শুধু লৌহদণ্ডই নয়, সে উত্তাপ এসে লাগে কামারের গায়ে। তবু কামারদের সচ্ছলতার চাকা ঘুরেনি আজো।
সম্প্রতি তার আপন কর্মশালায় গিয়ে দেখা গেছে ভগ্ন শরীরে প্রতিটি লোহার টুকরো টুকরো অংশে আঘাত করে চলেছেন। মাঝারি শব্দে কম্পিত হচ্ছে চারপাশ। প্রায় ভাঙা তার ঘরের ছাউনি। জোর বৃষ্টি এসে মাঝেমধ্যে নিভিয়ে যায় দারিদ্রতায় জ্বেলে উঠার আগুন।
মোকাড়রি গ্রামের কামার-কুমারদের কেউ কেউ আবার নিজস্ব পূর্বপুরুষের পেশা পরিবর্তন করার লক্ষ্যে নতুন পেশায় প্রবেশের চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুটা বিস্ময় হয়ে পড়েন কামার পরিতোষ দেব। ‘আমার সম্পর্কে কি আর জানবেন’ বলে নিজেই কিছুটা আশ্চর্য হোন। মুখে ভদ্রতার হাসি ছড়ান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। নুন আনতে আমাদের পানতা ফুরায়। তারপরও প্রাণের টানে বাপ-দাদার এ পেশাকে আকড়ে ধরে আছি বাবু। বটি-দাসহ বিভিন্ন ধরনের দা, পাতাম (নৌকার জন্য তৈরি পেরেক) প্রভৃতি তৈরি করি। একদিনে দুটো বটি-দা তৈরি করা সম্ভব হয়।
বৈবাহিক জীবন ও আয় রোজগার প্রসঙ্গে বলেন, দু’মেয়ে এক ছেলে এবং স্ত্রীসহ পাঁচজনের পরিবার। ছোট ছেলেটি এলাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। মাসে ছয় হাজার টাকা আয় হয়। এই গ্রামের একমাত্র কামার আমি। এক সময় এই লোহার তৈরি জিনিসের প্রচুর চাহিদা থাকলে আজ তা প্রায় নেই বললেই চলে। শুধু দু-একটি নির্দিষ্ট জিনিস ছাড়া কোথাও লোহার ব্যবহার তেমন একটা নেই বলে জানান পরিতোষ।
পাশের বাড়ির মৃৎশিল্পী সুধন রুদ্র পাল বলেন, আমাদের এই গ্রামের কামার-কুমাররা অনেক অবহেলিত বাবু। জিনিসপত্রের যা দাম তাতে আমাদের টিকে থাকাটা বড় কঠিন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিকল্প পেশায় নতুন করে যোগদান করার চিন্তা-ভাবনা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮
বিবিবি/এএটি