শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় খুলনার জাতিসংঘ শিশুপার্কে বর্ষ বিদায়ের (চৈত্র সংক্রান্তি) অনুষ্ঠানে লাঠি খেলা দেখে দর্শকদের চোখেমুখে মুগ্ধতার ছাপ দেখা গেছে।
লাঠি খেলার মধ্যে ২ লাঠি, ৪ লাঠি, শর্কি খেলা, তলোয়ার খেলা, ছুরি খেলাসহ আরো অনেক খেলা দুই দলে বিভক্ত হয়ে প্রদর্শন করেন লাঠিয়ালরা।
লাঠি খেলার সময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা রীতিমতো মুগ্ধ এই খেলা দেখে। খেলার বিভিন্ন সময়ে মুহুর্মুহু করতালি আর উচ্ছ্বাস তারই প্রমাণ দেয়।
ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচানাচি। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টানটান উত্তেজনার এ খেলায় হাজার হাজার দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন।
ছোট ভাইকে নিয়ে খেলা দেখতে আসা তানিয়া বলেন, কখনও লাঠি খেলা দেখার সুযোগ হয়নি। তাই ছুটির দিনে ছোট ভাইকে নিয়ে লাঠি খেলা দেখতে এসেছি। খুব ভালো লেগেছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চার দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও চৈত্র সংক্রান্তির এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে আব্বাসউদ্দীন একাডেমি। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ।
ঐহিত্যবাহী এই জনপ্রিয় লাঠি খেলাটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ আয়োজন বলে জানান আব্বাস উদ্দীন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু।
মোরগ লড়াই-সাপখেলা দেখতে খুবিতে মানুষের ঢল
তিনি বলেন, শহরের অনেকেরই এই খেলাটি দেখার সুযোগ হয়নি। বর্তমান সময়ে গ্রামে গ্রামে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় আগের মতো আর নিয়ে আসা হয়না লাঠি খেলার দলকে। যার কারণে সচরাচর চোখে পড়ে না এই খেলাটি। যে কারণে আমরা চার দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার প্রথম দিন দর্শকদের লাঠি খেলা দেখার আয়োজন করেছি।
খেলায় অংশ নেওয়া নড়াইলের বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ লাঠিখেলা ও সাংস্কৃতিক ক্লাবের পরিচালক বাচ্চু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, লাঠি খেলার সঙ্গে জড়িত অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে এই খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু আমরা চার প্রজন্ম ধরে বাপ দাদার পেশা হিসেবে লাঠি খেলাকে এখনও ধরে রেখেছি। এক সময় বিভিন্ন মেলা ও গ্রাম্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খুবই কদর ছিল এই লাঠি খেলার। কিন্তু কালের পরিবর্তনে এ খেলা আজ বিলুপ্ত প্রায়।
ক্লাবের সভাপতি আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, লাঠিয়াল দল হিসেবে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়ায় খেলা দেখাতে যাই। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে খেলাটি দিনদিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না কোনো নতুন খেলোয়াড়।
ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গ্রামবাংলার এ খেলা ধরে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
এমআরএম/জেডএস