ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

শুধুই হাসি: ইসতিয়াক নাসির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২১, অক্টোবর ১, ২০১১
শুধুই হাসি: ইসতিয়াক নাসির

ভারতের জি বাংলার জনপ্রিয় কমেডি শো ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার-৬’ - এ বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিযোগী হচ্ছেন বাংলাদেশের ইসতিয়াক নাসির রাজন। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে স্ট্যান্ডআপ কমেডিকে জনপ্রিয় করার ও ভবিষ্যতে বিশ্বের সেরা ১০ জন কমেডিয়ানের তালিকায় নিজেকে নিয়ে যাওয়ার।

মীরাক্কেলে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভের পর প্রথমবারের মত তিনি মুখোমুখি হয়েছেন কোন সংবাদমাধ্যমের।

তার সাথে কথা বলেছেন একেএম ফয়জুল ইসলাম

কমেডির সাথে আপনার সম্পর্কের শুরুটা কিভাবে?

ইসতিয়াক : একদিন শুনলাম বাংলাদেশে প্রথমবারের মত একটা কমেডি ক্লাব চালু হয়েছে। সেটা বারিধারায় ‘নাভিদ’স কমেডি ক্লাব’ নামে। একদিন দেখতেও গেলাম। ওই সময় ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ‘লাস ভেগাস কমেডি ফেস্টিভ্যাল ২০০৭, ইউএসএ’ -এর চ্যাম্পিয়ন নাভিদ মাহবুব ভাই নিজেই পারফর্ম করছিলেন। হঠাৎ তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যদি কেউ কিছু বলতে চান বলতে পারেন। ’ কেউ তখন কিছু বলল না দেখে, আমি নিজেই স্টেইজে গেলাম। স্টেইজে উঠে ঢাকার বাসে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করলাম। ব্যাস।   স্টেজ থেকে নামার পর নাভিদ ভাই আমাকে বললেন, ‘তুমি কমেডিটা কন্টিনিউ কর। ’ ঐ থেকেই শুরু। আর মীরাক্কেলে এসেছি নিজেকে আরো ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য।

মীরাক্কেলে যাওয়ার আগে বাংলাদেশে কোন কমেডির স্টেইজ পারফর্ম করেছিলেন?

ইসতিয়াক : আমি নাভিদ’স কমেডি ক্লাবে পারফর্ম করি। গত এক বছর ধরে সেখানেই পারফর্ম করছি। ঐ ক্লাবের শুরু থেকেই আমি সেখানে পারফর্ম করছি। বলতে পারেন, কীভাবে পারফর্ম করতে হয় সেটাও শিখেছি কমেডি ক্লাব থেকে।

আপনার দেশের বাড়ি কোথায়? ছোট বেলা কোথায় কেটেছে?

ইসতিয়াক : আমার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া। তবে এখন আমাদের পরিবার গাজিপুরে স্থায়ী। আমি ঢাকার উত্তরায় একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি। আর ছোটবেলা বলতে, আমার বাবা সরকারি চাকরিতে ছিলেন সেই সুবাদে বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলায় ভ্রমণেরও সুযোগ আমার হয়েছে।

আপনার পড়ালেখার কথা বলুন। কোথায় পড়ছেন?

ইসতিয়াক : আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছি। এখন এমবিএ শুরু করবো।

শেষ পর্যন্ত মীরাক্কেল-৬ এর কোন অবস্থানে নিজেকে আশা করছেন?

ইসতিয়াক : অবশ্যই আমি মীরাক্কেল-৬ এ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরতে চাই। এছাড়া কোন দ্বিতীয় পথ আমার কাছে নেই।

এতদূর পর্যন্ত আসার পেছনে আপনাকে কেউ কি অনুপ্রাণিত করেছে?

ইসতিয়াক : মীরাক্কেলে যারা গ্রুমার- সৌরভ, রাজিব, ডা. কৃষ্ণেন্দু, শুভদীপ এবং অর্ণব। এই ৫জনই আমার এতদূর পর্যন্ত আসার মূল প্রেরণা। তারাই আমাকে শেখায়। আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়। কীভাবে কথা বলতে হবে; সবকিছুই তারাই বলে দেয়। সবসময় এ মানুষগুলো আমাদের সবার পাশে থেকে উৎসাহ দেয়।

মীরাক্কেলের কারণে আপনার একটা জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। কেমন উপভোগ করছেন এই নতুন পরিচয়টিকে?

ইসতিয়াক : আমি নিজেকে কখনোই জনপ্রিয় ভাবি না। আগে যেমন ছিলাম এখনও তেমনই আছি। তবে হ্যাঁ, এবার মীরাক্কেল-৬ এ আমাদের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি হয়েছে; সেটা আমি বুঝি। কারণ রাস্তায় বের হলে লোকজন ঘিরে ধরে, অটোগ্রাফ চায়, ছবি তোলে। ভালো তো লাগেই। মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি, এরচেয়ে বড় আর কিছু জীবনে আশা করি না।

কমেডিতে এবং ব্যক্তিগত জীবনে আপনি আইডল হিসেবে কাদের অনুসরণ করেন?

ইসতিয়াক : বাংলাদেশে নাভিদ’স কমেডি ক্লাবের নাভিদ মাহবুব ভাই আর ভারতে মীরাক্কেলের মীর আফসার আলী।

কমেডি নিয়ে আপনার স্বপগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?

ইসতিয়াক : অবশ্যই। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশে ‘স্ট্যান্ড আপ’ কমেডিকে জনপ্রিয় করে তোলার। আমার দেশের মানুষ শুধু কষ্টে কেন থাকবে? শুধু মারামারি, হানাহানি, খারাপ খবর এই সব নিয়ে কেন মাথা ঘামাবে? তাদেরও হাসা প্রয়োজন। ভারতে এসে একটা জিনিস শিখেছি; এ দেশের মানুষ মজা করতে জানে। হোক তা সিনেমা দেখে, হোক তা টিভি দেখে, হোক তা অন্যরকম ফূর্তি করে। এই ব্যাপারটা ভারতকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। যে কোন মানুষের জীবনে ‘হাসি’ গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুভূতি। দুঃখ-বেদনায় কাতর মানুষগুলো আমি চিরজীবন হাসাতে চাই। অন্তত তারা যেন আমার মাঝে হাসি খুঁজে পায়। এমনটাই আমার স্বপ্ন।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? ভবিষ্যতে কমেডি ছাড়া আর কি করার ইচ্ছা আছে?

ইসতিয়াক : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে বাংলাদেশে ফিরে আবারো নাভিদ’স কমেডি ক্লাবে যোগ দেব। আর যদি পারি বাংলাদেশেও মীরাক্কেলের মত একটা কমেডি শো করার চেষ্টা করবো। আর নিজের ব্যাপারে একটাই কথা, আমি একজন সফল ও পেশাদার স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই; শুরুতেই বলেছি।

নতুন যারা কমেডিতে আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?

ইসতিয়াক : কেউ যদি মনে করেন কমেডি করার মত যোগ্যতা নিজের মধ্যে আছে; তাহলে বলবো আয়নার সামনে দাড়িয়ে অনুশীলণ করতে। কমেডি শোগুলো দেখতে। মজা করার লেভেলটাকেও বোঝা জরুরি। তাছাড়া আমাদের নাভিদ’স কমেডি ক্লাবের দরজা সব সময় খোলা। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ সেখান থেকেই শুরু করা যায়।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ইসতিয়াক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।