দেশে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে মারাত্মক সব সড়ক দুর্ঘটনা। আর এ জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় চালকদের অদক্ষতা ও অসতর্ক অবস্থায় গাড়ি চালানোকে।
গাড়ি চালাতে চালাতে ধুমপান করা, মোবাইল ফোনে কথা বলা, যাত্রীদের সাথে তর্কে জড়িয়ে যাওয়াসহ ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়ার মত মারাত্মক সব অভিযোগও রয়েছে। কোনও কোনও বেপরোয়া ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ড্রাইভিংয়ের মত গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু গাড়ি চালাতে চালাতে ড্রাইভার স্বয়ং পাজল (ধাঁধাঁ) মোলানোর মত জটিল আর মাথা ঘামানো খেলায় মত্ত হয়েছেন, এমনটি এর আগে কোথাও শোনা যায়নি।
তবে এবার এমন ঘটনা ঘটেছে নাগরিক দায়িত্ববোধ আর সচেতনতার জন্য জগৎসেরা জাতির দেশ যুক্তরাজ্যের ডরসেট এলাকায়।
অ্যানানোভা পরিবেশিত সংবাদে জানা যায়- যুক্তরাজ্যের ডরসেটে অবস্থিত ফার্নডাউন আপার এবং ফার্নডাওন মিডল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ক্যাভেন্ডিশ লাইনার কোচ কোম্পানির জনৈক ড্রাইভার গাড়ি চালানোর পাশাপাশি তার স্টিয়ারিংয়ের
পাশেই পাজল খেলায় মত্ত ছিলেন। এসময় বাসটি ফার্নডাউন আপার এবং ফার্নডাউন মিডল স্কুলের শিক্ষার্থীদের বহন করছিলো।
ড্রাইভার যখন গাড়ি চালানোর পাশাপাশি স্টিয়ারিংয়ের পাশে রাখা সুডোকো বুক এ পাজল মিলাচ্ছিলেন তখন গাড়িতে থাকা ১২ বছর বয়েসি ছাত্র স্ন্যাপার তা দেখে ফেলে এবং তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় এর ছবি তুলে রাখে।
পরে এ ঘটনা ফার্নডাউন আপার এবং ফার্নডাওন মিডল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের কাজে ন্যাস্ত ক্যাভেন্ডিশ লাইনার কোচ কোম্পানিকে জানালে তারা ওই ড্রাভারকে চাকুরিচ্যুত করার ঘোষণা দিয়ে আশ্বস্ত করে অভিযোগকারীদের। তবে এখনও পর্যন্ত ওই ঘটনার নায়ক বা খলনায়ক ‘সুডোকো পাগল’ ড্রাইভারকে সনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে তারা।
ড্রাইভারের চোখ কপালে তোলা ওই কর্মের চিত্রগ্রাহক শিশু গ্ন্যাপারের মা বলেন- ‘ছবিটি দেখার পর আমি বিস্মিত! স্নাপারের কথা শুনে আমার এখন মনে পড়ছে আমি ওই চালককে সকালেও তার ড্রাইভিং সিটে বসে কলম হাতে একটি অ্যানসার সিটে উত্তর মেলাতে দেখেছি। ’
ঘটনা সম্পর্কে স্কুলের এক কর্মচারীর বক্তব্যও মিলে যায় ওই অভিভাবকের বক্তব্যের সঙ্গে।
ফার্নডাউন মিডল স্কুলের বিজনেস ম্যানেজার সিন্ডি লালানি ঘটনা সম্পর্কে বলেন- ‘সে শুধুমাত্র একজন সাধারণ গাড়িচালক নয়! তার গাড়িতে স্কুলের ছেলেমেয়েরা ছিল আর এদের জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্বও তার হাতে ছিল। এটি খুবই স্বাভাবিক যে ওই চালক তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য চাকরি হারাবে। কিন্তু এ ধরনণর ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে বাস কোম্পানির কাছে তার নিশ্চয়তা চাই। আমরা আশা করি কোম্পানি এর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। ’
তদন্ত শেষে দায়িত্বে অবহেলা করে ড্রাইভিংয়ের পাশাপাশি পাজল মেলানোর ঘটনা প্রমানিত হলে এর উপযুক্ত খেসারত হিসেবে তাকে চাকরিচ্যুত করার ঘোষণা দিয়েছেন ক্যাভেন্ডিশ লাইনার কোচ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
তবে এ ঘটনার অন্য ধরনের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের দেশের বেপরোয়া চালক তথা তাদের পক্ষাবলম্বননকারী রথী-মহারথীরা হয়তো এখন গা ঝাড়া দিয়ে বলেই ফেলবেন- দেখেছেন কী কাণ্ড! আমাদের ড্রাইভাররা কিন্তু এমন বেআক্কেলে কাজ কখনোই করবেন না!
জবাবে বলা যায়- গাড়ি চালাতে গিয়ে পথে গরু-ছাগল আর মানুষে পার্থক্য করতেই যেখানে ফুরসত পাওয়া যায় না, ঘটে য়ায় ভয়বহ সব দুর্ঘটনা- সেখানে আমাদের চালকরা সুডোকু খেলার সুযোগ পাবেন কোথায়!
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১১