ওপেন টু বাইস্কোপ, ইচিং বিচিং কিচিং চা, প্রজাপ্রতি উড়ে যা, কানা মাছি বো বো, গোল্লা ছুট, মোরগ যুদ্ধ, কুঁতকুঁত ইত্যাদি যুগ যুগ ধরে গ্রামীণ প্রান্তিক জনপদের জনপ্রিয় খেলা। বর্তমানে ৯০ ভাগ শিশুরাই জানে না এসব খেলা সম্পর্কে।
আধুনিকতার স্পর্শ আর সভ্যতার ক্রমবিকাশে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর টিভি সিরিয়ালের দিকে ঝুঁকে পড়ায় শিশুরা এ খেলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একইসঙ্গে এসব খেলাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এক সময় বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়ার পর ছোট ছোট শিশুরা
এসব খেলায় মেতে থাকতো। কিন্তু আজকাল মধ্যবয়সী থেকে শুরু করে প্রবীণরাও সেসব খেলাধুলা না দেখতে দেখতে ভুলে যাচ্ছেন। গোল্লাছুট, বৌছি, কানামাছি, সাতচারা, হাডুডু, নৌকাবাইচ, কুঁতকুঁত, দাড়িয়া বান্ধা এসব খেলার নাম শুনেনি এমন মানুষ কমই আছে। এসব বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা। এখন এসব খেলা গল্প হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাথী, হনুফা, ময়ুরী খেলছে ইচিং বিচিং। পাশেই অপেক্ষমান শিশুরা তাকিয়ে রয়েছে। প্রজাপতি উড়ে যায়, নাকি হাতের সঙ্গে পা মিশে পড়ে যায়। পড়লেই অপেক্ষমান অপর শিশু রহিমা, মিমরা এসে প্রজাপতি হবে। পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্রামের লোকজন।
খেলার ফাঁকে সাথী, মিম আর হনুফা বলেন, ‘লেখাপড়া আর মোবাইল নিয়াই থাকি। খেলাধুলা করার সময় পাই না। স্কুল থেকে বাড়িতে আইস্যা মোবাইলে গেইম খেলি। ’
রূপধন, কুপধন, জালিয়াঘাটাসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষদের কাছে খেলাটির বিষয়ে জাসতে চাইলে অনেকেই বলেন, এ খেলাটি সম্পর্কে আমার জানা নেই।
পাথরঘাটা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছগির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইচিং বিচিং, দাড়িয়াবান্দাসহ গ্রামীণ খেলাধুলা ছিল প্রতিভা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। এটা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে এসব খেলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গ্রামেরই সন্তান। কিন্তু এসব খেলাধুলা আমরা পাইনি। অনেক খেলার নামও শুনিনি। তবে এসব খেলাখুলা শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর টিভির সিরিয়ালের দিকে শিশুরা ঝুঁকে পড়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এসব ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৮
এনটি