আর্জেন্টিনার জাতীয় পানীয় মাতে ফুটবল জগতে এক বিশেষ জায়গা দখল করে নিয়েছে। এটি শুধু পানীয় নয়—ড্রেসিংরুমে ঐক্য, বন্ধুত্ব ও আলাপচারিতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে ম্যাচের আগে নির্দিষ্ট সময়ে এর ব্যবহার ফুটবলারের পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মাঠে নামার আগে মাতে
দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনা–কলম্বিয়া ম্যাচের দিন। দলের বাস থেকে প্রথম নামলেন লিওনেল মেসি—মুখে হাসি, হাতে মাতে সেট। তার সঙ্গে রদ্রিগো দে পল, যিনি ঢোকার আগে শেষবারের মতো এক চুমুক নিলেন। গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস হাতে বালদো ব্র্যান্ডের ইয়েরবা মাতে, যা খেলোয়াড়দের মধ্যে জনপ্রিয়। এরপর এনজো ফার্নান্দেস, হুলিয়ান আলভারেস এবং নবাগত ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুনো—প্রত্যেকের হাতেই থার্মোস আর মাতে।
এ দৃশ্য শুধু আর্জেন্টিনার নয়—উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে কিংবা ইউরোপের বড় বড় লিগেও এখন একই ছবি। অঁতোয়া গ্রিজমান, পল পগবা, মোহামেদ সালাহ থেকে শুরু করে সন হিউং-মিন পর্যন্ত অনেকে মাতে পান করেন।
কেন খেলোয়াড়দের এত আগ্রহ?
প্রথমত, এটি সংস্কৃতির অংশ—দলীয় সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও আড্ডার প্রতীক। বর্তমানে প্রায় ৯৯ শতাংশ ফুটবলারের নিজস্ব মাতে সেট থাকে—নিজের নাম, পরিবারের নাম বা জার্সি নম্বর খোদাই করা মাতে কাপ, ব্যক্তিগত আকারের ধাতব বম্বিলা (স্ট্র), আর সাজানো থার্মোস।
পুষ্টিগত ও শারীরবৃত্তীয় প্রভাব
ইয়েরবা মাতে-তে থাকে ক্যাফেইনের মতো এক উপাদান—মাতেইন। এর পরিমাণ ব্র্যান্ড, প্রস্তুতি ও পানির তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ০.৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। একটি মাতে কাপ থেকে গড়ে ৮০ থেকে ১৫০ মি.গ্রা. মাতেইন পাওয়া যায়।
আর্জেন্টাইন পুষ্টিবিদ আইলেন সোরিয়া জানান, মাতেইন স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, মনোযোগ বাড়ায়, ক্লান্তি কমায়, প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়ায়—যা ফুটবলারের জন্য উপকারী।
চিকিৎসক মাতিয়াস গারাভেন্তো খেলোয়াড়দের মাতে খেতে বাধা দেন না, তবে প্রত্যেককে নিজের সেট ব্যবহার করতে বলেন, যাতে ভাইরাস বা সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি না থাকে।
কখন মাতে এড়ানো ভালো?
আর্জেন্টাইন চিকিৎসক গনসালো আলসুয়া সতর্ক করেন, মাতেইনের প্রাকৃতিক ডায়ুরেটিক প্রভাব আছে, যা প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে সামান্য পানিশূন্যতা ঘটাতে পারে। তাই ম্যাচের অন্তত ৩০–৬০ মিনিট আগে মাতে এড়ানো ভালো।
আটলান্টা ক্লাবের চিকিৎসক রদ্রিগো রেগেরা আরও কঠোর—তিনি ম্যাচের কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে মাতে না খাওয়ার পরামর্শ দেন, যদিও অনেক খেলোয়াড় এই নিয়ম এড়িয়ে যান।
তবে সোরিয়া ও গারাভেন্তো মনে করেন, স্বল্প পরিমাণ মাতে ম্যাচের আগে বা পরে কোনো বড় সমস্যা তৈরি করে না, কারণ খেলোয়াড়রা সাধারণত ম্যাচের আগে পর্যাপ্ত জল পান করে থাকেন।
সবমিলিয়ে মাতে ফুটবলারের স্নায়বিক উদ্দীপনা, মনোযোগ ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, তবে বেশি পরিমাণে খেলে সামান্য ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই পেশাদার পর্যায়ে ম্যাচের ঠিক আগে এটি এড়ানো শ্রেয়।
তবুও, আর্জেন্টিনাসহ লাতিন ফুটবল সংস্কৃতিতে মাতে শুধুই একটি পানীয় নয়—এটি ঐক্য, বন্ধুত্ব ও সঙ্গীর প্রতীক। জয়–পরাজয় যাই হোক, গরম পানির থার্মোস আর মাতে কাপ সবসময় তাদের সঙ্গে থাকে।
তথ্যসূত্র: টিওয়াইসি
এমএইচএম