শরতের শুভ্রতায় কাশবনের মাথায় আলুথালু হাওয়ার দোল। উপরে শুভ্র তুলোর মতো মেঘের ভেতর থেকে হঠাৎ যেন বেরিয়ে আসে ঝাঁক বাধা বক।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অ্যাপলো হাসপাতালের পাশে ঠিক তেমনি দেখা মিলে একদল বকের। সন্ধ্যা নেমেছে, কি একটু বাকি। অথবা বিকেলটা গড়িয়েছে মাত্র, তার মধ্যেই এখানে এসে জড়ো হয় এক, আবার কখনোবা একাধিক বকের ঝাক। দিনশেষে পুরো আকাশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে চক্কর দিয়ে জানান দেয় নিজেদের অস্তিত্ব। সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয় নিজেদের দুষ্টুমতি স্বর আর শুভ্রস্নিগ্ধ সাদা পালকের মুগ্ধতায়।
সাদা রঙের এ ঝাঁকে প্রায় শতাধিক বক। কারো গলা লম্বা, আবার কারোটা একটু ছোট। কোনটা সাদা ধবধবে, আবার কোনটার গায়ে আছে একটু ধূসর রঙের ডোরাকাটা দাগ। কেউ আগে, কেউবা একটু পিছিয়ে। তবে সবাই একই বৃত্তে। নিরন্তর চক্রাকারে ঘুরছে সব্বার সামনে থাকা দলের প্রথম জনকে অনুসরণ করে।
বিকেলের কসরত শেষে তারা বিশ্রাম নেয় নিম আর কাঁঠালের ডালে বসে। গল্প জুড়ে দেয় আপন মনে। প্রিয় সঙ্গীটির কাছে মেলে ধরে সারাদিনের শত কথার ঝাঁপি। কেউ কেউ আবার লম্বা ঠোটে নিজেদের পরিপাটি করতে পার করে ব্যস্ত সময়। সাদা ডানা ঝাপটিয়ে একে অপরের কাছে জানান দেয় নিজের উপস্থিতির।
সাদা রঙের এ বকগুলো মাছ ভালোবাসলেও অন্যসব বকের মতো জলে থাকতে পছন্দ করে না। এরা একা অথবা দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়। বাস করে বাগানে, ঝোপ ঝাড়ে আর পরিত্যক্ত গাছ গাছালিতে। এরা পোকামাকড়, বিশেষ করে ঘাসফড়িং খেতে ভালোবাসে। হলুদ রঙের ছুরির মতো শক্ত ও সুঁচাল ঠোট, পিঠ-গলা ও মাথায় কমলা আর সোনালি রঙের মিশ্রণ এদের দিয়েছে অনন্য এক সৌন্দর্য।
অ্যাপলো হাসপাতালের পাশে এ বকের ঝাঁক দেখতে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ভিড় জমান অনেকেই। রোববার (১১ মার্চ) কথা হলো পাখিপ্রেমী সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বললেন, এখানে মাঝে মাঝেই দেখা মেলে এ বকগুলোর। বিকেলে আসে, রাতে থাকে, আবার সকালে উড়ে যায়। তবে প্রায়ই দেখা গেলেও এরা নিয়মিত এখানে আসে না। আর এদের দেখে প্রকৃতিপ্রেমীসহ হাসপাতালের অনেক রোগীও একটু শান্তির নিশ্বাস ফেলেন!
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ