মাঠে খেলছে ফুটবলাররা-তবুও গ্যালারির চারভাগের একভাগও ভরছে না, চট্টগ্রামবাসীরও কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে।
১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।
তবে গ্যালারি দর্শকে ভরে যাওয়াটাকেই মূখ্য ভাবছেন না টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী। তিনি যুক্তি দিলেন অন্যভাবে।
‘এখন মানুষ টিভিতে টুর্নামেন্টের খেলা দেখছে। ফেসবুকে লাইভ দেখানো হচ্ছে। সেখানে দেখলাম কোনো কোনো সময় ৬৮ হাজার মানুষ এই খেলা দেখছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মানুষ খেলা দেখে নিচ্ছে। তাই হয়তো মাঠে আসছে না। ’-বলেন শামসুল হক চৌধুরী।
পটিয়া উপজেলা থেকে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে সাংসদ নির্বাচিত টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির অন্যতম এই কর্তা আরও বলেন, ‘আমি চাইলে পটিয়া থেকে ২০ হাজার মানুষ নিয়ে আসতে পারি। লতিফ (বন্দর আসনের সাংসদ এমএ লতিফ) চাইলে আরও ২০ হাজার মানুষ নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু কি দরকার। ১০ জন মানুষ গ্যালারিতে ঢুকলে তাদের টিকিট কেটে ঢুকতে হবে। দর্শক আনা আমাদের উদ্দেশ্যে নয়, আমাদের দরকার শেখ কামালের প্রচার। সেটা হয়ে যাচ্ছে এমনিতেই। ’
তবে শামসুল হক চৌধুরীর সঙ্গে একমত নন ফুটবল অনুরাগীরা।
তাদেরই কয়েকজন পাল্টা প্রশ্ন তুলে বললেন, ‘কেন? উন্নত বিশ্বে কি টিভি-ফেসবুকের রমরমা অবস্থা নেই? তবুও কেন গ্যালারিতে উপচেপড়া দর্শক দেখা যায়? টিভি-ফেসবুকে খেলা দেখে মানুষ তৃপ্তি পাচ্ছে-এমন কথাটি খুবই নগণ্য উদাহরণ। আসলে টুর্নামেন্টটা যেনতেনভাবে শেষ করতে পারলেই যেন বাঁচেন-আয়োজকদের দেখে তাই মনে হচ্ছে। ’
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে উপচেপড়া দর্শক পেয়ে দ্বিতীয় আসরে তথৈবচ অবস্থার জন্য চট্টগ্রামবাসী দায়ী করছেন-প্রচারণা সংকটকেই।
তাই পুরো চট্টগ্রামে এই টুর্নামেন্ট নিয়ে এবার তেমন আওয়াজই হলো না। অথচ অনেকের মতে গতবারের চেয়ে এবার অংশ নেওয়া দলের মান অনেক ভালো। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে থেকেও দল আনা হয়েছে এবার, যদিওবা ভারতের কোনো দলকে এবার আনা যায়নি।
গতবার আয়োজক দল চট্টগ্রাম আবাহনী ও কলকাতা ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচ দেখতে পুরো চট্টগ্রামের গন্তব্য ছিল এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। গ্যালারি টইটম্বুর ছিল। উল্টো ২৫-৩০ হাজার দর্শক মাঠে ঢুকতে না পেরে ফিরে যায়। আর এবার স্থানীয় দলের খেলাতেও দর্শক সংখ্যা হাজার পেরুচ্ছে না।
তাই হুমায়ুন মাসুদ নামের একজন ফুটবল অনুরাগী বলেন, টুর্নামেন্টের এক সপ্তাহ কেটে গেল। অথচ মানুষ জানেই না এত বড় একটা টুর্নামেন্ট চলছে। শুধু বিকেল হলেই এমএ আজিজ এলাকা দিয়ে যারা চলাচল করেন তারা পুলিশের হাঁক-ডাক দেখে বুঝতে পারেন মাঠে কিছু একটা হচ্ছে। দর্শক টানতে না পারার মূল কারণ প্রচারণা সংকট। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অথচ প্রচারণাটা হলো গ্রাম পর্যায়ের কোনো টুর্নামেন্টের মতোই। যা হলো তাও শুধুই এমএ আজিজ কেন্দ্রীক। এভাবে শুধু সংখ্যা বাড়াতে বড় টুর্নামেন্টের আয়োজন করে ফুটবলের জাগরণ সম্ভব নয়। ’
দর্শকখরা দেখে চট্টগ্রামবাসী বিস্মিত তা শুধু নয়, বিস্মিত হয়েছন আরও একজন। তিনি মোহাম্মদ নাজিম। মালদ্বীপ জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলারের বর্তমান পরিচয় সে দেশিয় ক্লাব টিসি স্পোর্টসের হেড কোচ। দল নিয়ে টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া এই কোচ সম্প্রতি গণমাধ্যমে তার বিস্মিত হবার কারণ খোলাসা করেছেন। বলেছেন, ‘অতীতে খেলতে এসে আমি কখনই বাংলাদেশের গ্যালারি ফাঁকা দেখিনি। কিন্তু এবার এসে বিস্মিত হচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
টিএইচ/টিসি