ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

যদি কিছু হয় এই আশায় সার্কাস নিয়ে পড়ে আছি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
যদি কিছু হয় এই আশায় সার্কাস নিয়ে পড়ে আছি ‘দি কাঞ্চন সার্কাস’ দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগে বেশ সমাদৃত

ব‌রিশাল: বরিশাল নগরের মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএ’র মেরিন ওয়ার্কশপ মাঠে চলছে ১৫তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলার মাঠের উত্তর পূর্ব দিকে আয়োজন করা হয়েছে সার্কাসের। ‘দি কাঞ্চন সার্কাস’ দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগে বেশ সমাদৃত। যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে খেলা দেখার আয়োজন করে এখনো।

তবে হালের সঙ্গে তেমন একটা ভালো দিন কাটাচ্ছে না সার্কাসের আয়োজক, খেলোয়াড়-শিল্পীরা। আশানূরূপ দর্শক না পেয়ে অনেকটাই হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সবাই।

 

পটুয়াখালী জেলার বাসিন্দা ও দি কাঞ্চন সার্কাসের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আলম বাংলানিউজকে বলেন, যদি কিছু হয় এই আশায় সার্কাস নিয়ে পড়ে আছি। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়াসহ বিভিন্ন কারণে দিনে দিনে এর দর্শক কমেয যাচ্ছে।  

তবে সব অঞ্চলেই একই অবস্থা নয়, যেমন দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ গ্রামীণ জনপদগুলোতে সার্কাসে বেশ ভালো দর্শকই হয়। সে হিসেবে শহুরে এলাকা যেমন বরিশালে সার্কাসে তেমন একটা লোক সমাগম শুরু থেকেই হয়না। এখানে দৈনিক ব্যয়ের সঙ্গে আয় সামঞ্জস্য রাখাটাই দায় হয়ে গেছে।

আবার বর্তমান সময়ে নানান জটিলতায় সার্কাস চালানোর অনুমতি পাওয়াটাও বেশ দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে সার্কাসের অনুমতি চাইলেই পাওয়া যেতো, কিন্তু এখন পাওয়া যায় না। তাই বছরে সার্কাস শো’র পরিমাণ কমে গেছে।  

দি কাঞ্চন সার্কাস সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা নারায়ণগঞ্জ থেকে পাওয়া প্রথম সার্কাসের লাইসেন্স। যা স্বাধীনতার কয়েকবছর পর যাত্রা শুরু করে। পরিচালনা নিয়ে ঝামেলা দেখা দিলে ২০০৭ সালের দিকে হাজী মকবুল হোসেন আমার ছোটভাই মীর দেলোয়ার হোসেনকে এটি দিয়ে দেন। সেই থেকে পটুয়াখালী থেকেই আমরাই এই সার্কাস পার্টির পরিচালনা করে আসছি। অবসরে যাওয়ার পর বসে না থেকে আমিও এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছি।

‘দি কাঞ্চন সার্কাস’ দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগে বেশ সমাদৃততিনি বলেন, প্রতিবছর কার্তিক-জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত সার্কাসের কাজ হয়, সাতক্ষীরার মানুষ সার্কাসের খেলা দেখাতে বেশি পারদর্শী। দেশে আন্তর্জাতিকমানের শিল্পী রয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প বহুদূর এগিয়ে যাবে।

লাখ লাখ টাকার পুঁজি খাটিয়ে ১৯/২০ করে দিন পার করতে হচ্ছে জানিয়ে সুপারভাইজার মো. সেকান্দার হাওলাদার বলেন, প্যান্ডেলে যে শোতে ২/৩ হাজার লোক হয় সেই শোতে সবার মন ভালো থাকে। কিন্তু যখন তা ২/৩ শ’তে নেমে যায় তখন সবার মন খারাপ থাকে। আর এখন বরিশালে তো ২/৩ শ’জনের বেশি লোক হয় না। গত কয়েকদিনের শোতে দৈনিক ব্যয়ের টাকাই তোলা সম্ভব হয়নি।  

তিনি বলেন, বর্তমানে এই সার্কাসের ৩ ঘণ্টার একটি শোতে ১২০ জনের মতো লোক একত্রে কাজ করে। সার্কাসে জাতীয় জাদু প্রদর্শন, হাইপাল্টি, ঝুলনার মৃত্যুকুপ, আগুনের নৃত্য ও আগুন খাওয়া, চায়না ও কোরিয়ান খেলা, হাতি, ঘোড়া, ছাগল, কুকুরের খেলা, ত্রিফলা বর্শা, ড্যাগার বোর্ড খেলা, রিং ড্যান্স, স্ক্যাটিং খেলা, জীবন্ত সাপ খাওয়া, জীবন্ত শিং মাছ খাওয়া ও বের করাসহ ৭০টির মতো খেলা দেখানো হয়। তবে আগে যেমন ভাল্লুকের খেলা দেখানো হতো এখন আর তা হয়না, কারণ ভাল্লুক আনার অনুমতি দেয় না সরকার।  

সার্কাসের পরিচালক মীর দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিল্পটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। তবে বর্তমান সরকারের কারণে শিল্প বাণিজ্য মেলায় সার্কাস প্রদর্শন করা হচ্ছে। এখন দর্শক এইমুখী হলেই হারানো জৌলুস ফিরে পাবে সার্কাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।