ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চাদর-কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত শাওইলের ৭ হাজার পরিবার

টি এম মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৯, ডিসেম্বর ১১, ২০১১
চাদর-কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত শাওইলের ৭ হাজার পরিবার

বগুড়া: বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রাম শাওইল। শীতের শুরুতেই কর্মব্যস্ততা বেড়েছে এখানকার অন্তত ৭ হাজার শ্রমজীবি নারী-পুরুষের।



তাঁতের খটখট শব্দে আর সুতার বুননে মিশে আছে শাওইলসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের স্বপ্ন। চাঁদরের বর্ণিল জমিনের মতো জীবনটাকেও একটু রাঙিয়ে তুলতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন তারা।

এদের কারও নিজের তাঁত রয়েছে, আবার কেউ শ্রম দিচ্ছেন অন্যের তাঁতে। তবুও প্রযুক্তির দাপট যখন চরমে, তখনও এই আদি শিল্প আকড়ে ধরে আছেন এখানকার সহস্র্র মানুষ।

গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ সুতা ছড়াচ্ছেন, কেউ চরকা নিয়ে বসে সুতা নলি/সূচিতে ওঠাচ্ছেন, কেউ বা আবার সুতা ববিন করছেন।

নারী-পূরুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা গ্রামজুড়ে টানা তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত পরিবেশ যেন এ পেশার মানুষের কর্মব্যস্ততার আরেক অহংকার। প্রতিটি ঘর ও আঙিনায় সযত্নে বসানো পরিপাটি এসব তাঁত যন্ত্র চলছে অবিরাম।

শাওইল ছাড়াও পাশের দত্তবাড়িয়া, মঙ্গলপুর, দেলিঞ্জা এলাকায় কেবলমাত্র তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ৭ হাজার পরিবার।

উত্তরবঙ্গের এই তাঁতি গোষ্ঠী তাদের তাঁত সংস্কৃতি ধরে রাখার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। প্রথম অবস্থায় এখানে চাদর ও কম্বলের উলের সুতা কেনাবেচা হলেও পরে এই হাটে চাঁদর ও কম্বল  বিকিকিনি শুরু হয়। আর হাটের নাম দেয়া হয় ‘চাঁদর-কম্বল গ্রামের হাট। ’

প্রতিনিদিন ভোররাত থেকে শুরু হয়ে এই হাট চলে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। তবে হাটের নির্দিষ্ট দিন প্রতি রোববার ও বুধবার। আর এই হাটকে ঘিরে ৭৫টি গ্রামে গড়ে উঠেছে তাঁতি পল্লী।

এ হাটকে ঘিরে চলে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীসহ সারাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীদের চাদর, কম্বল ও সুতা কেনার প্রতিযোগিতা। হাট চলাকালে চারপাশে ভিড় করে শত শত ট্রাক, বেবিট্যাক্সি, রিক্সা-ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন।

স্থানীয় প্রবীন শামছুদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, গ্রামের অধিকাংশ মানুষের মূল পেশা এখানকার তাঁত শিল্পকে ঘিরে। এদের কেউ বংশ পরম্পরায়, আবার কেউ নতুন করে এর সঙ্গে জড়িত হয়েছেন।

শাওইল স্কুলের পাশে বসবাসকারী ইদ্রিস আলী প্রতি রোববার ও বুধবার হাট বসে উল্লেখ করে বাংলানিউজকে জানান, শুরুতে হাটে পাঁচটি দোকান থাকলেও বর্তমানে ছোট বড় মিলে এখানে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার দোকান গড়ে উঠেছে।

নশরতপুর ইউনিয়ণ পরিষদের  সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, কোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই গড়ে উঠেছে এখানকার এই বিশাল কর্মক্ষেত্র।

চাদর ও শীতবস্ত্র ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে শীতবস্ত্র তৈরির মেশিন, সুতা, রঙ, তাঁতের চরকা, তাঁত মেশিনের সরঞ্জাম ও নাটাইয়ের ব্যবসা।

তিনি আরো জানান, শুধুমাত্র বাজার ও আশপাশে গড়ে ওঠা এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক। যার অধিকাংশই মহিলা।

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তারা লট থেকে সুতা বাছাই ও ফেটি তৈরি করে সুতা সাজিয়ে রাখেন। পারিশ্রমিক ৭০ থেকে ৯০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ণ পরিষদ সদস্য উজ্জল ও স্থানীয় যুবক জিয়াউল হক বাংলানিউজকে জানান, শাওইল হাটের মত বাণিজ্যিক এলাকায় কোনো ধরনের ব্যাংক না থাকাটা সত্যিই দুঃখজনক।

আদমদিঘি থেকে এই বাজারের দুরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার হওয়ায় আর্থিক লেনদেনের জন্য যেতে হয় নওগাঁ জেলা সংলগ্ন বগুড়ার সান্তাহার পৌর এলাকায়। যা ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর বলে তিনি জানান।

বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) এলাকার বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকা বাংলানিউজকে জানান, এখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। শাওইল এলাকায় ব্যাংক স্থাপনের জন্য বিগত বিএনপি জোট সরকারের সময় তিনি চেষ্টা করেছিলেন।

তিনি জানান, সে সময় তার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। তবে এরপর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে তিনি অবশ্যই ঐ এলাকায় ব্যাংক গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোল্লা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এখানকার শিল্প ও বাণিজ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা ও উপর মহলে যোগাযোগ চলছে।

টাকা লেনদেনের জন্য এখানকার ব্যবসায়ীদের দূও যেন যেতে না হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।