প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ভাসমান সেতুকে ঘিরে যেন জনস্রোত বইছে। ঈদ পরবর্তী দিনগুলোতে প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরের পদচারনায় মুখরিত থাকে গোটা এলাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা কৌতুহল মেটাতে সেতুটি দেখতে আসছেন। সেতুতে হাঁটছেন, ঘুরছেন। এসব আগত দর্শকদের কেন্দ্র করে বাওড় পাশে গড়ে উঠেছে মোটরসাইকেল, গাড়ি পার্কিং এলাকা, নাগরদোলা, বিভিন্ন ধরনের খাবার, চটপটি-ফুচকা, বাচ্চাদের খেলনা ও ফুলের দোকান। এছাড়াও মনোরম পরিবেশের বিশাল আকৃতির ঝাঁপা বাওড় ঘুরতে ট্রলার ও নৌকা ভাড়া দেওয়ার জন্য রয়েছেন অর্ধশত মাঝি-মাওলা।
সেতু দেখতে আসা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্র আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, যশোরসহ আশপাশের এলাকায় তেমন কোনো পর্যটন এলাকা নেই। তবে এই সেতুটিকে ঘিরে সেই সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
দর্শকদের অভিমত, সেতুর পাশাপাশি দীর্ঘ এই বাওড়ের ধারে সরকারি কিংবা কোন সংস্থার মাধ্যমে দর্শকদের বসার স্থান, পিকনিক স্পট ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা গেলে গোটা এলাকাটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটক এলাকায় রূপ নেবে।
জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর উপজেলা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের সঙ্গে একটি গ্রামের নাম ঝাঁপা। ১৫ হাজার জনসংখ্যার এ গ্রামটির তিনপাশে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং পৌনে এক কিলোমিটার প্রস্থ মিলে ৬৪০ একর জলাকারের বাওড় রয়েছে। বাওড়টির গভীরতা ১৮ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত। সরকার বাওড়টি ইজারা দিয়ে বছরে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা আয় করলেও গ্রামবাসীর কষ্ট লাঘবে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয়দের অর্থায়নে ৬০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয় এক হাজার ফুট লম্বা এই ভাসমান সেতুটি।
ভাসমান সেতু নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা ঝাঁপা গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নদ-নদীতে ভাসমান প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ড্রেজার মেশিন রেখে পানি-বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখে প্রশ্ন জন্মে, অধিক ওজন সম্পন্ন মেশিনটি যদি প্লাস্টিকের ড্রামের উপর থাকতে পারে, তাহলে এমন পদ্ধতিতে অল্প ব্যায়ে কোনো সেতু তৈরি সম্ভব কী না। পরবর্তীতে টুঙ্গি বিশ্ব ইজতেমা এলাকায় সেনাবাহিনীর তৈরি ভাসমান সেতু এবং ভারতের বনগাঁতে ছোট আকৃতির ভাসমান সেতু আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। একপর্যায়ে ইন্টারনেটে সার্চ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্মিত ভাসমান সেতু দেখে যাচাই-বাছাই করি। পরে পরিচিত কয়েকজন প্রকৌশলী আর স্থানীয় ওয়ার্কশপে কথা বলে আমরা সেতু তৈরির স্বপ্ন দেখি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৮
এনটি