ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সৌভাগ্য নিয়ে দেবী আসছেন

সুকুমার সরকার, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৬, অক্টোবর ১, ২০১১
সৌভাগ্য নিয়ে দেবী আসছেন

এবার মা দুর্গা গজে অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মর্ত্যে আসছেন। আর কৈলাসে ফিরবেন দোলায় চড়ে।

গজ হলো মায়ের পবিত্র বাহন। প্রতিবছর মা দুর্গা কোনো নাকোনো বাহনে করে মর্ত্যে আসেন। এবং যে কোনো বাহনে চড়ে কৈলাসে ফেরেন।

দেবীর আগমন ও গমন নিয়ে এই পৃথিবীতে নানা ঘটনা ঘটে থাকে বলে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন।

দেবীর গজে আগমনের অর্থ হলো এই বসুন্ধরা এবার শস্যপূর্ণ হবে। অর্থাৎ সৌভাগ্যের সূচক। আর দোলায় গমন অর্থ হলো পৃথিবীতে ঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ধ্বংস-প্রলয় আর মড়কের ইঙ্গিত।

মা দুর্গার গজ ও দোলা ছাড়া আরও দুটি বাহন আছে। এগুলো হলো ঘোড়া ও নৌকা। দেবীর ঘোড়ায় চড়ে আসার অর্থ যুদ্ধ, খরা আর দুর্ভিক্ষ। আর নৌকায় করে কৈলাসে ফেরার ইঙ্গিত দেয় বন্যা।

এগুলোই যদি দেবীর মর্ত্যে আসা আর কৈলাসে ফেরার বাহন হয়, তবে সিংহ গেল কোথায়। কেননা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানেন দেবীর বাহন হচ্ছে সিংহ।

ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে যখন দেবতাদের তেজঃপুঞ্জ থেকে নির্মিত হয়েছিল দেবী দুর্গার শরীর, তখন হিমালয় দেবীকে বাহন হিসেবে দিয়েছিল একটি সিংহ।

কিন্তু এখন সেই সিংহের ভূমিকা তাহলে কী? সে কেন তাহলে দেবীর মর্ত্যে আসা ও কৈলাসে ফেরার সময় বাহন হয় না।

এর উত্তর মেলে দুই প্রাচীন গ্রন্থ ‘ব্রহ্মা-পুরাণ’ ও ‘ভগবতীদত্তম’-এ।

ব্রহ্মা-সৃষ্টিকারী ব্রহ্মার দশটি দেবশিশু ছিল। এ রকমই এক দেবশিশু মরীচীর নাতি ‘কাম-ক’ কঠোর তপস্যা করে দেবীকে তুষ্ট করেন। আর দেবী তাকে বরদানের জন্য মর্ত্যে আসেন।

অসুরদলনী দেবীর  রণসাজ সজ্জিত ঐশ্বর্যমণ্ডিত রূপ দেখে ঘাবড়ে যায় ভক্ত কাম-ক। তারই অনুরোধে মা দুর্গা মর্ত্যে মাতৃরূপিণী হয়ে আসার অভয় দেন।

তারপর থেকেই দেবী সিংহ ছেড়ে মর্ত্যে আসা-যাওয়ার সময় বাহন হিসেবে বেছে নেন গজ, দোলা, নৌকা ও ঘোড়া।

রোববার শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা ।   সাড়ম্বরে পূজা উদযাপনের জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ।

এবার দেশে প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এবার মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার। রাজধানীতে এবার ১৯৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। নানা আয়োজনে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মহাখালী, মিরপুর বিভিন্নস্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

পূজার অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে রয়েছে ২ অক্টোবর রোববার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারাম্ভ, ছায়াকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান।

৩ অক্টোবর সোমবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা আরম্ভ ও বস্ত্র বিতরণ।

৪ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ ও মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ। সন্ধিপূজা রাত্রি ১টা ২১ মিনিট থেকে ২টা ৯ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

৫ অক্টোবর বুধবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী বিহিত পূজা আরম্ভ এবং সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা।

৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন। স্বেচ্ছায় রক্তদান দুপুর ১২ টায়। বিজয় শোভাযাত্রা বিকেল ৪ টায়।

পূজা শেষে প্রতিদিন সকালে প্রত্যেক পূজামণ্ডপে অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ ও আরতি অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭  ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।