জি বাংলার জনপ্রিয় কমেডি শো ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার-৫’ এ ২০১০ সালে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের প্রতিযোগিরা অংশগ্রহণ করে। প্রথমবারই বাংলাদেশের প্রতিযোগি কিশোরগঞ্জ ভৈরবের ফারজানা সাগির শশী ফাইনাল রাউন্ডে যাওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
কিভাবে এই কৌতুকের সাথে আপনার সম্পর্ক তৈরি হলো? আগে থেকেই চর্চা করতেন নাকি হুট করেই শুরু করা?
শশী: বাংলাভিশনে ২০০৭ সালে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হয়েছিল ৫ কি ৬ পর্বের ‘রসিক রাজ’ নামে। সেখানেই আমি প্রথম কমেডি পারফর্ম করি। এরপর সরাসরি অডিশন দিয়ে ২০১০ সালে মীরাক্কেলে চলে যাই এবং সেখানে গ্রুমিংয়ের সময়ই কমেডি কিংবা কৌতুক সম্পর্কে শিখেছি। এর আগে কখনো চর্চা করিনি। তাই এটাকে হুট করে বলা যেতে পারে।
মীরাক্কেলে যাওয়ার আগে আপনি কি বাংলাদেশের কোথাও কোন স্টেজ পারফরমেন্স করেছেন?
শশী : না, তখন পর্যন্ত কৌতুকের বড় কোন স্টেজ পারফরমেন্স করিনি। তবে শুরুতেই বলেছি, টিভিতে বাংলাভিশনের ‘রসিক রাজ’ দিয়েই শুরু। আমি ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিনয়, গান ও নাচের পারফর্ম করেছি।
কৌতুক নিয়ে বাংলাদেশে উল্লেখ করার মতো কাজের কোন প্ল্যাটফর্ম নেই। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
শশী : এখন নেই সত্যি। কিন্তু অবশ্যই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে। কারণ যেহেতু আমরা বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অন্য দেশে গিয়ে অনেক ভালো কাজ করছি সেহেতু প্ল্যাটফর্ম অবশ্যই তৈরি হয়ে যাবে। এখনই আমি কিছু কিছু কাজের অফার পেয়েছি। তবে বর্তমানে মীরাক্কেল-৬ নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাওয়া আসা করতে করতে অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় পাচ্ছি না। আসলে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, এই প্ল্যাটফর্ম আমাদেরই তৈরি করে নিতে হবে। আর আমাদের দেশে অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। সেগুলোও মাথায় রাখতে হবে।
আপনার মীরাক্কেলে যাওয়ার গল্পটা একটু সংক্ষেপে বলুন।
শশী : ২০১০ সালে আমি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে রেজিস্ট্রেশন করি তারপর অডিশন দেই। অডিশনে টিকে ভারতে গেলাম, সেখানে গিয়ে গ্রুমিং থেকে অনেক কিছু শিখলাম। অবশেষে পারফর্ম করলাম। খুবই সাধারণ গল্প।
মীরাক্কেল-৫ এর সময় ভারতে কেমন সময় কেটেছে?
শশী : আমরা তো সেখানে একটি পরিবারের মত ছিলাম। প্রথমে যখন বাংলাদেশ ছেড়ে গেলাম দেশের সবার জন্য খুব মন খারাপ লাগতো। তবে সেখানে সবার সাথে সময় কাটাতে কাটাতে সবকিছুই খুব দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যে এত মায়া হয়ে গিয়েছিল ফিরে আসার সময় অনেক কান্না করেছিলাম।
আপনি যখন মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার-৫ এ ৩য় হলেন, তখনকার অনুভূতি যদি একটু বলেন।
শশী : আসলে সেই সময়ে আমার কিছুই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ, অনুষ্ঠানতো করছি অন্য দেশে গিয়ে। ফাইনালে হয়ত যাব এতটুকু আশা ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩য় হওয়াটা আমার কাছেই অবিশ্বাস্য লাগছিল।
এখনতো আপনি শুধু মীরাক্কেলের শশী ছাড়াও অভিনয়ও করছেন। সবকিছু মিলিয়ে কেমন উপভোগ করছেন এই সময়টা?
শশী : হ্যাঁ, মীরাক্কেলের কারণে আজ আমি অনেক কিছুর সাথেই সম্পৃক্ত। তবে এতকিছুর পরও সবাই বলে, ‘আপনি মীরাক্কেলের শশী না?’ এ পরিচায়টাই আমার সবচে বেশী ভালো লাগে। এ পরিচয়টি আমার কাছে উপভোগ্য মনে হয়।
আপনি পড়াশোনা কোথায় করছেন?
শশী : আমি বাংলায় পড়ছি ইডেন কলেজে। মাত্র তৃতীয় বর্ষে উঠলাম।
আপনি এখন স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয় একজন মানুষ। ক্লাসে বন্ধুরা বা আপনার শিক্ষকরা বিষয়টা কিভাবে দেখেন?
শশী : সত্যি কথা বলতে কি, আমার বন্ধুরা, শিক্ষকরা সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেন। আমাদের কলেজের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও আমার বান্ধবীরা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেয়। যেমন, আমি কাজের কারণে নিয়মিত ক্লাস করতে পারি না, সেই ব্যাপারটাও ছাড় দেন। আবার আমার বান্ধবীরাও সমস্ত নোট ও সাজেশন আমার জন্য সংগ্রহ করে রাখে। জনপ্রিয়তা কাছের মানুষের কাছে কোন বিষয় না। তাদের কাছে আমি শুধুই শশী।
আপনার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে?
শশী : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্রামের বাড়ীতেই আমার ছোটবেলা কেটেছে। স্কুল-কলেজ সবকিছুই ভৈরবে।
প্রতিটি মানুষই তো স্বপ্ন দেখে। আপনার স্বপ্নগুলো কি স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের সাথে শেয়ার করবেন?
শশী : অবশ্যই। আমার স্বপ্ন হচ্ছে, সবাই যেন আমাকে এক নামে চেনে। সেটা কমেডির মাধ্যমেই হোক আর অন্য অভিনয়ের মাধ্যমেই হোক। এমন কাজ করে যেতে চাই, যেন মারা যাওয়ার পরও সবাই আমার কাজকে মনে রাখে।
এছাড়াও ভবিষ্যতে আমি বাংলাদেশে মীরাক্কেল স্ট্যান্ডার্ড কমেডি শো করতে চাই। এখনও আমাদের দেশে অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। যেহেতু আমরা মীরাক্কেলের মত অনুষ্ঠান দেখে অভ্যস্ত; সেহেতু অন্যগুলো একটু কেমন যেন লাগে। আর এর জন্য দরকার ভিন্ন আইডিয়া। আর আমি সেই ভিন্ন আইডিয়াটিই নিয়ে আসতে চাই।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শশী : আপনাকেও ধন্যবাদ।