এ অঞ্চলে চলাচলের সময় একবার উঁচুতে উঠতে হয়, আবার নামতে হয় নিচুতে। পাহাড়ি পথে চলার অভ্যাস না থাকায় বিদ্রোহ করে ওঠে পা দু’টো।
সোমবারের (৫ ফেব্রুয়ারি) সূর্যটা হেলে পড়ছে কালিঞ্জী পুঞ্জির দিগন্তে। প্রতিবেদন সংগ্রহের কাজে আরও একটি ব্যস্ত দিন ছিল সেটা।
কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি জনপদ পুঞ্জি। সমতল ভূমি থেকে প্রায় পাঁচশত ফুট উপরে এর অবস্থান। এখানে প্রায় অর্ধসহস্র মানুষের বসবাস। এখান থেকে দেখা যায় দূরের পাহাড়গুলো। সেখানে কুয়াশা জমাটা বাঁধতে শুরু করেছে।
ফিরে আসার সময় হয়ে এসেছে। পুঞ্জির জরাজীর্ণ একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণা নিবারণের চেষ্টা চলে। বৃত্তাকার বিস্কুট মুখে নিয়ে গরম চায়ে চলছে চুমুক। এলাকাবাসীর সঙ্গে এটা-ওটা আলাপের ফাঁকে দ্রুত ফুরচ্ছে চা।
চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে দেখা গেল, পুঞ্জির ঐতিহ্যবাহী একটি দৃশ্যপট। শেষ বিকেলে সন্তানকে পিঠের সঙ্গে বেঁধে ভ্রমণে বের হয়েছেন পিতা। শিশুটিও পিতার পিঠের সঙ্গে পরম মমতায় লেপটে রয়েছে।
সন্তানের নাম জিজ্ঞেস করতেই গালভরা হাসি পিতার। অল্পক্ষণ পর নিজ থেকেই বলেন, অয়ন্তি। কান্নাকাটি করছিল বলে তাকে নিয়ে বিকেলে একটু ঘুরতে বের হয়েছি। এ কথা বলেই আপন পথে হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে গেলেন তিনি।
খাসিয়ারা কাপড় দিয়ে এমন আশ্চর্যভাবে তাদের সন্তানদের পিঠের সঙ্গে বেঁধে রাখেন যে, শিশুরা একটু্ও কাঁদে না, একটুও নড়াচড়া করে না। এ যেন এক আশ্চর্য!
ফিরে আসার সময় রাস্তায় ফুলের মতো ফুটে ঝিলিক দিয়ে উঠলো আরও একজন অয়ন্তি! কালিঞ্জীর উঁচু-নিচু পাহাড়ি এলাকায় ছোটাছুটি করছে সে। তার লাজুক চোখে বিস্ময়, মুখে মৃদু হাসি।
খাসি শিশুদের এমন ছোটাছুটি আর লাজুক হাসি যেন পাহাড়ি প্রকৃতিরই একটি অংশ। বিকেলের শেষ মুহূর্তে পরিপূর্ণ করে দিল অয়ন্তিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
বিবিবি/এনএইচটি