আইনস্টাইনের বিখ্যাত বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বতঃসিদ্ধ : আলোর বেগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ভ্রমণ সম্ভব নয়। তার মানে হলো, আলোর চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন কোনো কণা মহাবিশ্বে নেই।
কিন্তু সেই স্বতঃসিদ্ধকে ভুল প্রমাণের দাবি করছেন একদল বিজ্ঞানী। নিউট্রিনো নামে একটি কণা আলোর চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বলে দাবি করেছেন তারা।
পদার্থবিজ্ঞানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি গ্র্যান স্যাসোর বিজ্ঞানীরা ইতালির একটি পর্বতের নিচে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, নিউট্রিনো আলোর চেয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫ হাজার ৯৯৬ মিটার বেশি বেগে চলে।
বৃহস্পতিবার বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন।
অসসিলেশন প্রোজেক্ট উইথ এমালশন-টি র্যাকিং অ্যাপারেটাস সংক্ষেপে অপেরার ওই গবেষকরা জানান, অতিপারমাণবিক কণা নিউট্রিনো নিয়ে পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে। সার্ন থেকে গ্র্যান স্যাসো ল্যাবের দিকে কণাগুলো নিক্ষেপ করা হয়। তাদের মধ্যবর্তী ৭৩০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমের সময় রেকর্ড করা হয়।
এই পথ অতিক্রম করতে ওই কণাগুলোর সময় লাগার কথা ২ দশমিক ৪ মিলি সেকেন্ড। কিন্তু তিন বছরব্যাপী ওই পরীক্ষা শুরুর পর দেখা গেলো ১৫ হাজার নিউট্রিনো কণার গ্র্যান স্যাসো ল্যাবে পৌঁছাতে সময় লেগেছে এক সেকেন্ডের ৬০ বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ। এই হিসাব অবশ্য ১০ বিলিয়ন ভাগের একভাগের মধ্যে কম-বেশি হয়েছে।
এতে প্রমাণিত হয় নিউট্রিনোর গতি আলোক কণার চেয়ে বেশি। আলোর গতি যেখানে সেকেন্ডে ২৯ কোটি ৯৭ নব্বই লাখ ৯২ হাজার ৪৫৮ মিটার সেখানে নিউট্রিনোর গতি সেকেন্ডে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫৪ মিটার।
তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলে অবশ্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভড়কে গিয়েছিলেন। তারা বুঝতে পারছিলেন না এই ফলাফল কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
এখন এই অভিনব আবিষ্কারটির স্বীকৃতির জন্য বিশ্বের অন্য ল্যাবরেটরির পর্যালোচনার ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এই আবিষ্কার যদি শেষ পর্যন্ত নির্ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার স্বতঃসিদ্ধ অনুযায়ী অনেক অসম্ভব হয়তো সম্ভব হবে। হয়তো মানুষ এবার তার অতীতেও তথ্য পাঠাতে সক্ষম হবে, পদার্থবিজ্ঞান যা কখনোই সমর্থন করেনি। অতীত আর বর্তমানের মধ্যকার এতোদিনের বিভেদ-প্রাচীর থাকবে না। এতে করে যা হবে তা হলো, কার্যকারণের মৌলিক নীতিরই পরিবর্তন ঘটবে!
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১১