ঢাকা, রবিবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ফুটবল

দ্য অ্যাথলেটিকের বিশ্লেষণ/

কে হবে ক্লাব বিশ্বচ্যাম্পিয়ন—চেলসি না পিএসজি?

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৪, জুলাই ১৩, ২০২৫
কে হবে ক্লাব বিশ্বচ্যাম্পিয়ন—চেলসি না পিএসজি? ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে চেলসি ও পিএসজি/সংগৃহীত ছবি

প্রথমবারের মতো আয়োজিত ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপ প্রায় এক মাস ধরে চলার পর এখন ফাইনালে টিকে আছে মাত্র দুটি দল—পিএসজি ও চেলসি।

আজ রোববার রাতে নিউইয়র্ক সিটির কাছে অবস্থিত ইস্ট রাদারফোর্ডে মেটলাইফ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে ইউরোপীয় দুই চ্যাম্পিয়ন।

কনফারেন্স লিগ জয় করে আসা চেলসি এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী পিএসজি—দুই দলই তাদের নিজ নিজ ফর্ম ধরে রেখেই উঠেছে এই ফাইনালে।

চেলসি কোচ এনজো মারেস্কার নেতৃত্বে দারুণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে, স্কোয়াডে নিয়মিত রোটেশন সত্ত্বেও। অন্যদিকে, লুইস এনরিকের পিএসজি যেন ভিনগ্রহের দল। ছয় ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করে ফাইনালে এসেছে তারা, পথে বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের মতো হেভিওয়েট দলকে বিধ্বস্ত করে।

উল্লেখযোগ্য যে, সর্বশেষ ২০১৫-১৬ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, যেখানে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলে জয়ী হয়েছিল পিএসজি।

চেলসি কীভাবে ঠেকাবে পিএসজির উইং-আক্রমণ?

ইউরোপের বড় দলগুলো জানে, পিএসজির সঙ্গে খোলামেলা লড়াইয়ে নামা প্রায় আত্মঘাতী। ধীর-সাবলীল পজেশন হোক বা ক্ষিপ্র পাল্টা আক্রমণ—সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত এনরিকের দল। তবে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো উইং দিয়ে আক্রমণ।

ওসমান দেম্বেলে, ব্র্যাডলি বারকোলা, দেজিরে দুয়েদের ড্রিবলিং দক্ষতা ও গতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে দেয় পিএসজি। এ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি টেক-অন করেছেন দুয়ে (৪১ বার), তারপর খভিচা কাভারাটস্খেলিয়া (৩৪) ও বারকোলা (২২)।

ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনালের কিংবদন্তি কোচ ও বর্তমানে ফিফা'র গ্লোবাল ফুটবল ডেভেলপমেন্টের প্রধান আর্সেন ওয়েঙ্গার বলেন, “পিএসজির খেলোয়াড়রা সবাই প্রথমে ওয়ান-অন-ওয়ানে যায়, পরে পাস করে। তারা কাউকে ভয় পায় না। এটাই আধিপত্য বিস্তারকারী দলের বৈশিষ্ট্য। ”

চেলসির জন্য সম্ভবত সবচেয়ে কার্যকর উপায় হবে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোতাফোগোর পথ অনুসরণ করা—ডিপ ব্লকে রক্ষণ সামলানো, তারপর সুযোগ বুঝে পাল্টা আক্রমণে ওঠা।

পিএসজির উইং সুইচ-আক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুত থাকতে হবে চেলসিকে

এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ‘সুইচ অব প্লে’ করেছে পিএসজি—৫৭ বার। অর্থাৎ, এক দিক থেকে আরেক দিকে দ্রুত পাস বদলে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার কৌশল তাদের স্পষ্ট।

বাঁ প্রান্তে কম্বিনেশনের পর বল চলে যায় ডান প্রান্তে—সেই ফাঁকা জায়গায় আক্রমণে গিয়ে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করে তারা। মাদ্রিদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে কভারাটসখেলিয়ার পাস থেকে হাকিমি এবং দেম্বেলের দৌড়ে সেই রকমই একটি মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল।

তীব্র গরমে খেলতে নামা চেলসিকে তাই দ্রুত এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে রক্ষণ গোছাতে হবে, না হলে উইং দিয়ে বারবার ছিন্নভিন্ন করবে পিএসজি।

দুই দলের ফুল-ব্যাকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

চোট-নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মারেসকা তার দল নিয়ে যথেষ্ট এক্সপেরিমেন্ট করেছেন—৬ ম্যাচে মাঠে নামিয়েছেন ২৭ জন খেলোয়াড়, যা এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ।

চেলসির জন্য বড় প্রশ্ন হলো কে নামবে স্ট্রাইকার হিসেবে—নিকোলাস জ্যাকসন, লিয়াম ডেলাপ না হুয়াও পেদ্রো?

তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ফুল-ব্যাক নির্বাচন। মার্ক কুকুরেয়া যদি সামনে যান, তবে রিস জেমস পেছনে থেকে ব্যাক-থ্রি গঠন করেন। আবার মালো গুস্তো খেললে কুকুরেয়া পেছনে থেকে গড়েন রক্ষণভাগের গঠন।

তবে পিএসজির হাকিমি ও নুনো মেন্ডেস নিজে থেকেই হাফ-স্পেস দখল করে থাকেন। ফলে চেলসির ফুল-ব্যাকরা কতটা উপরে উঠতে পারবেন, তা ম্যাচের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।

চেলসি যদি পিএসজির প্রেস ভাঙতে চায়, তবে তাদের দ্রুতগতির পাল্টা আক্রমণই হতে পারে বড় অস্ত্র। এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ‘ডিরেক্ট অ্যাটাক’ ও ‘ফাস্ট ব্রেক গোল’ করেছে চেলসি—১৯টি আক্রমণ থেকে ৬ গোল।

ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে পেদ্রোর গোল ছিল সেই ধরনের আক্রমণের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

অবশ্য পিএসজির পাল্টা আক্রমণও ভয়ংকর। তাই জায়গা পেলে চেলসিকে সাহস দেখিয়ে খেলোয়াড় এগিয়ে এনে চাপ তৈরি করতে হবে।

সম্ভাব্য ফল কী হতে পারে?

দ্য অ্যাথলেটিক-এর ম্যাচ প্রেডিকশন মডেল বলছে—৯০ মিনিটের মধ্যে পিএসজির জয়ের সম্ভাবনা ৬৪ শতাংশ, চেলসির মাত্র ১৬ শতাংশ। ড্র হওয়ার সম্ভাবনা ১৯ শতাংশ।

সবচেয়ে সম্ভাব্য স্কোরলাইন: পিএসজি ২-১ চেলসি।

তবে ইন্টার মিলানকে ৫-০ ও মাদ্রিদকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা পিএসজি জানিয়ে দিয়েছে—তারা যে কোনো স্ক্রিপ্ট বদলে দিতে পারে।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।