ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হগোলে কি আর পড়তে পারে?

জিএম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
হগোলে কি আর পড়তে পারে? ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: মোহাম্মদ মোস্তফার (১৮) বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রতনপুর থানার নাদীমনগরে। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান তিনি।

২০০২ সালে কৃষক পরিবারে জন্ম তার। পাঁচ ভাই-বোনের বড় পরিবারে বেড়ে উঠলেও স্কুলজীবন থেকেই তার স্বপ্ন ছিলো এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পাস করার।  

প্রত্যাশা ছিলো ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার। ঢাকা শহর ঘুরে দেখার। কিন্তু তার সব স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়।

বৃদ্ধ বাবার একার আয়ে তাদের পাঁচজনের সংসার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। আর তখনই মোস্তফাকে বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে হয়। কিন্তু গ্রামের টুকিটাকি কাজ করে সংসার চলে না তাদের। কোনো উপায় না দেখতে পেয়ে ২০১৫ সালে মোস্তফা চলে আসেন ঢাকায়। মোস্তফা ঠিকই রাজধানীর অলিগলি ঘুরে দেখছে কিন্তু গলায় তার বাদামের ঝুড়ি। একবুক চাপাকষ্ট নিয়ে অলিগলিতে তিনি বাদাম বিক্রি করে এখন। ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ, সঙ্গে সংসার খরচ জোগাতে হচ্ছে তাকে। ছোটবেলার সেই স্বপ্নগুলো আজ এভাবেই পূরণ হচ্ছে তার।

মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, মিরপুর গুদারাঘাট এলাকার মেসে থাকি। সকাল নয়টা থেকে শুরু করে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকার অলিগলিতে বাদাম বিক্রি করে বেড়াই। মাস গেলেই কমপক্ষে ১৪-১৫ হাজার টাকা লাগে। প্রতিমাসে আমার বড় ভাই ভাইয়ের পড়াশোনার জন্য খরচ দিতে হয় ছয় হাজার টাকা, মা-বাবার জন্য পাঁচ হাজার টাকা বাড়ি পাঠাতে হয়। নিজের খরচ আছে তিন হাজার টাকা। কাজ না করলে ভাই-বোনদের পড়াশোনা করাবো কিভাবে?

নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি। বড় ভাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে কাদেরিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল পড়ছেন। পড়াশোনা শেষ করে একটা ভালো চাকরি পেলে আমার কষ্ট অনেকটা কমে যাবে। তারপর নিজের চিন্তা করবো।

মোস্তফা আরও বলেন, প্রতিদিন আমাকে পাঁচ কেজি বাদাম বিক্রি করতে হয়। যদি রাজধানীতে মিটিং থাকে তাহলে প্রতিকেজি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়, মিটিং না থাকলে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। সারাদিন বিক্রি করে কখনো ৪০০শ আবার কখনো ৫০০শ টাকা আয় করতে পারি।

নিজে পড়াশোনা না করে ভাই-বোনদের পড়াশোনা করাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মোস্তফা বলেন হগোলে কি পড়তে পারে?

প্রায় প্রতিদিনই বাদাম কেনেন মেসার্স টিম্বার ট্রেডার্সের মালিক সোহেল।

সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, মোস্তফার সংগ্রামের কাহিনী শুনেছি। কিন্তু কখনো কোনো সাহায্য সহযোগিতা চায় না। এমনকি দিতে চাইলেও নিতে চায় না। মাজার রোডের সব ব্যবসায়ীরা তাকে চেনে। ছেলেটা অত্যন্ত ভালো, তার কথা, আমি কষ্ট করে বড় ভাইকে পড়াশোনা করাবো, মা-বাবার সেবা-যত্ন করবো। আল্লাহ আমার কপালে যা লিখেছে তাই হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
কেএআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।