মৌলভীবাজার: নানান প্রেক্ষাপট বিবেচেনায় ‘রক্ষক’ শব্দটি আজ কিছুটা বিতর্কিত! কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্ষকরা ভক্ষক করতে পটু বলে পুরো এই শব্দটির মধ্যেই যেন কালিমা লেগে আছে। তবে, এই রক্ষক ভক্ষক নন, সত্যিকারার্থেই ক্ষণিকের রক্ষাকর্তা।
সম্প্রতি এই ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। তিনি একটি বা দুটি নয়, শতাধিক বাইসাইকেলের দৈনিক পাহারাদার। এক পাহাড়ি এলাকা থেকে অন্য পাহাড়ি এলাকায় শ্রমিক লোকজন আসেন বাইসাইকেলে চড়ে।
কিন্তু অতি দুর্গম টিলার জন্য একেবারে গন্তব্যের শেষ সীমানায় পৌঁছুতে পারেন না। প্রায় গন্তব্যের তীরে এসে থেমে যেতে হয়। আর এই থেমে যাওয়াটার পরবর্তী নিরাপত্তা হিসেবে অধিস্থিত হয়ে থাকেন এই পাহারাদার ব্যক্তি। তার নাম কার্তিক ব্যানার্জী। তিনি বলেন, ‘এখানে এই যে বাইসাইকেলগুলো দেখছেন, এ সাইকেলগুলো আমাকে পাহারা দিতে হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সাইকেল প্রতি পাই ১০ টাকা করে। ’
কার্তিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই সাইকেলগুলো যেখানে রাখা আছে এখান থেকে নিরালা খাসিয়াপুঞ্জির উচ্চতা প্রায় আটশ ফুট ওপরে। বাইসাইকেল নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই চালকরা আমার কাছে তাদের সাইকেল জমা রেখে তারপর আরও দুই-এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে টিলা ডিঙিয়ে তারপর কাছে গিয়ে পৌঁছেন।
নিরালাপুঞ্জিতে দৈনিক মজুরি কাজ করতে আসা এক বাইসাইকের মালিক পল সুজিয়াং বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১১৭টি বাইসাইকেল এখানে থাকে। আমরা কার্তিকের কাজে আমাদের সাইকেলগুলো জমা রেখে পুঞ্জিতে কাজ করতে যাই। তারপর কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় সাইকেলগুলো আবার নিয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, নির্জন পাহাড়ি উপত্যকা নিরালাপুঞ্জি। যোগাযোগের সাধারণ যানের বালাই নেই কোনো। মাঝেমধ্যে পুরনো আমলের জাপানি মিতসুবিসি গাড়ি এই পথে চলাচল করে। পুঞ্জিবাসীদের আনা-নেওয়ার কাজে। এটি শ্রীমঙ্গল নিরালাপুঞ্জির পথে বাইসাইকেলের এবং বিচিত্র বিশ্রামাগার। যেখানে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাইসাইকেলগুলো বিশ্রাম নিতে পারে।
পুঞ্জি থেকে ফিরে আসার সময় আবারও দেখা গেল বাইসাইকেল রক্ষক কার্তিকের চোখ বন্ধ। হঠাৎ হাত নেড়ে উঠার পর্ব দেখে জানা গেল তিনি জেগে আছেন। এই দৈনিক পাহাড়ি নিসঙ্গ পটভূমিতে তার অদেখা সজাগ সতর্ক মনোভাব নিস্তেজ হয়ে যায়নি। তা দিব্বি জেগে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২১
বিবিবি/এএটি