ব্রাজিলিয়ান তারকা রবার্তো ফিরমিনোর শেষ মুহূর্তের গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পিএসজির বিপক্ষে জয়টি চলতি মৌসুমে লিভারপুলের টানা ষষ্ঠ জয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হার তাদের তাঁতিয়ে দিয়েছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের গ্রুপের শীর্ষে আছে লিভারপুল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও একই অবস্থান। ১৯৬১/৬২ মৌসুমের পর এমন অসাধারণ অবস্থান অর্জন করেছে অলরেডরা।
চলতি বছর এমন বেশকিছু কারণ আছে যা লিভারপুলকে সেরা ক্লাবের তকমা এনে দিতে পারে।
১। গোল করার অসাধারণ সামর্থ্য
গত চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে শুরু করে ৪৪ গোল করেছে লিভারপুল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ তাদের চেয়ে ১১ গোল আর পিএসজি ১৫ গোল পিছিয়ে আছে।
২। শক্তিশালী আক্রমণভাগ
গত বছর যেভাবে জ্বলে উঠেছিলেন, এবার ঠিক সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেন নি দলের মূল তারকা মোহামেদ সালাহ। কিন্তু সাদিও মানে এবং ফিরমিনো রীতিমত সেরা ফর্মে আছেন।
লিভারপুলের ‘এমএসএফ’ ত্রয়ী ইউরোপের সবচেয়ে কার্যকর সাব্যস্ত হয়েছে গত মৌসুমেই। গত মৌসুমের শুরু থেকে সালাহ (৪৬), ফিরমিনো (৩০) এবং মানে (২৪) মিলে ১০০ গোল উদযাপন করেছেন।
৩। এমন এক দল যা ক্লপকে জয়ের রাস্তা তৈরি করে দেয়
বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সাবেক কোচ ক্লপ তার নিজের মতো করে দল সাজিয়েছেন। লিভারপুলে নিজের অভিষেকের দল থেকে মাত্র জেমস মিলনার এখনও দলে জায়গা ধরে রাখতে পেরেছেন।
বাকিদের মধ্যে- সিমন ম্যাগ্নোলেট, নাথানিয়েল ক্লাইনি, মার্টিন স্ক্রেটেল, মামাদু সাখো, আলবার্তো মোরেনো, লুকাস লেইভা, এমেরি কান, এডাম লালানা, ফিলিপ্পে কুতিনহো এবং ডিভোক ওরিজি- হয় বদলি খেলোয়াড় হয়েছেন অথবা এরইমধ্যে ক্লাব ছেড়ে গেছেন।
৪। শক্ত ডিফেন্স
শীতকালীন দলবদলের বাজারে ভার্জিল ভ্যান ডিককে ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে নিজেদের রক্ষণের শক্তি অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছে লিভারপুল। সাবেক সাউদাম্পটন তারকার দলে আসার পর থেকে লিভারপুলের রক্ষণ এখন বেশি শক্তিশালী।
জো গোমেজ, ট্রেন্ড আলেকজান্ডার-আর্নল্ড এবং এন্ড্রু রবার্টসন আর ভার্জিলকে নিয়ে গঠিত রক্ষণ প্রিমিয়ার লিগে এখনও কোনো গোল হজম করতে দেয়নি অলরাডদের।
৫। বিশ্বস্ত গোলরক্ষক
দীর্ঘদিন থেকেই গোলবারের সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে হয়েছে লিভারপুলকে। মিগনোলেট এবং লরিস কারিউস যখন প্রতিনিয়তই হতাশ করায় শেষ পর্যন্ত রেকর্ড ৭৫ মিলিয়ন ইউরোতে ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অালিসনকে কিনতে বাধ্য হন ক্লপ।
আলিসনের আগমনে গোলবার নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত আছেন লিভারপুল কোচ। যদিও লেস্টার সিটির বিপক্ষে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল তিনি করে বসেছিলেন কিন্তু এরপর থেকে গোলবারের নিচে তিনি অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আছেন।
৬। উদ্ভাবনী মিডফিল্ড
ফিলিপ্পে কুতিনহোর মতো তারকাকে হারানোর পরও লিভারপুলের মিডফিল্ড এখনও যথেষ্ট উদ্ভাবনী। জর্ডান হ্যান্ডারসন, নেবি কেইতা, জেমস মিলনার, ফ্যাবিনহো এবং অ্যাডাম লালানা এরইমধ্যে ক্লপের অসাধারণ ফুটবল মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন।
৭। সমৃদ্ধ রিজার্ভ বেঞ্চ
লিভারপুলের রিজার্ভ বেঞ্চ এতোই শক্তিশালী যে আলাদা একটা দলই গঠন করে ফেলতে পারেন ক্লপ, যারা মূল দলের প্রায় সমান সামর্থ্য দেখাতে সক্ষম। পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচে ফিরমিনো, জারদান শাকিরি এবং ফ্যাবিনহো যেমন বেঞ্চ থেকে বদলি হিসেবে নামেন, ক্লপের হাতে আরও রিজার্ভ আছে।
ক্লপের দলে নিয়মিত বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামেন ড্যানিয়েল স্টারিজ। কিন্তু গত ম্যাচে শুরুর একাদশে নেমে লিভারপুলের প্রথম গোলটি কিন্তু স্টারিজই করেন।
৮। নকআউটের বিশেষজ্ঞ
যদিও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ২টি লিগ শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছেন ক্লপ। কিন্তু তার দলগুলো নকআউট পর্বের বিশেষ দক্ষতার জন্য বিখ্যাত।
লিভারপুলে কোচ হিসেবে এখন পর্যন্ত তিন ফাইনালের সবগুলোতেই হেরেছেন ক্লপ, কিন্তু তিনি ভালো করেই জানেন তার দলকে কিভাবে টুর্নামেন্টের শেষ ও কঠিন ম্যাচ সামলাতে হয়।
৯। অ্যানফিল্ডও গুরুত্বপূর্ণ
‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’ গানটি লিভারপুলের সমর্থকরা যখন গেয়ে ওঠেন প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরে যায় আর লিভারপুল যেন তখন দুর্গে পরিণত হয়। গত মার্চ থেকে অ্যানফিল্ডে গিয়ে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি।
১০। চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার প্রতি ভালবাসা
অন্য কোনো ইংলিশ ক্লাবের জাদুঘরে লিভাপুলের মতো পাঁচটি ইউরোপ সেরার শিরোপা রক্ষিত নেই।
যদিও ১৯৯০ সালের পর ঘরোয়া লিগের শিরোপা জেতার স্বাদ পায়নি লিভারপুল, কিন্তু একই সময়ের মধ্যে তারা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে (একবার চ্যাম্পিয়ন) এবং দু’বার ইউরোপা লিগের ফাইনালে (একবার চ্যাপিয়ন) পা রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
এমএইচএম