ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চিমনি বয়: ইউরোপ-আমেরিকার নৃশংস অধ্যায়

আবু তালহা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৩, ডিসেম্বর ১৩, ২০১১
চিমনি বয়: ইউরোপ-আমেরিকার নৃশংস অধ্যায়

শিশুশ্রম তথা শিশু নিগ্রহের ঘটনা আগেও ঘটেছে, এখনও ঘটে চলেছে। সুন্দরবনের দুবলার চরে শুটকি পল্লীতে‍ ছোট ছোট শিশুদের ধরে নিয়ে ক্রীতদাসের মত কাজ করানো হয়, চালানো হয় পাশবিক নির্যাতনও।

এদেশের শিশুদের নানা ছল-ছুতোয় ধরে নিয়ে আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বিপজ্জনক উটের জকি বানানো হয়। শিশুদের চুরি করে বিদেশে পাচার এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য তাদেরকে হত্যা করা, শ্রম শিবিরে কাজ করানো আর পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।    

দুনিয়ার দেশে দেশে শিশুদের ওপর এ ধরনের নৃশংসতার অনেক কাহিনী শোনা যায়। বর্তমান ও অতীতের গা’ শিউরে ওঠা এসব কাহিনী আমাদেরকে বিষাদাক্রান্ত করে, আবেগতাড়িত করে, শোক বিহম্বল করে। শ’দেড়েক বছর আগেও ইউরোপে চলমান এ ধরনের এক নৃশংস আর অমানবিক কর্মকাণ্ডের ধারায় প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য শিশুকে। চিমিনিবয় নামে পরিচিত ওই শিশুদের নিয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে উইকিডিডিয়াসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য ও ছবি নিয়ে    

সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপের শীত প্রধান অঞ্চলে ঘর-বাড়ি গরম রাখার জন্য ফায়ারপ্লেসের (ঘরে স্থাপিত অগ্নিকুণ্ড)চিমনি পরিষ্কারে শিশুদের নির্দয়ভাবে ব্যবহারের ইতিহাস গোটা পৃথিবীতে তেমনি এক লোমহর্ষক ঘটনা। ফায়ারপ্লেসের কালি-তেলের পুরু আস্তরণের সরু চিমনিতে ঢুকে পরিষ্কারের কাজ করতে যাওয়া শিশূরা প্রায়ই ভয়ে-আতংকে আর অক্সিজেনের অভাবে সেখানেই মারা যেত। এসব শিশুদের অনেককেই হতদরিদ্র বাবা-মার কাছ থেকে মাত্র ৪ শিলিংয়ে কিনে নেওয়া হতো চিমনি পরিষ্কারের কাজের জন্য।

অভিজাত আর বড়লোকদের চিমনি পরিষ্কারের কাজে সেসময় এভাবে প্রাণহানি ঘটে বহু কোমলমতি অনাথ শিশুর। এসব ঘটনা ইউরোপে তো বটেই, গোটা বিশ্ব সভ্যতায় নৃশংশতম পাষণ্ডতার ইতিহাস হয়ে রয়েছে- যা এখনো বাকরুদ্ধ করে বিবেকবান মানুষকে।

ফায়ারপ্লেসের আদিকথা
শীত থেকে বাঁচতে আগুনের আঁচ নেওয়া অর্থাৎ আগুনের কুণ্ডকে ঘিরে মধুর উত্তাপ উপভোগ করা মানুষের আদিম অভ্যাসগুলোর একটি। এরই ধারাবাহিকতায়  

সপ্তদশ শতাব্দীর আগে ইউরোপের শীতপ্রধান দেশে আব্রাহাম ডারবির উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে শীত তাড়াতে, ঘরকে আরামদায়ক করতে আগুন জ্বালানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয় লোহার তৈরি বিশেষভাবে নির্মিত আগুন জ্বালানোর পাত্র। পরবর্তীতে আগুন জ্বালানোর পাত্র বা ফায়ার প্লেসের আধুনিকায়ন করতে লোহার পাত্রের ওপরে মার্বেল পাথর ও কাঠের কারুকাজ করা আবরণ দেয়ার প্রচলন হয়। রঙিন গ্রানাইট বা মার্বেল পাথর, কারুকাজ করা কাঠের নক্সা ও মনোরম ডিজাইনের কারণে ফায়ার প্লেসগুলো হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়। এর বেশ পরে ফায়ারপ্লেসের আধুনিকায়নে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন গুরুপূর্ণ ভুমিকা রাখেন।

তিনি দেখলেন, প্রচলিত ফায়ার প্লেসের অনেকটা তাপ অকারণেই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হয়। আধুনিক ডিজাইনের মাধ্যমে তিনি ফায়ার প্লেসের পুরো তাপকে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ঘর বা বাড়িতেই ব্যবহারের ব্যবস্থা করলেন। তার আবিষ্কৃত ফায়ারপ্লেস ফ্রাঙ্কলিন স্টোভ নামে পরিচিতি পায়। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ফায়ারপ্লেসকে বসালেন ঘরের মাঝখানে। এতে পুরো ঘর সমানভাবে গরম ও আরামদায়ক হয়ে ওঠে। তাঁর আরও একটি আবিষ্কার ফায়ারপ্লেসের আধুনিকায়নে নতুন মাত্রা যোগ করে। আর তা হলো পাকা লোহার পরিবর্তে তিনি ফায়ারপ্লেসের কাঠামো নির্মাণে কাঁচা লোহা ব্যবহার করেন।

তবে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের অবদানের পরেও ফায়ারপ্লেসে বড় ধরণের ত্রুটি ছিল। তা হলো ঘরের অগ্নিকুণ্ড থেকে নির্গত ধোঁয়া। এ সমস্যার লাগসই সমাধান বেঞ্জামিন দিতে পারেননি। তাছাড়া পর্যাপ্ত বাতাসের অভাবে ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বালিয়ে রাখাও কষ্টকর ছিল। সপ্তদশ শতাব্দিতে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় ডেভিড রিটেনহাউজ নামে এক ভদ্রলোক বাস করতেন। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের আবিষ্কৃত ফায়ারপ্লেসের ত্রুটিটি তাঁর চোখে ধরা পড়ে। তিনি বেঞ্জামিনের ডিজাইনের সঙ্গে নিজের আবিস্কৃত ডিজাইন জুড়ে সমস্যাটির নিরসন করলেন। ডেভিড ফায়ারপ্লেসের মাথায় ইংরেজি ‘এল’ অক্ষর আকারের পাইপ জুড়ে ফায়ারপ্লেসের ধোঁয়া ঘরের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। একই সঙ্গে ওই পাইপ বা চিমনির মাধ্যমে বাইরের বাতাসের সংস্পর্শ পেয়ে ফায়ার প্লেসের আগুনের তেজ ও তাপ দু`টোই বেড়ে যায়। এই চিমনির সাধারণ পরিধি ছিল ৯ থেকে ১৪ ইঞ্চি।

এতে করে ফায়ার প্লেসে আগুনকে তেজোদ্দীপ্ত রাখার সমস্যা মিটলেও এবার ভিন্ন ধরণের এক সমস্যা দেখা দেয়। তা হলো চিমনির সরু পাইপে কালি জমে ক’দিন বাদেই তা বন্ধ হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে কাঠের বদলে পাথুরে কয়লা পোড়ানোর ফলে চিমনির ভেতরে জমা হতে থাকে কালি আর চটচটে তেলের স্তর।

চিমিনির এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে এক ভিন্ন উপায়ের প্রচলন ঘটে যা ভয়ানক অভিশাপ হয়ে দেখা দেয় বিশেষ করে ইংল্যান্ডের ছিন্নমূল আর দরিদ্র শিশুদের জীবনের জন্য।
 
সভ্য মানুষের বিবেক কেঁপে ওঠা সে ইতিহাস
স্থায়ীভাবে নির্মিত ওই চিমনি পরিষ্কার করার অধ্যায়টি আজও পৃথিবীর ইতিহাসে বড় রকমের নৃশংসতার নমুনা হয়ে রয়েছে। চিমনির সরু পাইপে (৯ থেকে ১৪ ইঞ্চি পরিধি) ঢুকে বয়স্ক মানুষের পক্ষে তা পরিষ্কার করা সম্ভব না। আর তাই এ কাজে প্রয়োজন দেখা দিল ৫ থেকে ৮ বছরের বালক-বালিকা। বড়লোক বা সাধারণ ঘরের শিশুদের দিয়ে তা সম্ভব ছিল না। এসময়ে খোঁজ পড়ে হতদরিদ্র আর ছিন্নমূল শিশুদের। এ পর্যায়ে চিমনি পরিষ্কারকে ঘিরে সে সময় নতুন ধরণের ব্যবসা জমে ওঠে। সেসময় ভোরবেলা ইংল্যান্ডের রাস্তায় হাঁক শোনা যেত ‘চাই কালি পরিষ্কার!’ ওই ব্যবসার মূল শক্তি ছিল ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা। এদের বেশিরভাগই ছিল এতিম বা বেওয়ারিশ।

আবার হতদরিদ্র পরিবারের কিছু কিছু শিশুদের তাদের অভিভাবকরা বিক্রি করে দিত চিমনিবয় বা গার্ল হিসেবে। তাদের বাজার দর ছিল মাত্র ৭ শিলিং থেকে ৪ গিনি। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের চিমনি পরিষ্কারের কাজের জন্য তৈরি করা হতো।

অপরদিকে, কালিমাখা তেল চিটচিটে আর দম বন্ধ করা ভয়ংকর সুরঙ্গের ভেতরের কঠিন সে কাজের বিনিময়ে শিশুরা কোনও মজুরি পেত না। এর বিনিময়ে তাদের খাওয়া আর মাথা গোঁজার ব্যবস্থাটা করতো মালিকরা। কালি-ঝুলি নোংরা পরিস্কার করতে এরা যাতে দ্বিধা না করে, এজন্য এদের রাখাও হতো নোংরা পরিবেশে- যাতে তারা এ ধরনের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সপ্তাহে একবার তাদের গোসল করানো হত, কখনও কখনও তাও হত না। এমনও ঘটনা আছে- যেখানে কোনও কোনও শিশুকে অভ্যস্ত করা হতো বছরে মাত্র তিনবার গোসল করতে।

এমনকি রাতে ঘুমানোর জন্য কালি-ঝুলির মধ্যেই বিছানা করে দেয়া হতো। এদের একত্রে মেঝেতে আবার কখনও কখনও ভাঁড়ার ঘরে দিগম্বর অবস্থায় ঘুমাতে দেয়া হত বস্তা গায়ে দিয়ে। সারাদিন শুধু কাজ করার জন্য তাদের পোশাক দেয়া হতো। এ কারণে এসব শিশুর বেশির ভাগের হাতে-পায়ে, এমনকি সারাদেহ ছিল নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত। চিমনি পরিস্কার করতে গিয়ে সে সময় বহু শিশু চিমনির কালি-ঝুলির মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে।

এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকরা আরও ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিতেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিমনি পরিস্কারের জন্য শিশুদের চিমনির ভেতরে পাঠিয়ে নিচে ফায়ার প্লেসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হতো, যাতে ভেতরের অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে দ্রুত শিশুটি নেমে আসতে না পারে। এতে আগুনে সেদ্ধ হয়ে আর দমবন্ধ হয়ে প্রায়ই শিশুরা চিমনির ভেতরেই মারা পড়ত। উঁচু চিমনিতে উঠতে ভয় পেলে কখনও কখনও অন্য শিশুকে পাঠিয়ে দেয়া হতো নিচে থেকে পায়ের তলায় পিন দিয়ে খোঁচা দেয়ার জন্য। নিচে থেকে সুচোলে বর্ষা দিয়েও খোঁচা দেওয়া হতো তাদের পায়ে। অধিকাংশ সময় এদের গরম চিমনীতেই তুলে দেয়া হত।

সবচেয়ে হতাশা আর আশ্চয্যের বিসয় হল, ইংল্যান্ডের মত দেশে মানুষের সন্তানকে এভাবে পুড়িয়ে মারার পরও সে সময় চিমনি পরিস্কারকারী ব্যবসায়ীদের বিচারের সম্মুখীন হতে হয়নি।

অপরদিকে, চিমনি শিশুদের ওপর চালানো বর্বরতা তৎকালীন ও পরবর্তীকালের শিল্পী ও কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নেয়। ইংরেজ কবি উইলিয়াম ব্লেইকের অনবদ্য সৃষ্টি সংস অব ইনোসেন্স ও সংস অব এক্সপেরিয়েন্স-এ চিমনি শিশুদের ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায়।

এখানে প্রাসঙ্গিক বিধায় মেধাবী কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের করা উইলিয়াম ব্লেইকের সংস অব ইনোসেন্স-এর অন্তর্ভুক্ত চিমনি-ঝাড়ুদার কবিতাটির অসাধারণ বঙ্গানুবাদটি তুলে ধরা হলো

chemneeচিম্‌নি-ঝাড়ুদার
যখন আমি এতটুকুন, মা যে গেল ম’রে,
কথাও ভালো ফোটে নি, বাপ দিল বিক্রি ক’রে,
কাঁদতেও খুব পারি নি যে ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া–
তাই তো তোমার চিম্নি ঝাড়ি, তাই তো ছাইয়ে শো’য়া।
ঐ তো ছোট্ট লাভলু মিয়া, চেঁচাচ্ছিল খুব
ন্যাড়া হবার সময়–আমি বলি তাকে, “চুপ!
লাভলু বোকা, মাথায় যদি না-থাকে তোর চুল,
চুলে জটা হবে না আর লাগলে কালি-ঝুল। ”
এই শুনে সে শান্ত হ’ল। সেই সে রাতেই, যখন
ঘুমে অচৈতন্য, লাভলু দেখতে পেল স্বপন:
আবুল ভুলু মণ্টু–হাজার চিম্‌নি ঝাড়ুদার,
বন্দি সবাই কালো-কালো কফিনে যে যার;
ফেরেস্তা এক এলো একটা দিব্য চাবি-হাতে,
খুলল কফিন–সবাই মুক্তি পেলো। সাথে-সাথে
নেচে, হেসে সবুজ মাঠে খেলল ঘুরে-ঘুরে,
গোসল করল নদীতে, গা শুকাল রোদ্দুরে–
ন্যাংটা এবং ফর্সা–সবাই ঝুড়িটুরি ফেলে
চড়ল মেঘে, খেলল তারা বাতাসে গা মেলে;
লাভলুকে কয় ফেরেস্তা, “তুই হ’লে ভালো ছেলে,
বিভু হবে বাবা রে তোর, যাবে না সে ফেলে। ”
ঘুম ভাঙে ওর, আমরাও সব ভোর না-হ’তেই উঠি,
ঝুড়ি নিয়ে, ঝাড়ু নিয়ে, কাজের জন্য ছুটি;
ঠাণ্ডা সকাল, লাভলু তবু গরম আছে সুখে–
ফুর্তিতে কাজ করো যদি, শীত লাগে না বুকে।

‌চিমনি শিশুদের উপাখ্যান এসেছে চার্লস ডিকেন্সের অলিভার টুইস্টেও। সেখানে গ্যামফিল্ড নামে এক চিমনিওয়ালা (চিমিনি পরিষ্কারকারী ঠিকেদার)অসহায় শিশু অলিভারকে চিমনিবয় হিসেবে কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু আদালতের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত তা পারেনি সে। গ্যামফিল্ড নির্মম নির্যাতন চালিয়ে ৩/৪ জন চিমনি শিশুকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল।
এছাড়া আরও অসংখ্য সাহিত্য ও শিল্পৈকর্মে চিমনি শিশুদের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে। মাইকেল ক্রিচটনের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি অস্কার বিজয়ী হলিউড মুভি দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি’তেও আছে চিমনিবয় প্রসঙ্গ।  

অবশেষে রোধ হয় নৃশংসতার
chemneeবহু বছর শিশুদে নিয়ে নৃশংস-নির্মমেএ ঘটনা চলার পর ১৮৬৪ সালে বৃটিশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউজ অব লর্ড শিশুদের চিমনিতে চড়ানো নিয়ন্ত্রণে ব্যাপারে আইন পাস করে। কিন্তু এতে অপরাধীর জন্য মাত্র ১০ পাউন্ড জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে এ আইন পাস হওয়ার পর এ ধরনের অপরাধের মাত্রা কমতে থাকে। ১৮৭৫ সালে এটা পুরোপুরি বন্ধে আইন পাস হয়। চিমনি পরিষ্কারে শিশুদের ব্যবহার রোধে আইন পাসের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন লর্ড শ্যাফটসবারি (Lord Shaftesbury)তবে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭৫ সালের পরেও এ ধারা চলতে থাকে। সেখানে এ কাজে ব্যবহার করা হতো আফ্রো-আমেরিকান শিশুদের।

ইতালি, ফ্রান্স, বেলজিয়োমেও চিমিনি শিশু ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। তবে জার্মাণি রাজ্যগুলোতে শিশুদের একাজে ব্যবহার করা হতো না।

এদিকে, ওইসব হতভাগা শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো খবরটা ছিল, ওই শতাব্দীর শেষে চিমনি পরিষ্কারের জন্য যন্ত্রপাতির আবিস্কার হওয়াটা। যার ফলে চিমনি পরিস্কারের জন্য শিশুদের ব্যবহার বন্ধ হয়। চিমনি পরিষ্কারে প্রথম যান্ত্রিক ঝাড়ু আবিষ্কার করেন স্মার্ট (১৮০৩)। জন গ্লাস ১৮২৮ সালে যান্ত্রিক ঝাড়ুর সংস্কার করেন। তাঁকেই এর আবিষ্কারক বলা হয়।

মানব সভ্যতার কলংক চিমনিবয় উপাখ্যান এখন শুধুই ইতিহাস। বর্তমান সময়ে বাসাবড়ি, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে চলমান শিশু নির্যাতন, নিগ্রহ যদি এরকম ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিত, ছিন্নমূল-দরিদ্র-অসহায় শিশুদের জন্য তা কতটা স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়াতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।