ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

জরাজীর্ণ আশ্রয়ণে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
জরাজীর্ণ আশ্রয়ণে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি জরাজীর্ণ আশ্রয়ণে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: ঝুঁকিপূর্ণ বসতি, বিশুদ্ধ পানির সংকট আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে ভোলার মাঝের চরে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দাদের জীবন।

দীর্ঘদিনেও স্থানটি মেরামত না করায় এসব ঘর এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এতে চরম দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। এছাড়াও সেখানকার পাঁচটি আশ্রয়ণে ৫০০ পরিবারের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বাধ্য হয়েই সেখানে দেড় হাজার পরিবার গাদাগাদি করে বাস করছেন। এ অবস্থায় খুব শিগগিরই মাঝের চরে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর মেরামত ও নতুন দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

...সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে নদী বেষ্টিত এই দ্বীপচরটি ভোলা সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর। এখানেই বড়াইপুর ও রামদেবপুর নামে পাঁচটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে রয়েছে। যেখানে ৫০০টি ঘরে ৫০০ পরিবার থাকার কথা থাকলেও সেখানে থাকছেন ১৪০০ পরিবার। শুধু তাই নয়, নির্মাণের পর থেকে গত ২৬ বছরেও মেরামত না করায় এসব ঘরের এখন জীর্ণ দশা। আশ্রয়ণে ১৬টি টিউবওয়েলের মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে আছে। এতে পানির সমস্যায় ভুগছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

বেশিরভাগ ঘরই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা। ঝড়-বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করেই গাদাগাদি করে থাকছেন সেখানকার বাসিন্দারা। এতে চরম দুর্ভোগে মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা লাইজু বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ঘর খুবই জরাজীর্ণ, তারমধ্যে ছেলে-মেয়ে, স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ সাতজন থাকছি। শীতের সময় বাচ্চাদের ঠাণ্ডা লাগে। বর্ষার সময় চালা দিয়ে পানি পড়ে।  
এখানে থাকতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

...সামসুদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান বলেন, আমরা একটি ঘরে গাদাগাদি করে ১৪ জন থাকি। অনেক কষ্ট হয় এখানে থাকতে।

সালমা ও নীলু বেগম বলেন, আশ্রয়ণে পানির সমস্যা, ঘরবাড়ি জরাজীর্ণ, স্যানিটেশন সমস্যা রয়েছে। আমাদের এখানে আরো আশ্রয়ণ থাকলে ভালো হতো। আশ্রয়ণের অনেক টিউবওয়েল নষ্ট হওয়ার দূরে গিয়ে পানি আনতে হয়।  

আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসতির চারপাশে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশের মধেই থাকছেন বাসিন্দারা। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢোকে। বর্তমানে প্রত্যেকটি পরিবারে সদস্য বেড়ে যাওয়ায় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের। অনেকের আবার ঠাঁই মিলছে না সেখানে। তাই মাঝের চরে আরও আশ্রয়ণ কেন্দ্র স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রব বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা খুব কষ্টে বসবাস করছে। এরমধ্যে একবারও মেরামত হয়নি। আমাদের এখানোর আরও পাঁচটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র দরকার।

মাঝের চরে নতুন আরও দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ এবং পুরনো ঘর মেরামতের আশ্বাস দিয়ে ভোলার জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, আমি নিজে ওই আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলো সরেজমিনে দেখেছি। জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে আরও দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আশাকরছি খুব শিগগিরই সেখানে আশ্রয়ণ কেন্দ্র হবে। যেসব আশ্রয়ণের ঘর জরাজীর্ণ রয়েছে সেগুলো বরাদ্দ পেলে খুব শিগগিরাই সংস্কার করা হবে।

১৯৯৬ সালে ভূমিহীনদের জন্য মাঝের চরে পাঁচটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করার পর সেগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।