ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নকিয়া : কাগজ থেকে টেলিকমের চূড়ায়

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪০, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১
নকিয়া : কাগজ থেকে টেলিকমের চূড়ায়

বর্তমানে জনপ্রিয় মোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নকিয়া শুরুতে ছিল কাগজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, একসময় পৃথিবীতে কাগজ ব্যবসায় অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত ছিল নকিয়া। নকিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নুট ফ্রেডরিক ইডেসটাম।



ফ্রেডরিকের জন্ম ১৮৩৮ সালের ২৮ অক্টোবর। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাবার সরকারি চাকরিকে খুবই সম্মানজনক হিসেবে দেখতেন। তিনিও চাইতেন বাবার মতই একদিন সরকারি চাকরি করবেন। সে লক্ষ্যে পড়াশোনার প্রতি তার বিশেষ ঝোঁক ছিল। সে সময়েই তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ফ্রেডরিক ফিনল্যান্ডের বোর্ড অব মাইনসে চাকরি নেন ১৮৬৩ সালে। এরপর সরকারি বৃত্তি নিয়ে জার্মান চলে যান মেটালের ওপর পড়াশোনা করতে। পড়াশোনা শেষ করে তিনি আবার ফিনল্যান্ড ফিরে এসে ফিনিশ বোর্ড অব মাইনসের প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পান।

কিন্তু নতুন ইতিহাসের সূচনা হয় তার কিছুদিন পরেই। তিনি জার্র্মানিতে থাকা অবস্থাতেই ঘুরতে গিয়েছিলেন কাগজ তৈরির কারখানায়। সেখানে তখন নতুন প্রযুক্তিতে কাঠ থেকে কাগজ প্রস্তুত করা হচ্ছিল। সে সময় কাগজ পৃথিবীতে বহুল ব্যবহৃত পণ্য হলেও উৎপাদন ছিল খুবই কম। তাই ১৮৬৪ সালেই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ফ্রেডরিক উপলব্ধি করেন,  ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় কাগজের প্রচুর চাহিদা। তাছাড়া কাঠ থেকে কাগজ উৎপাদন পদ্ধতিটিও সে সময় বিশ্বে নতুন। তিনি ফিনল্যান্ডে এ আবিষ্কারকে  নিয়ে আসতে পারলে ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে ধারণা করেছিলেন।

চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন কাঠের। শুরুতে তিনি ফিনল্যান্ডের যেসব প্রতিষ্ঠানে পণ্য উৎপাদন করতে কাঠের প্রয়োজন হয়, সেগুলোতে কাঠ সরবরাহ করতেন। তবে কাঠের মার্কেটটাকে বোঝার জন্যই এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর কাগজ  উৎপাদন মেশিন কিনে আনেন জার্মানি থেকে। তার আগে কাগজ উৎপাদন শুরু করার জন্য তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিক করেন। নাম দেন নকিয়া।

১৮৬৫ সালের ১২ মে নকিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর পরের বছর থেকেই বাজারে চলে আসে নকিয়ার তৈরি কাগজ।

ধীরে ধীরে ব্যবসা সম্প্রসারণের পর ফ্রেডরিক অনুভব করেন মালিকপক্ষে আরেকজন নিতে। কারণ একার পক্ষে তিনি সব সামাল দিতে পারছিলেন না। তাই তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিও মেকালিনকে ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে নেন। সে সময় লিও ছিলেন ফিনল্যান্ডের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। লিওই প্রথম নাকিয়া লিমিটেড কোম্পানি নাম দিয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেন। নতুন নতুন আরও প্রতিষ্ঠান ফিনল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় তারা দুই বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন।  

সফলতার শিখরে পৌঁছে ফ্রেডরিক একসময় অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ততদিনে নকিয়ার কাগজ রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মার্কেটে দাপটের সাথে প্রবেশ করে ফেলেছে। ফ্রেডরিক ১৮৯৬ সালে তার নাতির হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে অবসরে চলে যান। ১৯১৬ সালের ৮ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তবে তার মৃত্যুর আগেই ১৯০২ সালে নকিয়া শুরু করে ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবসা। ভিন্ন এ ব্যবসায় প্রবেশের সাথে সাথে নকিয়া নতুন দিগন্তে প্রবেশ করে, যার সূত্র ধরে ১৯৬৮ সাল থেকে তাদের ব্যবসার মোড় ঘুওে যায় টেলিকমিউনিকেশনের দিকে। রেডিও টেলিফোন প্রতিষ্ঠান মোবিরার সাথে যৌথভাবে ফিনিশ টেলিভিশন প্রস্তুত শুরু করে নকিয়া। পরে ১৯৮১ সালে নকিয়া ডিএক্স২০০ নামে প্রথম ডিজিটাল টেলিফোন বাজারে নিয়ে আসে।

পরের গল্পগুলো সবারই জানা। বর্তমানে বিশ্বে মোবাইল ব্যবহারকারীদের প্রথম পছন্দ নকিয়ার তৈরি মোবাইল সেট। শুধু তা-ই নয়, আজকে যে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের হাতে খুব সহজলভ্য সেলুলার ফোন, সেটির বিস্তারে নকিয়ার একক অবদান অনেক বড়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।