নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-২ গোলে ড্র থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও কোনো দলই গোলের দেখা না পাওয়ায় ট্রাইবেকারেই ভাগ্য নির্ধারণ হয়।
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আসরের এই ফাইনালে প্রায় পনের হাজার দর্শকের সামনে শুরু থেকেই উভয় দলই গতিময় ফুটবল খেলতে থাকে। ম্যাচ শুরুর দুই মিনিটেই সুযোগ পেয়েছিল পোচন সিটিজেন। জাং ইয়ং’র শট মোহামেদ ইনসাদ কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৭ মিনিটে আবার টিসি স্পোর্টসের স্যামুয়েল কাসিমের বাড়ানো বল থেকে ইব্রাহিম মাহমুদির দুর্দান্ত বলি সাইডবারের পাশ ঘেষে চলে যায়।
তবে গোল দেখতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি দর্শকদের। ম্যাচের আয়ু তখন ১৮মিনিট। হাসান নাঈজের কর্নার থেকে হানিফ আবদুল্লার দুর্দান্ত হেড খুঁজে পায় জাল। গোলটা এতই বিশ্বমানের ছিল পোচনের কিপার চই আন সিউং এর চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
২৩ মিনিটে আরও একটা সুযোগ পেয়েছিল মোহাম্মদ নিজামের দল। দলীয় অধিনায়ক নাফিউ আলীর আচমকা শট সরাসরি কিপারের হাতে চলে না গেলে আরও একবার এগিয়ে যেতে পারত মালদ্বীপের দলটি।
এরপর মালদ্বীপের ক্লাবটি রক্ষণাত্বক খেলায় মনোযোগী হয়। এর সুযোগ নেয় কোরিয়ান পোচন শহরের দলটি। একের পর এক আক্রমণে টিসি স্পোর্টসের ডি বক্সে কাঁপন ধরায় পোচন। ৩৬ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে লি সিইং ও’র শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটে আবারও আক্রমণ কোরিয়ার। এবার জাং ইয়ং ইকের শট ঠেকিয়ে দেন গোলকিপার।
তবে প্রথমার্ধের দুই মিনিট থাকতেই গোল পায় পোচন। জি ইয়ং ডিউকের মাপা কর্নার থেকে জাং ইয়ং ইক হেডে গোল করে দলকে সমতায় পেরান।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটেই এগিয়ে যায় কোরিয়ান দলটি। এবার তাদের এগিয়ে যাওয়া প্রতিপক্ষের ভুলে। পার্ক সিইয় রাইয়েলের কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন টিসি স্পোর্টসের ডিফেন্ডার ফারাহ আহমেদ। এর মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায় পোচন। এগিয়ে গিয়ে আরও উজ্জীবিত ফুটবল উপহার দিতে থাকে পোচন। এর সুযোগে ৬৭ মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়পার্ সিইং রাইয়েলের শট গোলরক্ষক ঝাপিয়ে রক্ষা করেন। ৮১মিনিটে সমতায় ফেরে টিসি স্পোর্টস।
ডি বক্সের বাইরে টিসি স্পোর্টস ফ্রি কিক পায়। আজম মাহমুদের নেওয়া ফ্রি কিকটি পোচনের অধিনায়ক চো তাই ও’র হেডের বিনিময়ে ফিরিয়ে দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেই বলটি পুনরায় ফেরত যায় আজম মাহমুদের পায়ে। তার নেওয়া জোরালো শটটি চো তাই ও’র পা ছুঁয়ে স্থান নেয় জালে।
ম্যাচের অন্য সময়ে আর কেউ এগিয়ে যেতে না পারায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১০১ মিনিটে গোল করে ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারত। এবার লি জাই মিনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে জাং ইয়ং ইক শটের একেবারে গোললাইন থেকে ফেরান আজিম মাহমুদ।
এরপর উভয় পক্ষ আরও কয়েকটা আক্রমণ তৈরি করলেও গোল ব্যবধান করতে পারেনি। ফলে খেলা গড়ায় ট্রাইবেকারে।
মানসিক দৃঢতা দেখানোর সেই লড়াইয়ে জিতল টিসি স্পোর্টসের। তাদের নেওয়া চারজনই গোল করেন। টিসি’র এলসাইয়েদ এলমাগারবাই, এজিকুয়েল, ইব্রাহিম ইয়ামীন, আদনান মুরুতালা গোল করেন।
তবে পোচনের জিম সিইং জিন ও জি কিয়ং ডিউয়ক গোল করতে পারলেও চো তাই ও এবং কো জি ম্যান মিস করেন।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে পোচনের অধিনায়ক কিম সাই ইয়ং দোষলেন ভাগ্যকে। বললেন, দুভাগ্যের কারণে আমাদের হারতে হলো। সুযোগ পেয়েও আমরা স্কোরটা বাড়াতে পারলাম না।
সেরা দলই কি চ্যাম্পিয়ন হলো এমন প্রশ্নের উত্তরটা কূটনৈতিকভাবে দিলেন পোচনের কোচ।
বললেন, ‘ফুটবল এমন একটা খেলা, যেখানে যারা বেশি ভুল করবে তারা হারবে। ’
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ নিজাম মোহাম্মদ বললেন, আমি খুব খুশি। এটা আমার দলের প্রথম বিদেশ ট্যুর। এবং সেখানেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হলাম। দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।
ট্রাইবেকারে আতঙ্ক ভর করছিল কিনা এমন প্রশ্নে কিছুটা উত্তেজিত ভঙ্গিতে বললেন-না মোটেও না। আমি আমার কিপারকে নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। সে তার যোগ্যতার প্রমাণ দিল আবারও।
বাংলাদেশের মানুষদের নিয়ে একরাশ প্রশংসাও করলেন এই কোচ। বাংলাদেশের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ন। এরা খুবই আন্তরিক। ’
ফাইনালে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন, ম্যাচে দুর্দান্ত একটি গোল করা এবং প্রতিপক্ষের একটি গোল ঠেকিয়ে দেওয়া আজম মাহমুদ। অন্যদিকে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় পোচনের হন হং জিন সান। ৪ গোল করে সেরা গোলদাতার পুরস্কার জেতেন আফগানিস্তানের শাহীন আসমাইয়ির শরীফি।
ম্যাচ শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন অতিথিরা। এ সময় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাংসদ এম এ লতিফ, শামসুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি সালাহ উদ্দিন, সাবেক তারকা ফুবলার সালাম মুর্শেদী, টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক তরফদার রুহুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৭
টিএইচ/টিসি