ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ভোলার 'স্বাধীনতা জাদুঘর' ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
ভোলার 'স্বাধীনতা জাদুঘর' ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন স্বাধীনতা জাদুঘর। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে ভোলার বাংলাবাজারে স্থাপন করা হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর। দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল এ জাদুঘরকে সাজানো হয়েছে মক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকে।

এটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে আসে। এ যাদুঘরের নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে। এ জাদুঘরকে ঘিরে দর্শনার্থীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এখানে এসেই মুগ্ধ হচ্ছেন তারা।

ভোলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের পাশে বাংলাবাজারে তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক স্থাপত্যশৈলির নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ জাদুঘরের প্রথম তলায় লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম এবং প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকে সাজানো হয়েছে। এতে ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ৪৭-এ দেশভাগ ও ভাষা আন্দোলনের দুর্লভ ছবি ও তথ্য রয়েছে। অপর পাশে রয়েছে লাইব্রেরি ও গবেষণাগার।
এছাড়া একই তলায় রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ডিসপ্লে হল রুম। যেখানে প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র।
 
দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ইতিহাসের মুহূর্তগুলোর চিত্রকল্প। তৃতীয় তলায় রয়েছে ৫৮ ও ৬৬-এর আন্দোলন। এছাড়া ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭ মার্চের ভাষণসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের দুর্লভ সব আলোকচিত্র।  

এখানে আছে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অর্জনের সাক্ষী জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহচর তোফায়েল আহমেদের সংগ্রামী জীবনের আলোকচিত্র। রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের আলোকচিত্র।  

জাদুঘরটির একটি অংশে বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এখনে দর্শনার্থীরা ডিজিটাল টাচ স্ক্রিন ব্যবহার করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ও তথ্য জানতে পারছেন।  

ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ জাদুঘরটি নির্মাণ করেন। ২০১৮ সালের দিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন।  

মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে আলোকচিত্রীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ‘স্বাধীনতা জাদুঘরে’। দীর্ঘ ২ বছর ধরে জাদুঘরটি দ্বীপজেলায় আলো ছড়িয়ে আসছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত মানুষ জাদুঘরে ছুটে আসেন। তথ্যভিত্তিক ভিডিও ও দুর্লভ ছবির সংগ্রহ দেখে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ রয়েছে।  
বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্যান্য দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এই জাদুঘর। জাদুঘরটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সব শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে। স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন এই জাদুঘরটি দেখতে ভ্রমণ পিপাসুরা আসছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে নতুন প্রজন্মের জন্য এক তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করছে স্বাধীনতা জাদুঘরটি।

ডিজিটাল স্বাধীনতা জাদুঘরের নিচতলায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বঙ্গভঙ্গের দুর্লব ছবি আছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব বরেন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী তোফায়েল আহমেদের দুর্লভ ছবি রয়েছে। তৃতীয় তলায় রয়েছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি।  

বাংলাবাজার নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সোনালি ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর স্মৃতি। উপ-শহর বাংলাবাজার এলাকায় ৬২ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয়েছে ফাতেমা খানম কমপ্লেক্স। এখানেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফাতেমা খানম মসজিদ, ফাতেমা খানম বৃদ্ধাশ্রম, বাংলাবাজার ফাতেমা খানম ডিগ্রি কলেজ, ফাতেমা খানম মাধমিক বালিকা বিদ্যালয়, ফাতেমা খানম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাতেমা খানম শিশু পরিবারসহ বেশ কিছু শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে নির্মিত হচ্ছে আজাহার-ফাতেমা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।  

ফাতেমা খানম’ কমপ্লেক্স তোফায়েল আহমেদের একটি স্বপ্ন। তিনি তার নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় এ কমপ্লেক্সের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সাবেকমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তিনি তার নিজের নামে কোনো স্থাপনা করেননি। তিনি তার বাবা-মায়ের নামে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এসব স্থাপনা দেখতে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে দর্শনার্থীদের।
বাংলাবাজার স্বাধীনতা জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. নকিব বলেন, স্বাধীনতা জাদুঘর দেখতে এখানে প্রতিদিন দর্শনার্থী আসেন। আগে ৫০০/৬০০ দর্শনার্থী এলেও বর্তমানে করোনার কারণে দর্শনার্থী কিছুটা কম। বর্তমানে ১৫০ থেকে ২০০ জন দর্শনার্থী আসেন। এখানে কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।  

স্বাধীনতা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি একদিন থাকবো না, ইতিহাস থাকবে। এ জাদুঘরের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। এখানে এলেই মানুষের প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।   

ঢাকা থেকে যেভাবে স্বাধীনতা জাদুঘরে আসা যাবে: ঢাকা-ভোলা রুটে লঞ্চে উঠে সরাসরি ভোলা খেয়াঘাট নামতে হবে। এরপর রিকশা, টেম্পু বা অটোরিকশায় করে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চ টার্মিনালে নামতে হবে। সেখানে থেকে বাসে করে বাংলাবাজার নামলে স্বাধীনতা জাদুঘরের দেখা মিলবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।