ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাবা দিবসের ইতিহাস

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
বাবা দিবসের ইতিহাস

ঢাকা: ‘বাবা, তোমার রাজ্য ‍ছাড়া আমার জন্য আর কোনো সিংহাসন নেই। বাবা, তুমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই, যে আমাকে রাজকুমারীর মতো দেখে।

তুমি ছাড়া আমার হাতের পাতায় কেউ চুমু খায়নি গো বাবা। তোমার তো কোনো রয়েল কিংডম নেই। কিন্তু তোমার রাজকীয় এক হৃদয় রয়েছে।

যার জন্য আমি অনুভব করি - আমার জীবনে ভালোবাসার রাজকীয় গল্প রয়েছে, আমার নির্ভরতার সোনার সিংহাসন রয়েছে। আরও রয়েছে সম্মানের মুকুট। আমি তো রাজার মেয়ে, তাই না বাবা?’

বিয়ের পর বরের সঙ্গে দূরদেশে পাড়ি দিয়ে বাবাকে এমনই একটি মেইল করেছিলো মোনামী। দৃঢ় ব্যক্তিত্ব অ‍ার নরম চিত্তের বাবা নামের এ মানুষটির বুকেই তো অনায়াসে লুটোপুটি খাওয়া যায়। আর কোথায় মেলে এমন উদার মনপ্রাঙ্গণ?

আজ ১৯ জুন (রোববার) বিশ্ব বাবা দিবস। বাবার জন্য উৎসর্গিত একটি দিন। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা দিবস পালন করে। বাবা দিবসের সূচনা হয়েছিলো গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন নামের এক নারীর হাত ধরে। তিনিই প্রথম দিনটি পালনের জন্য আবেদন জানান।
ক্লেটনের মাথায় ধারণাটি আসে ১৯০৭ সালে। সে বছর ডিসেম্বরে ভার্জিনিয়ার মোনোংয়াতে ভয়াবহ খনি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান সাড়ে তিনশোর বেশি পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু বাবা হারায়। এসব শিশুর বেদনা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টবাসী ক্লেটনকেও পীড়া দেয়।
ক্লেটন স্থানীয় মেথোডিস্ট গির্জার যাজককে খনি বিস্ফোরণে শহীদ বাবাদের সম্মানে ১৯০৮ সালের ৫  জুলাই (রোববার) বাবা দিবস হিসেবে উৎসর্গ করার অনুরোধ জানান। ৫ জুলাইকে বাবা দিবস করার দাবি জানানোর কারণ, সেদিন ছিলো ক্লেটনের বাবার জন্মদিন। তবে তার বাবা বেঁচে ছিলেন না।

১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপক্ষ একটি ঐতিহাসিক ফলক স্থাপনের মাধ্যমে ফেয়ারমন্টকে বাবা দিবসের জন্মস্থান হিসেবে ঘোষণা করে। ওই সময় থেকে প্রতি বাবা দিবসে গির্জায় দিনটির মাহাত্ম বর্ণনা করা হতো।

বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ভূমিকা রেখেছেন আরও এক নারী। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস পালিত হতো না। তখন স্থানীয় গির্জায় সোনোরা স্মার্ট নামে ওয়াশিংটনবাসী এক নারী মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে। কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি অবাক হন। তাই বাবা দিবস পালনের আবেদন জানিয়ে তিনি স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সোনোরা স্মার্টও নিজের বাবার জন্মদিনের দিন (৫ জুন) বাবা দিবস পালন করার অনুমতি চান। তবে হাতে সময় কম ছিলো বলে ওই বছরের ১৯ জুন এ অঙ্গরাজ্যে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়।

১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিনের তালিকায় তুলতে একটি বিল উপস্থাপন করা হয়। ১৯১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিলটি অনুমোদন করেন। সাত বছর পর, ১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম প্রেসিডেন্ট কেলভিন ক্যুলিজ বাবা দিবসকে জাতীয় দিবসের মর্যাদা দেন।

১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস বলে ঘোষণা করেন। সেই সময় থেকেই বিশ্বের সব বাবাদের সম্মানে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে বাবা দিবস।

কিছু দেশ ভিন্ন মাসের কয়েকটি ভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালন করে। কিন্তু পৃথিবীর একটি বড় অংশ যেমন- বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চিলি, কলাম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড,  ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়েসহ আরও কিছু দেশে  জুনের তৃতীয় রোববার বাবার জন্য পালন করা হয়।

বাবা দিবসে, বিশ্বের সব বাবাদের জন্য বাংলানিউজের পক্ষ থেকে রইলো অ‍ান্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।    

বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
এসএমএন/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।