এর ফলে এই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরের ফাইনাল দেশিয় দলহীন হয়ে গেল। ৩ মার্চ ফাইনালে পোচন সিটিজেনের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হওয়া এই ম্যাচে শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে। ম্যাচের আয়ু যখন মাত্রই ৪ মিনিট তখনই ব্রাজিলিয়ান থিয়াগো সিলভা বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে গোলবঞ্চিত হয় আবাহনী। দলীয় অধিনায়ক মামুনুলের শট প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের ফুটবলারের গায়ে লেগে চলে আসে থিয়াগোর সামনে। কিন্তু তিনি পা লাগাতে না পারায় বল চলে যায় মাঠের বাইরে।
এর পরেই দুই পক্ষই সমানে সমান খেলতে থাকে। মধ্যমাঠ থেকে ছোট ছোট পাসে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করলেও বারবার দুই দলের আক্রমণ প্রতিহত হচ্ছিল ডি-বক্সে গিয়ে। তবে ২৩ মিনিটে কর্নার থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান বাংলাদেশি বংশদূত ডেনমার্কের নাগরিক জামাল ভুঁইয়া। ডানপ্রান্ত থেকে মামুনুলের নেওয়া দুর্দান্ত কর্নার কিকে শুধু ডান পা’টা বাড়াতে হলো জামাল ভুঁইয়াকে, তাতেই এগিয়ে গেল আবাহনী। কিন্তু এই এক গোলে এগিয়ে গিয়েই রক্ষণাত্বক খেলায় মনোযোগী হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। তাতেই একের পর এক আক্রমণ বাড়াতে থাকে কোরিয়ান পোচন সিটিজেন। ২৯ মিনিটে পার্ক সিউং’র এর শট গোলরক্ষক রানা ঝাপিয়ে ঘুষি দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠান। ৩০ মিনিটে পোচনের আরও একটা গোলের সুযোগ নস্যাৎ করে দেন আবাহনীর কিপার।
এবার পোচনের নেওয়া কর্নার কিক গোলকিপার ঘুষি দিয়ে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করলে ডি বক্সের বাইরে বল পান চো তাই ও’। তার ইব্রাহামোভিচের মতো নেওয়া রেইনবো শটটা গোলরক্ষক রানার ঝাপিয়ে রক্ষা করতে চাইলে তার হাত থেকে বল ক্রসবারে লেগে মাটিতে পড়ে যায়। পরে রক্ষণভাগের খেলোয়াড় এডমস স্যামুয়েল কর্নারের বিনিময়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন।
তবে কোরিয়ান টিমের অপেক্ষার প্রহর কেটে যায় খুব দ্রুতই। ৪৩ মিনিটে ডি বক্সের মধ্যে ফাউল করলে চীনের রেফারি গু চুনহান পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সেই পেনাল্টি থেকে দলকে সমতায় ফেরান জাং ইয়ং।
প্রথমার্ধ ১-১ গোলে শেষ হয়। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর মিনিটেই এগিয়ে যায় কোরিয়ান টিমটি। দ্বিতীয়ার্ধের তখনও ৫৮ সেকেন্ড। ফ্রি কিক থেকে ডি বক্সে জটলার মধ্যে বল পেয়ে দলকে এগিয়ে নেন পার্ক সিউং। পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফেরার জোর চেষ্টা চালায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু তারা বারবার ছোট ছোট ভুলের কারনে গোল করতে না পেরে হতাশই করে যাচ্ছিল দর্শকদের। এর মধ্যে ৭২ মিনিটে ডি বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল হলেও তাতে রেফারি সাড়া না দেওয়ায় আবাহনীর দুর্দশা আরও বাড়ে। এরপর আবাহনীর সামনে বড় সুযোগ এসেছিল। আবাহনীর এক ফুটবলারকে ফাউল করায় বদলী খেলোয়াড় কিম চান হিউয়ে লাল কার্ড দেখান রেফারি। বাকি পাঁচ মিনিট ও ইনজুরি সময়ের পাঁচ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেললেও আবাহনী পোচনের মনোবলে ছিড় ধরাতে পারেনি। ফলে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হলো চট্টগ্রাম আবাহনীকে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ সাইফুল বারি টিটু বললেন, ‘ভালো ডিফেন্ডারের অভাবেই এই হার। পাশাপাশি ছোটখাটো ভুলের খেসারত দিতে হলো আমাদের। যদিওবা আমরা সবসময় খেলার মধ্যেই ছিলাম। ’
সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার আরেক কারন হিসেবে দাঁড় করালেন প্রস্তুতি সংকটকে।
‘আমি টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র তিনদিন আগে পুরো টিমকে পাই। ফলে ভালো প্রস্তুতিও নেওয়া যায়নি। তবুও আশা করছি এই টুর্নামেন্টের অর্জন আমাদের সামনে ভালো খেলাতে উৎসাহ জোগাবে। ’-বলেন সাইফুল বারি টিটু।
অন্যদিকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে উচ্ছ্বাসিত পোচন সিটিজেনের কোচ কিম জাই ইয়ং বলেন, ‘আমরা খুবই খুশি। ফাইনালেও একইভাবে খেলতে চাই। ’
শেখ কামাল ক্লাব কাপ থেকে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিদায়
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
টিএইচ/টিসি