মৌলভীবাজার: সকাল নয়টা থেকেই শুরু হয়ে যায় কাজ। শুরু হয়ে যায় সম্মিলিত তুমুল কর্মব্যস্ততা।
এভাবেই বছরের পর বছর ধরে শত-সহস্র চা-কন্যাদের বিরামহীন শ্রম আর ত্যাগ সমৃদ্ধ করছে চা শিল্পকে। দফায় দফায় (কর্মক্ষেত্রের গ্রুপ) হাজার হাজার নারীর হাতের স্পর্শেই জেগে ওঠে ঘুমিয়ে থাকা সবুজ চা পাতারা। তাদের হাতের রাঙা পরশেই চা-পাতা তার নিজস্ব সতেজতাকে ধরে রেখেছে দেড়শ’ বছরের বেশি সময় থেকে।
সূর্য যখন মাঝ আকাশে তীব্রতায়, তখনই তাদের বিরতি। অর্থাৎ লাঞ্চ ব্রেক। দুপুর একটা থেকে দুটো পর্যন্ত বিরতি। এক ঘণ্টার জন্য বিশ্রাম। প্রতি দফায় থাকেন একজন সর্দার। তিনি জোরে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। তখনই জড়ো হওয়ার তাগিদ। সদলবলে। চারজন, ছয়জন, আটজন বা তারও বেশি।
এই জড়ো হওয়ার অর্থাৎ, গল্প করতে করতে কিছুটা খাবার খেয়ে নেওয়া। কিছুটা জুড়িয়ে নেওয়া।
বালিশিরা ভ্যালির বিভিন্ন চা বাগানে চা শ্রমিককের এই লাঞ্চ ব্রেককে ‘পাতিচখা’ বলে। এছাড়াও ‘দানাপানি’, ‘পাতিশালা’ প্রভৃতি নামেও বলা হয়।
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল শহর সংলগ্ন কালিঘাট চা বাগানের দশ নম্বর সেকশনে ঠিক দুপুর একটায় গিয়ে হাজির। সর্দারের নাম হুর মিয়া। এ বাগানের সর্বাপেক্ষা প্রবীণ সর্দার। বয়স প্রায় ষাট। তার পরিচালিত দফায় রয়েছে পঞ্চাশ-ষাট জন নারী কর্মী। তিনি তাদের সঠিক পাতা উত্তোলনে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
হুর মিয়া কথা প্রসঙ্গে বলেন, চা-পাতার খাবার তাদের ঐতিহ্যের নির্দশন। বছরের পর বছর ধরে তারা এগুলো খেয়ে আসছে। ওরা আমাকেও প্রতিদিন এগুলো খাওয়ায়। এগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু।
কৌশিলা মুদি বলেন, ‘পাতিচখা’ তৈরিতে চা-পাতা, চানাচুর, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, লবণ ও মরিচ লাগে। প্রথমে চা গাছ থেকে কচি চা পাতা তুলে আনা হয়। তারপর আলু, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ এগুলো ‘পেস্ট’ করে ওই চা পাতার সঙ্গে মেশানো হয়।
কথা বলতে বলতে কৌশিলা, জোছনা ও নিয়তি মিলে তাদের দু’হাতে আঙুলগুলো মলা শুরু করে দিলেন। খুব অল্প সময়ের মাঝেই সবুজ চা পাতাগুলো একদম গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলো।
জোছনা বার্মিক বলেন, আমরা টিফিনের সময় আট-দশ একসঙ্গে বসে খুব মজা করে প্রতিদিন এগুলো তৈরি করি এবং রুটির সঙ্গে মিলিয়ে খাই। আমাদের সর্দার ও পানিওয়ালাকেও খেতে দেই।
পানিওয়ালা গোলাপ কুর্মি কথা যোগ করে বলেন, পাতিচখা খাবার পর অনেক পানির তেষ্টা পায়। তখন আমি সবাইকে পানি পান করাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৬
বিবিবি/এএ