেলেবেলায় পর্নে আসক্তিই আর তার এই করুণ দশার জন্য দায়ী। যাকে নাম দেওয়া হয়েছে পর্ন-এনডিউড ইরেকটাল ডিসফাংশন (পাইড)। বিজ্ঞানীরা বলছেন পুরোটাই মস্তিষ্কের বিষয়। মস্তিষ্ক সাড়া দিলেই কেবল পুরুষ জাগ্রত হয়। আর স্রেফ পর্নোগ্রাফি বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের এই মস্তিষ্ককে দখল করে নিয়েছে। ফলে হুমকিতে পৌরুষত্ব। আর পর্নের বাণিজ্য সেতো বাড়ছেই। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। জানা নেই এই দৌড়ের শেষ কোথায়।

বাংলাদেশ সময় ১০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এমএমকে   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।