ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নিজকে চিনল যে

মুহাম্মদ সিরাজুল হক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১০, ডিসেম্বর ২০, ২০১১
নিজকে চিনল যে

মানবজাতি হল সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাত। কিন্তু এই মানুষের যে রকম হাত, পা, মাথা, চোখ, মুখ ইত্যাদি রয়েছে, তেমনি পশুপাখি ও জীবজন্তুকেও এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়েই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।

মানুষ ক্ষুধা পেলে যেমনি আহার করে, তেমনি পশুপাখিও আহার করে। কিন্তু ভবিষ্যৎ জীবন বা পরকাল নিয়ে পশুপাখির কোন চিন্তা নেই। তারা বিচারের জন্য পরকালে উত্থিত হবে না। পক্ষান্তরে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে আল্লাহপাক এমন জ্ঞান দান করেছেন যা পশুপাখি ও জীবজন্তুকে করেননি। আল্লাহপ্রদত্ত এই জ্ঞানের কারণেই মানুষকে তার হাকিকত জানতে হবে। জানতে হবে আমি কে? কোথা থেকে আগমন করেছি এবং কোথায় আমার গন্তব্য। আর সেখানে কী নিয়ে যাব। বুজুর্গরা বলেছেন, ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু; অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পেরেছে সে তার প্রতিপালক আল্লাাহর পরিচয় লাভ করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘ওয়ানাহ্নু আকরাবু ইলায়হি মিন হাবলিল ওয়াবিদ। ’ অর্থাৎ এবং আমি বান্দার কাছে তার (গর্দানের) শাহ্রগের (ধমনীর) চেয়েও অধিক নিকটবর্তী; (সূরা ক্বাফ : ১৬)। এত নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও বান্দা কেন তাকে পাবে না। তাই আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘ওয়াল্লাজিনা জাহাদু ফিনা লানাহ্দিয়ান্নাহুম সুবুলানা। ’ যারা আমার (সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির) জন্য কঠোর চেষ্টা ও সাধনা করে, আমি অবশ্যই তাদের পথপ্রদর্শন করব; (সূরা আনকাবুত : ৬৯)।

একটি বিষয় লক্ষণীয় এই যে, বাঁশের তৈরি বাঁশি ফুঁ দিলে সুর করে কাঁদে, আর বলে, কেন তাকে তার মূল থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করা হল। তাই সে মূলের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য কাঁদে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ঝরনাধারা এঁকেবেঁকে তার মূলের দিকে ধাবিত হয়। অবশেষে তার মূল উৎস সমুদ্রে গিয়ে মিলিত হয় এবং নিজ অস্তিত্ব বিলীন করার মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করে। একইভাবে মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহের মাধ্যমে আপন অস্তিত্বকে আল্লাহর মধ্যে বিলীন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত শান্তি লাভ করতে পারবে না। বস্তুত, এ পথে রয়েছে অনেক বাধা। প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি মানুষের দেহে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে। যখন এটা নিষ্কলুস থাকে, তখন সমস্ত দেহ স্বচ্ছ ও পবিত্র থাকে। আর এটা যখন পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত থাকে তখন সমস্ত দেহ অস্বচ্ছ ও অপবিত্র হয়ে যায়। এটা হল ক্বালব।

এ অবস্থায় সে নেক আমল ও আল্লাহর জিকিরে স্বাদ পায় না। সুতরাং পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে ক্বালবকে শক্তিশালী করতে হবে। আর ক্বালবকে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করার প্রধান হাতিয়ার হল আল্লাহর জিকির। তাই আল্লাহ বলেছেন, ‘আলা বিজিকরিল্লাহি তাতমাঈন্নুল কুলুব’। নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই ক্বালবে প্রশান্তি লাভ করা যায়। পার্থিব বস্তু দিয়ে ইহকাল ও পরকালের স্থায়ী শান্তি লাভ করা যায় না। কাজেই জিকিরের মাধ্যমে ক্বালবকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর মধ্যে নিজকে বিলীন করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, সমস্ত মানুষের রূহ সৃষ্টির পর আলমে আরওয়াহ বা রূহের জগতে একত্রে আল্লাহপাক জিজ্ঞাসা করেন, ‘আ-লাসতু বিরাব্বিকুম? কালু বালা। ’ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের রব বা প্রতিপালক নই? সমস্ত রূহ জবাবে বলেছিল, হ্যাঁ। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা মানুষের মধ্যে রূহ দিয়ে আলমে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। অস্থায়ীভাবে কিছুদিন থাকার পর দুনিয়া ছেড়ে আলমে বরযখ বা কবরে যেতে হবে। এখানেও মহান আল্লাহর অভিপ্রায় অনুযায়ী অবস্থানের পর হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে প্রত্যেকের জীবনের পাপ-পুণ্যের হিসাব নেয়ার জন্য। সর্বশেষে আমল অনুযায়ী অনন্তকালের সুখ ও পরম শান্তির স্থান বেহেশত প্রদান করা হবে। সেখানে সরাসরি মহান আল্লাহর দিদারের মাধ্যমে পরম তৃপ্তি ও আনন্দ লাভ করবে। আবার পাপের কারণে অনেকে ভয়াবহ শাস্তির স্থান দোজখে নিক্ষেপিত হবে। মূলত এ দুটো হল মানবজাতির সর্বশেষ গন্তব্যস্থল।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।