ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নিরাপদ ঘুমের পাহারাদার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
নিরাপদ ঘুমের পাহারাদার ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: তারা যেন সবার ‘নিরাপদ ঘুমের পাহারাদার’। সবাই যখন ঘুমিয়ে, তখন সেই ঘুমকে আরও নিশ্চিন্ত করতে রাত জেগে পাহারা দেন তারা।

কারও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারও ঘর-বাড়ি, কারও বা কর্মস্থল- সব কিছুকে তারা নিজেদের আপনজনের সহায়-অবলম্বন ভেবে আঁকড়ে রাখেন রাতভর। একলা-একাকি তাদের নির্ঘুম চোখ ক্লান্ত করে আসে সকাল। এরপর পুরো নগরী আব‍ার ব্যস্ত হয়ে যায়, তারা যান ঘুমোতে। বিরান রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাঘুরে এমনই ক’জন নিরাপদ ঘুমের পাহারাদ‍ারের সঙ্গে কথা বলেছে বাংলানিউজ।

নাম মো. আব্দুল সামাদ (৪৩)। গুলশান-২ নম্বর গোল চত্বরে রব সুপার মার্কেটের পাহারাদার। রাতভর জেগে জেগে পাহারা দেন বিশাল মার্কেটটি। রাত ৮টা থেকে শুরু করে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ডিউটি। মাঝেমধ্যে ঘুম পেলে পায়চারি করে ঘুম ভাঙান। পরিবার থাকে স‍ুদূর ময়মনসিংহে। সেখানকার স্বজনদের কথা ভেবেই রাত ভোর হয়ে যায় আব্দুল সামাদের। এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ ১৮ বছর।

গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বরে আইসিবি ব্যাংকের বুথ পাহারা দিচ্ছেন আফজাল হোসেন (৫১)। নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে খুব পরিচিত আফজাল। কিছু করতে পারেন না বিধায় খারাপ লাগে তার। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ডিউটি তার। রেডিও শুনতে ভীষণ ভালোবাসেন আফজাল। রেডিও শুনেই কেটে যায় দীর্ঘ রাত।  

বিএএফ শাহীন কলেজের হল গেটে পাহারা দিচ্ছেন মো. কাদের মিয়া (৩০)। সারারাত কাটে কাদের মিয়ার মোবাইলে বাংলা ছবির গান দেখে। তার প্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও সালমান শাহ। মোবাইল ভর্তি তাদের গানে। চার বছর হলো নৈশ প্রহরীর কাজ করছেন তিনি।

চেয়ারম্যান বাড়ির ‘বনানী মার্কেটে’ দায়িত্ব পালন করছেন মো. মোফাজ্জল (৫০)। তার কাছে কাজের স্বরূপ ভিন্ন। মোবাইলে গান শুনলে বা কারো সঙ্গে কথা বললে তো দায়িত্ব পালন করা হলো না। সেটাই তার ধারণা। কাজ আর কাজ করেই রাত ভোর করে দেন মোফাজ্জল। কাজ ছাড়া তার জীবনে আর কিছুই নেই। তার কাজটা সারাক্ষণ মার্কেটের এ মাথা-ও মাথা চক্কর দেওয়া।

একই মার্কেটের অন্য অংশে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আব্দুল মোতাল্লেব (৫০)। তিনি আবার ভিন্ন প্রকৃতির। ঘুম ধরলে হাঁটাহাঁটি করেন, মোবাইলে গানও শোনেন। তার স্বপ্ন জীবনে অনেক টাকা পয়সা ও ধন দৌলতের মালিক হওয়া। আর সেটা এখনও সম্ভব করতে পারবেন বলে ভাবেন তিনি।

কুড়িল বিশ্বরোডের প্রগতি সরণিতে পাথরের মতো চোখ নিয়ে বসে আছেন সুকুমার সুতার (৬০)। তার দায়িত্ব ‘বোরাক ভিহিকলস’র শো-রুমটি দেখে রাখা। সনাতন ধর্মের সুকুমারের সময় কাটে তার ধর্ম মন্ত্র পড়ে। ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে হবে এটাই সুকুমারের একমাত্র ইচ্ছা।

কুমিল্লার মকবুল আহমেদ (৭৮) অভাবে পড়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতে এসেছেন ঢাকায়। কুড়িল রোডে স্যামসাংয়ের শো-রুমটি পাহারা দিচ্ছেন তিনি। এক বছর চাকরি জীবনে শুধু ছিনতাই আর ছিনতাই দেখেছেন রাস্তায়। জীবনে বাড়ি-গাড়ি, টাকা-পয়সার মালিক হওয়া একমাত্র শখ ছিলো তার। কিন্তু তা করতে না পেরে আজ বড়ই হতাশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।