ভিনি, ভিডি, ভিসি— এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। রোমান জুলিয়াস সিজারের এই কথাটি বেশ প্রচলিত।
ফুটবলাঙ্গনে সুসময়ের বন্ধু বলেই তরফদার রুহুল আমিন বেশ সমাদৃত। চট্টগ্রাম আবাহনীর হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই ব্যবসায়ীর। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান। অচিরেই চট্টগ্রাম আবাহনীর পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি।
তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরই চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে সরে দাঁড়ান তরফদার। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এবারের প্রিমিয়ার লিগে দল গঠন করা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন ফুটবলাররা। কারণ ক্লাব থেকে প্রাপ্ত অর্থই ফুটবলারদের আয়ের মূল উৎস। তারা বাফুফেতে আবেদনও করেন এই বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার। কিন্তু ক্লাবকে বিপদে ফেলে আর ফিরে আসেননি তরফদার।
শেষ পর্যন্ত সাবেক ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি এবং বর্তমানে খেলা চালিয়ে যাওয়া দুই সিনিয়র ফুটবলার মামুনুল ইসলাম মামুন ও রেজাউল করিম রেজার প্রচেষ্টায় শেষ মুহূর্তে দল গঠন করে চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে এখনো আর্থিক নিশ্চয়তা পাননি ক্লাবটির ফুটবলাররা।
২০১৫ সালে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয়ে অনুষ্ঠিত হয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল তরফদারের সংস্থাই। কিন্তু তিনটি আসরে পর এই টুর্নামেন্ট আর আলোর মুখ দেখেনি। তরফদারও মুখ ফিরিয়ে নেন।
ফুটবলে সম্পৃক্ত হতে তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাফুফে প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা। ২০১৬ সালে বাফুফে নির্বাচনে সালাউদ্দিনের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট সালাউদ্দিনের নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা হয় তার মুখ থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত আর্থিক হিসাব-নিকাশের জটিলতায় সেই সুসম্পর্ক আর টেকেনি।
২০১৮ সাল থেকেই সালাউদ্দিন-তরফদারের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে। ২০১৯ সাল থেকে প্রকাশ্যে সালাউদ্দিনের সমালোচনা শুরু করেন তরফদার। ২০২০ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান তিনি। এর পেছনে কারণ হিসেবে দোষারোপ করেন একসময়ের কাছের মানুষ সালাউদ্দিনকেই।
২০১৬ সালে আত্মপ্রকাশ করে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। তরফদার রুহুল আমিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাইফ গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয় ক্লাবটির পথচলা। পরের বছরই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ক্লাবটি। গঠন করে যুব দলও। ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের পথচলা।
২০২০ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ফুটবল থেকে অনেকটাই নিজেকে গুটিয়ে নেন তরফরদার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম শেষ হওয়ার পরপর ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় সাইফ স্পোর্টিং।
সেই মৌসুমে তিনে থেকেও ক্লাবটির এমন সরে যাওয়া অবাক করে দেয় পুরো ফুটবলাঙ্গনকে। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায় প্রায় ৪০ ফুটবলারের ভবিষ্যৎ। এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের পেছনে কার ভূমিকা ছিল, সেটা আর নিশ্চয়ই বোঝার বাকি নেই। সাইফ স্পোর্টিং যুব দল চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও ২০২৩-২৪ মৌসুমের পর সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তরফদারের স্বপ্নই ছিল বাফুফের সভাপতি হওয়া। কিন্তু সেখানে বড় বাধা হয়ে ছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। দেশের কিংবদন্তি এই ফুটবলার গত ১৪ সেপ্টেম্বর আসন্ন বাফুফে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। তা শুনেই ধুলোয় মিশে যাওয়া সেই স্বপ্ন আবারও জাগ্রত হয় তরফদারের মনে। নিজেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে ২৪ ঘণ্টাও সময় নেননি।
শুধু তা-ই নয়, আয়োজন করে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে সেই ঘোষণা দেন তরফদার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের সমর্থনও জুগিয়েছেন তিনি। সভাপতি পদপ্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে।
অথচ গত ১৫ বছর রাজনৈতিক সুবিধা পেতে ফুটবল ছাড়াও দাবা, সুইমিং টেনিসে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক টুর্নামেন্টের আয়োজক এবং পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তরফদার। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নিজের রূপ বদলে ফেলার চেষ্টায় আছেন। চাইছেন ফুটবলের সভাপতির মসনদে বসতে। কিন্তু প্রতিবারই সুসময়ে হাজির হওয়া সুবিধাবাদী এই সংগঠকের হাতে দায়িত্ব উঠলে বরং আরও পিছিয়ে পড়বে ফুটবল। এমনটাই ধারণা অনেক বাফুফে কাউন্সিলরের।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
এআর/এএইচএস