ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

গণজাগরণে সোশ্যাল মিডিয়া ও সাইবার আইন

গ্রন্থনা: শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১১, ডিসেম্বর ১৯, ২০১১
গণজাগরণে সোশ্যাল মিডিয়া ও সাইবার আইন

আজ ১৯ ডিসেম্বর তৃতীয় বাংলা ব্লগ দিবস। ব্লগিং শক্তি ও সম্ভাবনাকে আরো বিস্তৃত করতে গত দুই বছর বাংলা ব্লগ দিবস পালন হয়ে আসছে।

বাংলা ব্লগ ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো পালন করা হয় বাংলা ব্লগ দিবস।

‍এবারের ব্লগ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘গণজাগরণে সোশ্যাল মিডিয়া ও সাইবার আইন’। ১৩টি বাংলা কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মের যৌথ আয়োজনে আজ বিকেল পাঁচটায় ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ব্লগ দিবসের অনুষ্ঠান।
এবারের ব্লগ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ব্লগার ও ব্লগ সঞ্চালকদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাদের মতামত নিয়েই এবারের আয়োজন।

মাহবুব মোর্শেদ, ব্লগার ও সাংবাদিক


গণজাগরণে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা কী সেইটা আজকে আর তর্কের বিষয় না। সাম্প্রতিক আরব জাগরণ, ওয়ালস্ট্রিট দখল আন্দোলন এবং ভারতে আন্না হাজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা স্পষ্টভাবে ধরা দিয়েছে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এ আন্দোলনগুলোর বাইরেও বহু ছোট ছোট জাগরণের উল্লেখ করা যাবে যেগুলোর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। মিসরের গণজাগরণের একজন কর্মীর ইন্টারভিউ নিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস। তিনি বলেছিলেন, জনমত গঠনের জন্য তারা ফেসবুককে ব্যবহার করেছিলেন, জমায়েত কর্মসূচির জন্য ব্যবহার করেছেন টুইটার, আর দুনিয়াকে কর্মসূচি বিষয়ে জানান দিয়েছিলেন ইউটিউবের মাধ্যমে। ফলে,  দেখা যাচ্ছে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, অন্য নিউ মিডিয়া টুলসগুলোর ব্যবহারও হয়েছে গণজাগরণে। আমি বলবো, নিরস্ত্র তরুণদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের এই পদ্ধতিটি একান্তই এই প্রজন্মের আবিষ্কার।
মজার ব্যাপার, গণমাধ্যমের ওপর নানা দমনপীড়ন সত্ত্বেও এটি ঘটতে পেরেছে। আইন করে মানুষের সৃজনশীল প্রতিবাদকে দমানো যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না। আমাদের দেশ বা প্রতিবেশী দেশে সরকারগুলো অনলাইন মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা উপায় ভাবছে। নতুন আইন প্রণয়ন এ উপায়গুলোর একটি। এসব আইন সরকারগুলোর কোনো উপকার করে না, বরং জনমনে সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে বরং উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি সরকারগুলোকে সহযোগিতা করতে পারে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের চর্চা এখনও পরিপক্ব হয়নি। গণতন্ত্রকে পরিপক্ব করার জন্য আরও গণতন্ত্র দরকার। গণমাধ্যমকে মুক্ত করে দিতে হবে। অনলাইন মাধ্যমকে অবাধ করতে হবে। অনলাইন মাধ্যমের মুক্তির মধ্য দিয়ে শুধু মুক্তমতই যে ছড়ায় তা নয়, বাণিজ্যও ছড়ায়। ফলে, বন্ধ করার পথে সরকারগুলো খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না। তাই, মানুষকে কথা বলতে দেওয়াই শ্রেষ্ঠ উপায়। আমি মনে করি- চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, ঘৃণার মতাদর্শ, জাতি-লিঙ্গ-বর্ণ বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই বন্ধ করা উচিত নয়। যেখানে গণতন্ত্র, মুক্তি ও স্বাধীনতাই আদর্শ সেখানে নিয়ন্ত্রণের ধারণাটাই কারো মাথায় আসা উচিত নয়।

সালাহ উদ্দিন শুভ্র, ব্লগার ও সাংবাদিক



এইখানে গণজাগরণ বিষয়টা পরিষ্কার না। মধ্যপ্রাচ্যরে উদাহরণ হিসাবে টানলে বলা যায় যে সেখানে ব্লগ বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম একটা টুলস হিসাবে কাজ করতেছে। একটা মাধ্যম হিসাবে। আমাদের দেশে সেই সুযোগ আছে ঠিক কিন্তু এর বিস্তৃতি কম, তাছাড়া অনলাইনে যে আসে না সে এই সুবিধা পায় না। অথচ রাজনৈতিক সংগ্রামে সে-ই হয়ত মুখ্য। এখন এইটা নিয়া খুব আলাপ হইতেছে, কিন্তু এর সীমানা কম, সেইটা মাথায় রাখতে হবে। তবে নিউ মিডিয়া গণতান্ত্রিক, এইটা খুব খেয়াল করতে হবে। সাইবার আইন দেশে কী রকমে আছে তা আমার জানা নাই। কোনটারে অপরাধ বলা যাবে এইটা নিয়া বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা জরুরি। বা কিভাবে সেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়াও ভাবতে হবে। আইন প্রয়োগেও সতর্কতা জরুরি। একই সঙ্গে গনজাগরণ এবং আইন এইখানে আলোচনার বিষয় হইছে, আমি মনে করি এই দুইটা কন্ট্রাডিক্ট করে। অনেক সময় আইন `গণ` দ্বারা বাতিল হয়, আবার তৈরি হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলাতে যারা সেই সাইট নিয়ন্ত্রণ করে বা পরিচালনা করে তারাই আইন তৈরি এবং এর প্রয়োগ বিষয়ে বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন ব্লগগুলাতে আমরা দেখি ব্যবহারবিধি থাকে, সঞ্চালকরা সেইটা মাইনা চলার চেষ্টা করে। আইন প্রয়োগকারীরা তাদের সাথে আলাপ কইরা, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাইতে পারেন।

আইরিন সুলতানা, ব্লগ এডিটর, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ



বাংলা ব্লগের ৬ বছরের ইতিহাসে এমন কোন জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক ইস্যু পাওয়া যাবে না, যেখানে ব্লগাররা তাদের বস্তুনিষ্ঠু বক্তব্য তুলে ধরতে কুণ্ঠাবোধ করেছে।   একটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠি বাংলা ব্লগকে জনপ্রিয়, শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে। আম জনতার কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়েছে ব্লগে। এখন প্রশাসনের মুখেও ব্লগ নিয়ে মন্তব্য শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে যদিও বৈশ্বিকভাবে সকল প্রশাসনই একটু বাঁকা চোখে দেখেন, তবে সেটা মূল ব্লগিং চর্চা সম্পর্কে তাদের জানাশোনার সীমাবদ্ধতা;  ক্ষেত্র বিশেষে নাগরিক সমালোচনা গ্রহণে উদারতার অভাবও। তাই ব্লগে ও ব্লগারদের উপর খড়গ হস্তের একটি সম্ভাবনা থেকে যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশে সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল। এর শক্তিমত্তার ইতিবাচক ব্যবহার ও প্রচার  হবে এটা সবসময় তাই দু’পক্ষের কাছেই কাম্য।

বাংলা ব্লগ দিবস উদযাপন ব্লগারদের যূথবদ্ধতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তৃতীয় বাংলা ব্লগ দিবসে প্রথমবারের মত প্রতিপাদ্য সংযোজিত হয়েছে- গণজাগরণে সোশ্যাল মিডিয়া ও সাইবার আইন। এই অংশে কেউ অজ্ঞতাবশত,  কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াতে সাইবার আইন প্রণয়নের বিরোধীতা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানের বিপরীতে সাইবার আইন প্রণয়ণে নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণকে আত্মঘাতি, পরস্পরবিরোধী আখ্যায়িত করতে চাইছেন কেউ কেউ। এই অংশে উদাহরণ হিসেবে এসেছে,  ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে আটকের ঘটনা। আমাদের জানা দরকার, রাষ্ট্র একান্তই যদি বাক স্বাধীনতায়  বাধা দিতে চায়, তবে তা সাইবার আইন ছাড়াও হতে পারে। বরং  বাক স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্লগারদের এবং   নিজেদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে ইন্টারনেটবাসী তথা নেটিজেনদের সাইবার আইনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে হবে।

ইন্টারনেটে ব্লগারদের বিচরণ যথেচ্ছ বলে তারা এ জগতে ঘটে চলা ঘটনা নিয়ে  সম্যক ধারনা রাখতে পারেন সহজে। ভার্চুয়াল হলেও  এ জগত বাস্তব সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। সমাজের মত এখানেও এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা অপরাধ হিসেবে গন্য করা যায়। ব্লগে ব্লগারদের মানবিক আবেগকে পুঁজি করে  অর্থ আত্মসাতের মত প্রতারণা ঘটেছে। বিশেষত নারী ব্লগারদের নিয়ে যৌন আক্রমনাত্মক মন্তব্য করতে দেখা যায় ডার্ক-ব্লগিংয়ে আগ্রহী কোন কোন ব্যক্তিদের।   এসব কেবল ব্লগে বা ব্লগারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ আচরণ নয়। ফেসবুক ব্যবহারকারী, ই-মেইল ব্যবহারকারী - এক কথায় বহু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সবচেয়ে আপত্তিকর ছিল মুক্তিযুদ্ধকে পর্নোগ্রাফি সাইটে নিয়ে মানুষের একাত্তর চেতনার সাথে নগ্ন মশকরায় মেতে ওঠা,  পর্নো সাইটের সাথে একাত্তর গুলিয়ে ফেলে তরুণ প্রজন্মকে  বিভ্রান্ত করা। মানবীয়, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এহেন  ধৃষ্টতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এরূপে অবমাননা কোন যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না। যেহেতু এমন ন্যাক্কারজনক আচরণ সাইবার জগতে ঘটানো হয়েছে, তাই একে সাইবার ক্রাইমের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়ে।

সমাজে বিচরণে নিজের নিরাপত্তায় নাগরিকের যেমন আইন প্রয়োজন হয়, সাইবার জগতেও নেটিজেনদের নিজের জন্য সাইবার আইন প্রয়োজন। ব্লগাররা এ প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারায় দৃঢ় আশাবাদী হওয়া যায়, সাইবার আইন প্রণয়নে  বিভিন্ন কেস স্টাডির বিপরীতে নীতিনির্ধারকদের যথাযথ পরামর্শ ব্লগাররা,  নেটিজেনরাই দেবেন।      

একরামুল হক শামীম, ব্লগার ও সাংবাদিক



গণজাগরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা খুব স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা গেছে আরব বিপ্লবের মাধ্যমে। এর আগেও বিভিন্ন দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছে। তবে গণজাগরণে দেশে দেশে ছড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি আমরা লক্ষ করলাম আরব বিপ্লবের সময়। তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লব থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোতে যে জনজাগরণ আমরা দেখেছি তাতে সামাজিক যোগাযোগসাইটগুলোর অবদান রেখেছে। এমনকি অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলনও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম বিভিন্ন এলাকায় অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট ঘরাণার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্লগ ও ফেসবুকে একটি বিষয়ে প্রচুর লেখালিখি হয়েছে। তা হলো- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বয়কট করুন। সেই আন্দোলন সফল। কারণ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের ভরাডুবি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ফলে গণজাগরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব স্পষ্টতই রয়েছে। এবং সেই প্রভাব আমরা এরইমধ্যে দেখা শুরু করেছি।
ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগল প্লাসকে যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের টুলস হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে দেখাতে পাবো এইগুলোর ব্যবহার করে মানুষ গত কয়েক বছরে নিজেদের মতামতগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। গণজাগরণের জন্য প্রয়োজন গণমানুষের অংশগ্রহণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ভোক্তা এবং ব্যবহারকারী এই গণমানুষ। ফলে কোন একটি বিষয় দ্রুত ছড়িয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম এইসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।  
 সাইবার ক্রাইমের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির নানামুখী উন্নয়নেরে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাইবার অপরাধের ধরনও বাড়ছে। ২০০৬ সালের যে আইনটিকে আমরা সাইবার অপরাধ দমনের আইন বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। সাইবার পরিমন্ডলের কিছু বিষয় নিয়ে প্রথমবারের মতো এই আইন আলোচনা করলেও সাইবার অপরাধের পরিব্যাপ্তি ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের দেশে সাইবার পর্নোগ্রাফি বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে পর্যালোচনা নেই। এ সুযোগে ওয়েবসাইটে কুরুচিপূর্ণভাবে ছবি প্রকাশ বেড়ে চলেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। নারীকে হয়রানি করতে কিংবা ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সাইবার জগতে প্রকাশ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
আমরা দেখলাম ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হলো কয়েকদিনের জন্য। ২০০৯ সালে ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সাইবার আইন থাকলে কিছু হলেই ওয়েবসাইট বন্ধ করে রাখার প্রবণতা রুখা সম্ভব হতো।
কোন কোন ব্লগারের মধ্যে অবশ্য সাইবার আইন নিয়ে ভয় রয়েছে। সেটা মূলত সাইবার আইনের প্রয়োগ নিয়ে। সাইবার আইন করে ব্লগে স্বাধীনভাবে লেখালেখির অধিকার ক্ষুন্ন করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই হবে না। সাইবার জগতের অপরাধগুলোতে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই সাইবার আইন জরুরি। তা যেন কোনভাবেই ব্লগ ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটে লেখালেখি নিয়মকানুন বিষয়ক আইন না হয়ে যায় তা নিশ্চিত করা জরুরি। সাইবার আইন প্রণয়নের সময় ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মতামত গ্রহণ প্রয়োজন। এবারের ব্লগ দিবসের প্রতিপাদ্যে সাইবার আইনের প্রসঙ্গ রয়েছে। আমি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। সাইবার জগতে সাইবার অপরাধকে রুখতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এই জগতের বাসিন্দারাই। আশা করবো সরকার সাইবার আইন প্রণয়নে ব্লগার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহারকারীদের পরার্মর্শ নেবে।

রিয়াজ উদ্দিন, ব্লগার
পুঁজিবাদী,  ভোগবাদী অথবা সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা গনজাগরণ যাকে বলছি তা শোষক শ্রেণীর পক্ষে কথা বলে না; বরং বলে সাধারণ জনতার পক্ষে।
সাইবার পরিসরে আমাদের দেশে এখন বেশ বড় সংখ্যক মানুষের বিচরণ। মজার বিষয় হচ্ছে এই শ্রেণীটির সিংহভাগ এক. তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে, দুই. ছাত্র সমাজের অংশ এবং তিন. মধ্যবিত্ত-শিক্ষিত শ্রেণীর প্রতিনিধি। আর যে কোন জাগরণের বড় নিয়ামক,  পরিচালক, জ্বালানী হচ্ছে এই লোকেরা। সেজন্য বলাই যায় গনজাগরণে সাইবার দুনিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। আর তা ইতিমধ্যে আরব দুনিয়ায় প্রমাণও হয়েছে।

সাইবার আইন সাইবার জগতে বিচরণ করে এমন ব্যক্তির অর্থাৎ নেটিজেনদের ব্যক্তি নিরাপত্তার সাথে সাথে অবশ্যই দেশ-রাষ্ট্রের জন্যও প্রয়োজনীয়। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে সরকার যদি ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক, লুটেরা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে তবে অবশ্যই সাইবার আইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে শৃংখলে আবদ্ধ করতে সচেষ্ট হবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।