ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

প্রকৃতির মাঝে তারুণ্যের ফুটবল

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
প্রকৃতির মাঝে তারুণ্যের ফুটবল ছবি: দীপু মালাকার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে: চারদিকে শুনশান নীরবতা। আষাঢ়ের শেষ ভাগে আকাশে মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি খেলা।

গাছ-গাছালি কখনো গাঢ় সবুজ আবার কালচে সবুজ। অপরুপ শোভা ছড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সৌন্দর্য পুরোটা বিলিয়ে দিয়ে যেন ঘুমিয়েই পড়েছে নীরবতায়!

ঈদের ছুটি শেষ হলেও শহরবাসী অনেকেই এখনো যার যার গ্রামে পরিবার-পরিজনের সাথে। উদ্যানের এমন শান্ত পরিবেশ যেন পুরো রাজধানীরই প্রতিচ্ছবি। ঢাকা যে এখনও ফাঁকা! যা শহরের মানুষগুলোর কাছে বড্ড বেশি অচেনা। এমন সুযোগে প্রকৃতিও মেতেছে সবুজের খেলায়।

যে জায়গায় হাজারও মানুষ সময় কাটান, বিশ্রাম নেন গাছগাছালির অপরূপ শোভায় সজ্জিত সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে অচেনা লাগা তো স্বাভাবিকই।

উদ্যানের বিস্তৃত জায়গা নীরবতায় আচ্ছন্ন থাকলেও চেনা রূপে পাওয়া গেল স্বাধীনতা স্তম্ভের কৃত্রিম জলাধারের পাশের মাঠটিকে। তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস এখানে। প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে ফুটবলের গতিময়তা।

ওরা সবাই একটি পার্সেল সার্ভিস কোম্পানির কর্মী। সন্ধ্যার পর শুরু হয় এসব তরুণদের রুটি-রোজগারের সংগ্রাম। চলে মধ্যরাত অবধি। বেলা করে ঘুম থেকে উঠে বিজয় নগর থেকে চলে আসেন উদ্যানের মাঠে।

প্রায় দেড় বছর ধরে উদ্যানের মাঠ ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক ওদের। শুকনো মৌসুমে ক্রিকেট আর বর্ষাকালে ফুটবল। কর্মব্যস্ততার পর অবসরে নির্মল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে খেলাধুলাকে।

খেলাপাগল এসব তরুণদের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায়। সবাই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। এক কোম্পানিতে কাজ করেন, থাকেনও কাছাকাছি। একই এলাকা, একই সম্প্রদায়ের এই ২০ তরুণ মিলে তৈরী করেছেন ফুটবল টিম। টুর্নামেন্টেও অংশ নিচ্ছে ওরা।

ঈদের পরদিন থেকে আশুলিয়ার কলেজ মাঠে সাড়ে ৪ হাজার টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে অংশ নেন নকআউটভিত্তিক ফুটবল ‍টুর্নামেন্টে। ৮ দলের লড়াইয়ে প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে (সেমিফাইনাল) হারতে হয় ওদের। তারপরও ফুটবল থামিয়ে দেয়নি ওরা। কিভাবে থামাবে? ওদের কাছে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যমই যে খেলাধুলা!

খেলাধুলার প্রতি এমন আগ্রহের কথা জানালেন ১৮ বছরের তরুণ জয়নোশ কিসকু, ‘গ্রামে আমার বাবা ফুটবল খেলতো। তার খেলা দেখেই ফুটবল শেখা। ক্রিকেটও খেলি। প্রথম পছন্দ ফুটবল তারপর ক্রিকেট। এখন বর্ষাকাল, ঘাস বড় বড় হয়ে গেছে। ক্রিকেট খেলার মতো নেই। তাই বর্ষার মৌসুমে ফুটবলই খেলি, গ্রামে কি ঢাকায়। ’

আরেক তরুণ সুজন হেমব্রম জানালেন, ‘ঈদের কারণে এখনও এই জায়গাগুলো ফাঁকা। অন্য সময় হলে খেলার জায়গা পাওয়া কঠিন হয়। অনেক মানুষ খেলে এখানে। এখন ফাঁকা, কাজেরও চাপ কম। সময়গুলো খেলার মাঝেই দিই, ভালো লাগে। ’


তরুণদের মাঝে উজ্জ্বল কিসকু ও সেবাস্তিয়ান সরেন এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পরই ঢাকায় চলে আসেন। বাকিদের মধ্যে অনেকেই অষ্টম, ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া অবস্থাতেই জীবিকার তাগিদে নেমেছে কাজে। পরিবারের মানুষকে একটু ভালো রাখার চেষ্টায় নিবেদিত হচ্ছে ওরা, চেহারায় কৌশরের ছাপ না যেতেই। নিজেরা ভালো থাকতে কাজের অবসরে মন দিচ্ছে খেলাধুলায়। শারীরিক, মানসিক সুস্থতার সোনারকাঠি তো খেলাধুলার মাঝেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
এসকে/এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।