ঢাকা, সোমবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ সফর ১৪৪৭

ফুটবল

আর কত সাফল্য পেলে ভাগ্য ফিরবে আফঈদাদের?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৪৪, আগস্ট ১৭, ২০২৫
আর কত সাফল্য পেলে ভাগ্য ফিরবে আফঈদাদের? ছাদখোলা বাসে সাফজয়ী নারী ফুটবল দল | ফাইল ছবি

দেশের নারী ফুটবলের কথা উঠলেই মনে পড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা— ‘কেউ কথা রাখেনি’। কবিতায় সুনীল বলছেন— ‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি/ ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল/ শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে/ তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো,/ কিন্তু সেই বোষ্টুমী, আর এলো না/ পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি।

নারী ফুটবলের অবস্থাও অনেকটা এমনই। নানান সময় নানান প্রতিশ্রুতি মিললেও নারী ফুটবলারদের প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) তৎপরতা দেখা যায় কমই। আর্থিক সংকট থেকে শুরু করে আবাসন সমস্যা শুরু থেকেই ছিল নারী ফুটবলে। নানান সময়ে সেই সব সমস্যা সমাধানের কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে ধীর গতিতে। নারী ফুটবল সফলতার দিকে যে গতিতে এগিয়েছে, তাদের সমস্যা সমাধানের পথে বাফুফের গতি ছিল ঠিক তার উল্টো!

টানা দুটি সাফ জয় করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা, তা পুরোনো খবর। ইতোমধ্যেই নারী ফুটবল দল এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে। সেই সঙ্গে অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দলও এশিয়ান কাপে নাম লিখিয়েছে। নারী ফুটবলে সবাচাইতে আলোচিত সমস্যা হচ্ছে অর্থ সংকট। নারী ফুটবলারদের বেতন-ভাতা দেওয়া থেকে শুরু করে বিদেশ সফরে পাঠাতেও বাফুফের রয়েছে অর্থ সংকটের অজুহাত। নারী ফুটবলের শুরুটা ছিল শূন্য থেকে। একদম শূন্য থেকে শুরু করা নারী ফুটবল ধীরে ধীরে এগিয়েছে বাফুফের হাত ধরেই। ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় থাকা ফুটবলারদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামোতে যেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু লম্বা সময়। বিভিন্ন সময়ে বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলনও করতে হয়েছে নারী ফুটবলারদের।

২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়েরা কত টাকা করে মাসিক ভাতা পেত জানেন? ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে তারা যখন সাফ চ্যাম্পিয়ন হন, তারপর তারা বেতন বাড়ানোর জন্য আবেদন-নিবেদন করতে থাকেন। এখন সাবিনা, মারিয়াদের মতো সিনিয়রদের বেতন ৫৫ হাজার করা হয়েছে। ছোটদের বেতন এখনো ১০ হাজারই রয়ে গেছে। ভাবছেন, ভালোই তো! কিন্তু এই বেতনও অনিয়মিত। বাফুফের সভাপতি ঘোষণা দিয়েছেন, চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের দেড় কোটি টাকা দেওয়া হবে, এটা মেয়েরা এখনো পাননি। খেলার জন্য মেয়েদের ৫ হাজার, ১০ হাজার টাকা করে ম্যাচ ফি পাওয়ার কথা ছিল, তাও তাদের দেওয়া হয়নি।

নারী ফুটবলারদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলায়। গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ জন ফুটবলার থাকেন বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলায়। এত সংখ্যক খেলোয়াড়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাট বসানোর জায়গা নেই সেখানে। যে কারণে বাফুফে তৈরি করে দিয়েছে দোতলা খাট। কেউ নিচের খাটে ঘুমান, কেউ উপরের খাটে। আপনি ভাবতে পারেন, এই মেয়েরাই দোতলা খাটে থেকে টানা দুইবার সাফ জিতেছেন, দুটি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছেন!

নারী ফুটবলের আরেক বড় অন্তরায়—প্রশিক্ষণ সুবিধা। অনুশীলনের জন্য নির্দিষ্ট মাঠ নেই। সবেধন নীলমণি কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ও বাফুফে ভবন সংলগ্ন টার্ফেও চলছে সংস্কার কাজ। যদিও জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। তবে সেখানে নিয়মিত খেলা কিংবা অনুশীলন করার সুযোগ পাওয়ার নিশ্চয়তাও নেই।

বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণও বলেছেন এসব সমস্যার কথা। এসব সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।  নারী ফুটবলারদের জন্য আরও উন্নত জিম এবং ট্রেনিং ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এসব সংকট নিরসনে কাজ করছে বাফুফে। তবে কবে নাগাদ এসব সমস্যা সমাধান হবে, সে বিষয়ে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা।  

এসব সমস্যার সমাধানে আরও স্পন্সর প্রয়োজন, এমনটাই শোনা যায় বাফুফের কাছ থেকে। নারী ফুটবল এখন দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এরপরও নারী ফুটবলে প্রয়োজনীয় স্পন্সর না পাওয়ার ব্যর্থতায় দায় নেবে কে? ঠিক আর কতটা সফল হলে নারী ফুটবলারদের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে, তা সবার কাছেই অজানা।

এআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।