ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ ভাদ্র ১৪৩২, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২৪ সফর ১৪৪৭

ফুটবল

১৯৩৮ বিশ্বকাপ: মুসোলিনির ইতালির টানা দুই

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:৩০, মে ২৩, ২০১৮
১৯৩৮ বিশ্বকাপ: মুসোলিনির ইতালির টানা দুই ’৩৮ বিশ্বকাপ জয়ী ইতালির ফুটবল দল

ইউরোপে তখন বাজছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এরইমধ্যে ইউরোপেই বসে বিশ্বকাপের টানা দুই আসর। এ কারণে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে। আর গৃহযুদ্ধের কারণে নিজেদের সরিয়ে নেয় আরেক ফ্যাসিবাদি শাসক ফ্রাঙ্কোর দেশ স্পেন।

১৯৩৮ সালে তৃতীয় ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করে ফ্রান্স। আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে অংশ না নেওয়ায় জৌলুস হারায় সেই বিশ্বকাপ।

তবে তাতে উত্তেজনার কোনো কমতি ছিল না। আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি এবারও জিতে টানা দুই বিশ্বকাপ জয় করে। যদিও সেই জয় নানান দোষে দুষ্ট। সেটা নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে। আসুন তার আগে শুরুর গল্পটা শেষ করি।

তৃতীয় বিশ্বকাপে মোট ১৬টি দল অংশ নেয়। কিন্তু জার্মানির একনায়ক হিটলার কর্তৃক আক্রমণের ফলে সরে দাঁড়ায় অস্ট্রিয়া। ফলে দল সংখ্যা নেমে আসে ১৫’তে।  সেবারই প্রথম আয়োজক দেশ আর আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন দেশ বাছাই পর্ব ছাড়াই সরাসরি অংশ নেয়। সেই হিসেবে আয়োজক ফ্রান্স আর চ্যাম্পিয়ন ইতালি সরাসরি অংশ নেয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে সেবার অংশগ্রহণকারী ১৬ দলের ১৩টিই ছিলো ইউরোপের। সেবারই প্রথম জার্সিতে নম্বর ব্যবহার করা হয়।

১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপের সবচেয়ে চমক জাগানিয়া দল ছিলো ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া)। এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নেয় সাবেক এই ডাচ কলোনি। আরও এক চমক ছিল কিউবার অংশগ্রহণ। সেটাই অবশ্য দুই দলেরই একমাত্র বিশ্বকাপ আসর হয়ে আছে।
ফ্যাসিস্টদের কায়দায় স্যালুট করছে ইতালির ফুটবল দলসেই বিশ্বকাপ থেকে গৃহযুদ্ধ আক্রান্ত স্পেন সরে দাঁড়ায়। মূলত এই গৃহযুদ্ধই পরে সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, আরও স্পষ্ট করে বললে জার্মানি যখন অস্ট্রিয়ায় হামলা করে তখন। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার কথা ছিল অস্ট্রিয়ারও। কিন্তু হিটলারের তাণ্ডব তা হতে দেয়নি।

১৯২০ সালে ক্ষমতার মসনদে বসে ফ্যাসিবাদি একনায়ক মুসোলিনি খেলাকেও তার রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেন। এর বড় উদাহরণ ১৯৩৪ আর ১৯৩৮ সালে ইতালির টানা দুই ফুটবল বিশ্বকাপ জয়। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচে ইতালির সব খেলোয়াড় কালো জার্সি পরে বল মাঠে গড়ানোর পূর্বে ফ্যাসিস্টদের কায়দায় স্যালুট করে।

মুসোলিনির ভয়ে নাকি সরাসরি হুকুমে স্যালুট করেছিলো ইতালি দল তা আজও জানা যায়নি। কিন্তু ম্যাচের ফল যেন তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়। ফ্রান্স হেরে যায় নিজ মাঠে। সেমিফাইনালে ব্রাজিলকেও হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায় ইতালি।

ফাইনালে প্রতিপক্ষ হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে নেয় ইতালি। দুটি করে গোল করেন ইতালির জিনো কোলাউসি ও সিলভিও পিউলা। বিশ্বযুদ্ধের কারণে এরপর টানা ১২ বছর ইতালির কাছেই থাকে জুলে রিমে ট্রফি।

১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

-    অংশ নিয়েছে ১৫টি দেশ।
-    অংশ নেয়নি- (সরে দাঁড়ায়) আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, স্পেন, উরুগুয়ে।
-    চমক: ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ (ইন্দোনেশিয়া), কিউবা।
-    প্রথম নম্বরযুক্ত জার্সির ব্যবহার।
-    প্রথমবার আয়োজক ও চ্যাম্পিয়ন দলের সরাসরি খেলার সুযোগ।
-    মোট ম্যাচ ১৮টি।
-    মোট গোল ৮৪।
-    দলীয় সর্বোচ্চ গোল হাঙ্গেরি, ১৫টি।
-    বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম ও তখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে গোল করেন ফ্রান্সের স্ট্রাইকার এমেলি ভেইনান্তে (৩৫ সেকেন্ড, প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম)।
-    গোল্ডেন বুট জিতেন ব্রাজিলের লিওনিদাস, ৭ গোল।
-    বিতর্ক: অস্ট্রিয়া কোয়ালিফাই করেও জার্মানি কর্তৃক দখলের কারণে সরে দাঁড়ায়।
-    ব্রাজিলের ভুল: ফাইনালে সতেজ অবস্থায় পাওয়ার আশায় ব্রাজিল দলের সেরা দুই স্ট্রাইকার লিওনিদাস এবং টিমকে ছাড়াই সেমিফাইনালে নামে। এই আত্মবিশ্বাসের ফল তারা হাতে হাতেই পায়। বিদায় নেয় সেবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির কাছে হেরেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৮
এমএইচএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।